বেশী বয়সে স্মৃতি শক্তি কমে যাওয়ার রোগ কাকে বলে?
বয়ষ্কদের মধ্যে একটু দেরী করে সাড়া দেয়ার প্রবণতা থাকে - বিশেষত তাদের চলাফেরার মধ্যে, প্রতিবর্তী ক্রিয়াতে, কাজকর্মে এবং আদান প্রদানের মধ্যে। ওনাদের কোনো কিছু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে সেই তথ্যগুলি মনে করার অক্ষমতা সব থেকে বেশী লক্ষ্য করা যায়। এই তথ্যগুলি হয়তো কোনো ক্ষেত্রে পরে কোনো সময় মনে পড়ে বা কখনো মনে পড়েও না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরে কিছু শারীরিক পরিবর্তন হয়, তারমধ্যে অন্যতম হলো মানসিক প্রক্রিয়ার নিম্নগামী হওয়া। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা ভুলবশতঃ এই নিম্নগামীতাকে বয়সঘটিত স্মৃতিভ্রম বলে ভুল করি। বয়ষ্কদের মধ্যে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার সমস্যা হয়ত নিম্নগামী জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া, মৃদু জ্ঞানীয় অবনতি বা স্মৃতিভ্রংশ হতে পারে। (স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাশক্তি কমে যাওয়া যা দৈনন্দিন কাজে প্রভাব ফেলে)।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কি?
কোনো ব্যক্তি বা তার সমস্যার তীব্রতার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন উপসর্গগুলো লক্ষ্য করা যায়।
- বিলম্বিত বা আংশিক তথ্য স্মরণ করা।
- কথা বলার সময় সাধারণভাবে ব্যবহৃত শব্দ ভুলে যাওয়া।
- সাধারণভাবে ব্যবহৃত শব্দগুলির মধ্যে বিভ্রান্তি।
- একই বিষয় নিয়ে বারবার আলোচনা করা অথবা বারবার একই প্রশ্ন করা।
- জিনিস ভুল স্থানে রাখা।
- একজনের সাথে অন্য ব্যক্তিকে গুলিয়ে ফেলা।
- প্রাত্যহিক কাজ করতে বা পরিচিত নির্দেশ অনুসরন করতে অত্যধিক সময় নেওয়া।
- রাস্তা খুঁজে পেতে সক্ষম না হওয়া এমনকি পরিচিত রাস্তাও ভুলে যাওয়া।
এর প্রধান কারণগুলি কি?
বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বয়স-সংক্রান্ত স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া হল মস্তিষ্কের ক্রিয়ার গতি কমে যাওয়ার ফল। এছাড়া অন্যান্য কারণগুলি হল:
- হিপ্পোক্যাম্পাস (একটি ছোটো অঙ্গ যা মস্তিষ্কের মধ্যে থাকে যা আবেগ এবং বহুদিনের স্মৃতি নিয়ন্ত্রণ করে) এর ক্রমাগত অবনতি।
- হরমোনের পরিবর্তন।
- মস্তিষ্কের মধ্যে রক্তের প্রবাহ কমে যাওয়া।
তাছাড়াও আরো কিছু কারণ এই রোগ হবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, সেগুলো হলো:
- মাদকাসক্তি।
- মস্তিষ্কের রোগ।
- ভিটামিন বি12 এর অভাব।
- থাইরয়েডের সমস্যা।
- আবেগগত সমস্যা, যেমন বিষন্নতা এবং মানসিক চাপ।
- মাথায় আঘাত লাগা।
- ঘুমের ওষুধ, পেশীর শিথিলতার ওষুধ, অবসাদহীনতার ওষুধ, রক্তচাপ কমানোর ওষুধ বা অন্য কোন ওষুধ সেবন যা কোনো ব্যক্তির মধ্যে অসামঞ্জস্য ও বিভ্রান্তিমূলক আচরণের সৃষ্টি করে।
এটি কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
এই সমস্যাটি নির্ণয় করার জন্য ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরী। এই চিকিৎসাতে প্রায়ই কতগুলি প্রশ্ন তালিকা অন্তর্ভুক্ত থাকে যেগুলো সাধারণত পূর্ববর্তী চিকিৎসার ইতিহাস, ঘুমের ধরন, আবেগপ্রবন অবস্থা এবং পারিবারিক জীবনের সাথে যুক্ত থাকে। তাছাড়া চিকিৎসক ভুলে যাওয়া সংক্রান্ত বিবরণ, স্মৃতিভ্রমের সূত্রপাত এবং ভুলে যাওয়ার প্রকৃতি সম্বন্ধেও জিজ্ঞাসা করতে পারেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্নায়ুমনস্তত্ববিদের বা নিউরোসাইকোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যিক হয়ে পড়ে।
এই রোগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো চিকিৎসা করা যায় না এবং রোগটি কমানোও যায় না। এর চিকিৎসার প্রধান পদ্ধতি হল পরিস্থিতি ও ব্যক্তি সাপেক্ষে যতটা সম্ভব ভালভাবে যত্ন করা।
বেশিরভাগ বয়ষ্ক ব্যক্তিরা তাদের মানসিক অপ্রাচুর্যতার অনুভব করেন এবং এটা তাদের জন্য খুব চাপ এবং লজ্জাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, প্রধানত তারা যারা একটা প্রানবন্ত জীবনযাপন করেন। তাদের জন্য পরমুখাপেক্ষী হওয়া এবং স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারার অবস্থাটি খুব কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে এই ধরণের ব্যক্তিদের জন্য যা প্রয়োজন সেগুলো হল:
- পারিবারিক সমর্থন এবং যত্ন।
- একটি স্থিতিশীল যত্ন নেওয়ার পরিকল্পনা।
- তাদের শারীরিক অবস্থা ও সমস্যার চিকিৎসা করা।
- সামাজিকীকরণের সুযোগ।
- সুষম খাদ্য ও পর্যাপ্ত ঘুম।
- উপসর্গগুলির অবনতি রোধ করার জন্য মস্তিষ্কের সাধারণ উদ্দীপনামূলক কার্যকলাপ, যেমন:
- ধাঁধা ও শব্দজব্দ (ক্রশওয়ার্ড)।
- ম্যাগাজিন পড়া।
- মানসিক চ্যালেঞ্জিং কার্যকলাপ করা।