মনোযোগের ঘাটতির ব্যাধি কি?
মনোযোগের ঘাটতির ব্যাধি হল মাথা কাজ করার একটা সাধারণ বিকাশীয় ব্যাধি,যা সচরাচর শৈশবে ধরা (নির্ণয় করা) হয় কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায়ও উপস্থিত থাকতে পারে। এটা হল মাথার একটা জেনেটিক (জন্ম সম্বন্ধীয়) এবং কেমিক্যাল (রসায়নিক) এবং কাঠামোগত পরিবর্তন-যুক্ত ব্যাধি। এডিএইচডি যুক্ত বাচ্চারা (শিশুরা) সাধারণত বেশি উদ্যমী হয়, মনোযোগ দিতে অসুবিধা হয়, এবং পরিণতি সম্বন্ধে না ভেবে কাজ করতে পারে।
এই রোগের প্রধান লক্ষণগুলি এবং উপসর্গগুলি কি?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, এডিএইচডি যুক্ত বাচ্চাদের মুখ্য উপসর্গ হিসাবে মনোযোগের ঘাটতি(অমনোযোগী), আবেগপ্রবণতা, এবং খুব বেশি সক্রিয়তা দেখা যায়। যে কোন একটা উপসর্গ বেশি করে দেখা যায়, বা তিনটি উপসর্গের মিলিত প্রভাব একটি বাচ্চার আচরণে দেখা যেতে পারে। সবথেকে সাধারণ লক্ষণ হল খুব বেশি সক্রিয়তা। যাদের মনোযোগের ঘাটতি আছে তাদের মধ্যে, এই ব্যবহার খুবই তীব্র হয়, এবং তারা প্রায়ই স্কুলে অথবা কাজের সামাজিক অনুষ্ঠানের গুণমানে অনেক বেশি বাধা ঘটাতে পারে। এর প্রধান তিনটে বৈশিষ্ট্য নিচে বিস্তারিত বর্ণনা করা হল:
- নিষ্ক্রিয়তা
মনোযোগ দেওয়াতে অসুবিধা, ভুলে যাওয়ার বা জিনিস হারানো, একটা দায়িত্ব পালন করতে অথবা শেষ করতে অসুবিধা , আদেশ অথবা আলোচনা অনুসরণে অসুবিধা, সহজে মন অন্য দিকে চলে যাওয়া, এবং দৈনিক কাজ বিস্তারিত মনে রাখতে অসুবিধা। - আবেগপ্রবণ এবং বেশি সক্রিয়তা
বেশি সময়ের জন্য স্থির হয়ে বসে থাকতে অসমর্থতা, দুর্ঘটনা-প্রবণ, দ্রুত অস্থির হওয়া আচরণ, এক নাগারে কথা বলে যাওয়া, অন্যদের বিরক্ত করা, অন্যদের থেকে জিনিস ছিনিয়ে নেওয়া, অযথাযথ সময়ে কথা বলা, কথা বলার আগে অন্যকে লেখা অথবা শোনার পালা না দেওয়া। - মিলিত আকার
উপরের উপসর্গগুলির উভয়ের বৈশিষ্ট্যগুলি সমানভাবে দেখা যেতে পারে।
এই রোগের মূল কারণগুলি কি?
আসল কারণটি অজানা, কিন্তু বৈজ্ঞানিকরা এডিএইচডির হওয়া প্রতিরোধ করতে নিম্নলিখিত প্রক্রিয়াগুলির পড়াশুনো চালিয়ে যাচ্ছেন। সাধারণ ঝুঁকির বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করা হল:
- জিনগত
এডিএইডি ঘটার ক্ষেত্রে জিন একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষকরা জিনগত পরিবর্তনকে ঝুঁকিপূর্ণ সম্ভাবনাগুলির মধ্যে একটি হিসাবে দেখিয়েছেন। এডিএইচডি বংশগতও হতে পারে। - মাথায় আঘাত
গর্ভাবস্থায় যেকোন ধরণের মাথাতে আঘাত গঠন অথবা ক্রিয়া উভয়ের মধ্যে অথবা পরবর্তী জীবনে এডিএইচডি ঘটাতে (পরিচালনা করতে)পারে। - ড্রাগস বা ওষুধ
গর্ভাবস্থার সময় একটি শিশুর মা যদি মদ্য, তামাক,কোকেন ব্যবহার করেন, তাহলে শিশু এডিএইচডি বৃদ্ধি প্রবণ হয়। - লেড বা সীসা
গর্ভাবস্থায়,পরিবেশগত দূষক যেমন সীসার সামনে নিয়ে যাওয়াও একটি কারণগত বিষয়। - জন্মগত খুঁত
বাচ্চারা যারা সময়ের আগে জন্ম নেয় বা খুব কম ওজন নিয়ে জন্মায় তাদেরও ঝুঁকি থাকে।
এটার নির্ণয় এবং চিকিৎসা কিভাবে করা যায়?
এডিএইচডির রোগনির্ণয়ের জন্য নির্দিষ্ট কোন পরীক্ষা নেই। একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অথবা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শিশুটির একটি বিশদ মূল্যায়ন করেন এবং পিতামাতা ও শিক্ষকদের থেকে চিকিৎসা এবং আচরণগত ইতিহাস জানার পর কেলমাত্র এডিএইচডি (মনোযোগের ঘাটতির রোগ) ধরতে পারেন।
যখন আপনি একটি ডাক্তার দেখাতে যাবেন, তিনি আপনার বাচ্চার উপসর্গগুলির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবেন: যেমন কবে উপসর্গগুলি শুরু হয়েছে, কোথায় তা দেখা গেছে (বাড়িতে অথবা স্কুলে), এটা বাচ্চাটার দৈনন্দিন এবং সামাজিক জীবনে প্রভাব ফেলছে কিনা,আপনার পরিবারে এডিএইচডির কোন পারিবারিক ইতিহাস আছে কিনা, পরিবারে এই কারণে কোন মৃত্যু অথবা ডিভোর্স হয়েছে কি না, বাচ্চাটির বেড়ে ওঠার ইতিহাস কি, এবং মানসিক আঘাত বা যেকোন অসুস্থতার চিকিৎসা বিষয়ক ইতিহাস। চিকিৎসক এবং মনোবিদরাও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানের সরঞ্জাম, স্কেল এবং অন্য নির্ণায়ক এডিএইচডি রোগ ধরতে ব্যবহার করেন।
এডিএইচডির উপসর্গগুলিকে অনেক উপায়ে চিকিৎসা করা যায়। চিকিৎসকেরা অনেক ওষুধ এবং বিভিন্ন থেরাপির মিলিত ব্যবহার করে এটার চিকিৎসা করেন। ওষুধগুলো মস্তিষ্ক সম্বন্ধিত কাজগুলি সামলায়, যেহেতু থেরাপি চিন্তাভাবনা এবং আচরণের ছাঁচ নির্ণয় করে।
স্টিমুলেন্ট (উত্তেজক) সাধারণ ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়, যা বেশি সক্রিয়তা, আবেগপ্রবণতা কমায় ও বাচ্চাকে মনোনিবেশ করাতে, সম্পাদন করাতে (কাজ করতে) এবং শেখাতে সমর্থ হয়। সাইকোথেরাপি সাধারণত চিকিৎসকদের দ্বারা ব্যবহার হয় যেটা আচরণ থেরাপির এবং জ্ঞানীয় আচরণ থেরাপির অন্তর্ভূক্ত। বাচ্চাটির এবং পরিবারের সদস্যদের কাউন্সেলিংও করা হয়। দম্পতিদেরও শেখানো হয় (প্রশিক্ষণ দেওয়া) একটি অভিভাবক হওয়ার আচার আচরণ।এবং ধকল সামলানোর প্রোগ্রামগুলি বাস্তবায়ন করা হয়। পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার যুক্ত বাচ্চাদের এডিএইচ -এর মত একই উপসর্গ আছে কিন্তু আলাদা চিকিৎসার প্রয়োজন আছে। সবথেকে উপযুক্ত চিকিৎসা বাচ্চা এবং পরিবারটির ওপর পুরোপুরি নির্ভর করে। একটি ভালো চিকিৎসায় প্রয়োজন খুব কাছ থেকে লক্ষ্য রাখা, অনুসরণ করা, এবং যদি প্রয়োজন হয় তবে থেরাপির ও চিকিৎসার পরিবর্তন আনা।