কিডনির জটিল অসুখ (কিডনির সমস্যা) কি?
কিডনির প্রধান কাজ হলো রক্তের সমস্ত বর্জ্য পদার্থগুলিকে নিষ্কাশিত করা যাতে সেগুলো প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। যখন কিডনি তাদের কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং কাজ করা সম্পুর্ণ বন্ধ করে দিয়ে খুবই অল্প পরিমাণ মূত্র উৎপাদন করে সেই অবস্থাকে মূত্রাশয়ের (কিডনির) জটিল সমস্যা বলা হয়।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
কিডনির জটিল অসুখের সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গগুলো হলো:
- প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং শরীরে তরল পদার্থ জমে থাকা। যার ফলে হাত, পা এমন কি মুখে ফোলা ভাব আসা।
- শ্বাসের অভাব বোধ করা, বমি বমি ভাব, বমি করাও খুব সাধারণ লক্ষণ।
- খিদে কমে যাওয়া, মানসিক বিভ্রান্তি এবং দুর্বলতার মতন লক্ষণ অনেকের মধ্যে দেখা যায়।
- কারো কারো ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ, হাতে অসাড় ভাব এবং ক্ষত সারতে দেরী হয়ে থাকে।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
কিডনির জটিল অসুখের প্রধান কারণগুলি হল:
- যদি কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কারণে এতে প্রয়োজনের তুলনায় কম রক্ত সঞ্চালিত হয়, তবে কিডনির জটিল সমস্যা হতে পারে।
- মূত্রনালীতে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে মূত্র সহজভাবে মূত্রথলিতে এসে পৌঁছায় না। কিছুদিন পর মূত্র কিডনিতে জমতে শুরু করে এবং কিডনি ফুলে যায়। যাকে হাইপোনেফ্রসিস বলা হয়। এই কারণেও কিডনির জটিল অসুখ দেখা যায়।
- কোনো রাসায়ানিক অথবা ভারী ধাতুর দ্বারা কিডনির কোনোরকম ক্ষতি হলে বা অটোইমিউন অবস্থা যেমন গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস, যেখানে শরীরের নিজস্ব রোগ-প্রতিরোধ প্রক্রিয়া কিডনির কলাগুলিকে আক্রমণ করে, এরফলেও কিডনির জটিল অসুখ হতে পারে।
- যে কারণগুলির জন্য কিডনির সমস্যা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে, সেগুলো হল:
- তীব্র ডিহাইড্রেশন।
- নিম্ন রক্তচাপ।
- অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধের সেবন।
- ডায়াবেটিস বা মধুমেহ।
কিভাবে এই রোগটি নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
নিম্নলিখিত অনুসন্ধানগুলির মাধ্যমে কিডনির জটিল সমস্যা নির্ণয় করা যায়:
- চিকিৎসক শরীরের বিভিন্ন অংশের ফোলাভাব বা অন্যান্য উপসর্গগুলি পরীক্ষা করবেন।
- রক্ত এবং মূত্র পরীক্ষা করে ইউরিয়া, পটাশিয়াম এবং সোডিয়ামের মাত্রার পরিমাপ করা হয়। ক্রিয়েটিনের মাত্রা পরিমাপ করাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- আপনার যদি কিডনির জটিল সমস্যার কিছু লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে আপনার চিকিৎসক আপনাকে গ্লোমেরুলার ফিল্ট্রেশন রেট (জিএফআর) পরীক্ষা করতে দিতে পারেন। এর মাধ্যমে আমরা রক্ত যে হারে কিডনির দ্বারা পরিশ্রুত হচ্ছে সেটা জানতে পারি, যা কিডনির জটিল অসুখের ক্ষেত্রে খুবই কম হয়ে যায়।
- অন্যান্য পরীক্ষা যেমন কিডনি আল্ট্রাসাউন্ড, এম আর আই, সি টি স্ক্যান এবং পেটের এক্স রে এর মাধ্যমেও এই রোগ নির্ণয় করা যেতে পারে।
কিডনির জটিল অসুখের চিকিৎসা:
- এই রোগের চিকিৎসার জন্য মূলত এই রোগ হবার কারণগুলোকে নির্মূল করা এবং কিডনির স্বাস্থ্য বজায় রাখার দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়।
- প্রাথমিকভাবে চিকিৎসক খাবারে এমন কিছু পরিবর্তন আনতে উপদেশ দেবেন যেগুলি খেলে শরীরে তরল, লবণ এবং প্রোটিনের পরিমাণ কমে।
- ডিউরেটিক্স বা মূত্রবর্ধক ওষুধ শরীরে তরল জমতে বাধা দেয়। ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট রক্তে পটাসিয়ামের মাত্রা সঠিকভাবে বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- ডাইলিসিস হলো একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি যন্ত্রের সাহায্যে রক্ত পরিশ্রুত করা হয়। রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে, অনেক সময় সপ্তাহে বহুবার ডাইলিসিসের প্রয়োজন হতে পারে।