জরায়ুর অস্বাভাবিক রক্তপাত (অ্যাবনরমাল ইউটেরাইন ব্লিডিং) কি?
নিয়মিত মাসিক ধর্ম বা পিরিয়ডসের বাইরে যদি কোন ধরনের জরায়ুর রক্তপাত ঘটে যেখানে স্পটিং (ছোপ ধরা) বা রক্তপাত হয়, বার বার মাসিক হওয়ার অভিজ্ঞতা, মাসিক চক্রের সময় বেশি রক্তের প্রবাহ এবং দীর্ঘ সময় ধরে রক্তপাতকে জরায়ুর অস্বাভাবিক রক্তপাত হিসেবে গণ্য করা হয়।
যেহেতু সব মহিলাদের মাসিকের সময় নির্ধারিত তারিখে আসে না, তাই 2 টি মাসিকের মধ্যে 21 এবং 35 দিনের একটি সীমা হল অনুমোদনযোগ্য। যদি এটা অতিক্রম করে যায় বা খুব শীঘ্র হয়ে যায়, তাহলে এই রক্তপাতের কারণগুলি জানার জন্য একটি পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
যদিও চিকিৎসকেরা মাসিকের সময় নির্দিষ্ট তারিখ থেকে কিছুটা সরে গেলে মহিলাদের অস্বাভাবিকতার নির্দেশ দেন, তাও আরো কিছু নির্ধারিত লক্ষণ আছে যা জরায়ুর অস্বাভাবিক রক্তপাতকে নির্দেশ করে, সেগুলি হল:
- এমন একটি মাসিক বা পিরিয়ড যা 3 সপ্তাহের মধ্যে একবারের তুলনায় বেশি বার হয়, বা আবার হতে 5 সপ্তাহেরও বেশি সময় নেয়।
- একটি মাসিক যেটা একসপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলে বা 2 দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যায়।
- এক ঘন্টায় একবারের তুলনায় বেশিবার ট্যাম্পুন বা প্যাড বদলানো।
- সহবাস বা যৌনসম্পর্কের পরে বা মাসিকের মধ্যে রক্তপাত বা স্পটিং (ছোপ পরা)।
এর প্রধান কারণগুলি কি?
এই অবস্থাটির জন্য সবচেয়ে সাধারন কারণটি হল হরমোনগুলির মধ্যে একটি ভারসাম্যহীনতা। এছাড়া অন্যান্য কারণগুলি হল:
- জন্ম নিয়ন্ত্রণের ওষুধ।
- অবসাদ এবং উদ্বেগ।
- বর্ধিত ওজন বৃদ্ধি বা ওজন হ্রাস।
- একটি আইইউডি।
- জরায়ুতে ফাইব্রয়েডের উপস্থিতি।
- রক্ত পাতলা করার ওষুধ।
- সারভাইকাল ক্যান্সার বা ইউটেরাইন ক্যান্সার।
- থাইরয়েড বা কিডনির অসুস্থতা।
- সারভিক্স বা জরায়ুতে সংক্রমণ।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
তাৎক্ষণিকভাবে হয়ত রোগটি নির্ণয় সম্ভব নয়, কারণ চিকিৎসক শারীরিক পরীক্ষা করবেন, এবং পরবর্তী চক্র এবং মাসিককে নিরীক্ষণ করারও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। একটি গর্ভাবস্থার পরীক্ষা এবং চিকিৎসার ইতিহাস হল প্রাথমিকভাবে রোগ নির্ণয় করার অপর পদক্ষেপ। এরপর হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, লৌহ বা আয়রনের অভাব বা রক্ত সম্পর্কিত রোগের জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়। চিকিৎসক গর্ভাশয় পরীক্ষা করার জন্য একটি আল্ট্রাসাউন্ড করবেন, বা গর্ভাশয় গ্রীবা বা সারভিক্সের পরীক্ষা করার জন্য হিস্টারোস্কোপি করবেন। যদি ক্যান্সার বা অন্য কোনো রোগ সম্পর্কে সন্দেহ থাকে, তাহলে বায়োপসি করা যেতে পারে।
ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয় কি নির্দেশ করছে তার উপর নির্ভর করে, এই সমস্যাটির মোকাবিলা করার জন্য এবং দ্রুত আরাম দেওয়ার জন্য চিকিৎসার একটি কোর্স বা পদ্ধতি বেছে নেওয়া হয়। চিকিৎসার কিছু পদ্ধতি হল:
- পিরিয়ড বা মাসিক নিয়মিত করার জন্য এবং রক্তপাতকে স্বাভাবিক করার জন্য হরমোনের ওষুধ, যার মধ্যে জন্ম নিয়ন্ত্রণের ওষুধ গোনাডোট্রপিন - রিলিজিং হরমোন অ্যাগোনিস্ট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। (আরো পড়ুন: অনিয়মিত মাসিকের চিকিৎসা)
- রক্তপ্রবাহ কম করার জন্য অ্যান্টি-ইনফ্লেম্যাটরি বা প্রদাহ কমানোর ওষুধ।
- রক্ত জমাট বাধা এবং রক্তপাত কম করতে ট্রানেক্সামিক অ্যাসিড।
- এন্ডোমেট্রিয়াল বিমোচন যা জরায়ুর আস্তরণ ধ্বংস করে দেয়, তবে কার্যত পরে মাসিক বন্ধ করে দেয়।
- মায়োমেক্টমি - যা ফাইব্রয়েডগুলিকে সরিয়ে দেয় বা তাদের মধ্যে রক্ত সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
- বড় ফাইব্রয়েড বা জরায়ুর ক্যান্সারের জন্য হিস্টারেক্টমি।