এনাল ফিশার কি?
এনাল ফিশার হল মলদ্বারে ছোট, সংকীর্ণ, ডিম্বাকৃতির কাটা বা ঘা। এইগুলো সাধারণত পায়ু নালীর গায়ে, বিশেষ করে কারোর পেছনের দিকে হয়। পায়ু নালী হল রেকটাম এবং মলদ্বারের মধ্যে অবস্থিত একরকম নলের আকারের অংশ। মলদ্বারের কাছে মোচড় দিয়ে ব্যথা এবং রক্তপাত হল এই রোগের সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ। এটা যে কোনো বয়সে হতে পারে। সাধারণত, এগুলোকে হেমোরইডস (অর্শ) বা পাইলসের সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়। ফিশার অ্যাকিউট (তীব্র) বা ক্রনিক (দূরারোগ্য) হতে পারে। অ্যাকিউট ফিশারের ক্ষেত্রে মলদ্বার কাগজ কাটার মতো ফেটে যায়, কিন্তু ক্রনিক ফিশারের ক্ষেত্রে পায়ু নালীর দেওয়ালের ত্বকে পিন্ডের মতো তৈরি হয়।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো কি কি?
এই রোগের সাধারণ লক্ষণ হল ব্যথা এবং রক্তপাত। সাধারণত, মলত্যাগ করার সময় ব্যথাটা শুরু হয় এবং প্রায় এক ঘন্টার জন্য থাকতে পারে। এতে চুলকানি এবং ফোলাভাবও অনুভব করা যায়। সাধারনত ব্যথার তীব্রতা সহ্য করা যায়, কিন্তু কখনো কখনো অসহ্য ব্যথাও হতে পারে। পায়খানায়, টিস্যু পেপারে, বা মলদ্বারের চারপাশে লাল রক্তের দাগ দেখা যায়। মলদ্বারের চামড়ায় একটি পাতলা ফাটল দেখা যায়। দুইবার মলত্যাগ করার মাঝে এই লক্ষণগুলো সাধারনত আর দেখা যায় না।
এর প্রধান কারণগুলো কি কি?
প্রধানত কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য পায়ু নালীর মাধ্যমে শক্ত, বড় আকারের মল নামার ফলে এনাল ফিশার হয়। ইনফ্লেমমেটরি বাওয়েল ডিজিজ, যেমন ক্রোহন’স ডিজিজ এর ফলেও ফিশার হতে পারে। গর্ভাবস্থায় এবং সন্তানের জন্মের সময় ফিশার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও পাতলা পায়খানা এবং স্থায়ী ডায়রিয়াও এই রোগের কারণ হতে পারে।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
ডাক্তারেরা একটি গ্লাভস পড়া আঙ্গুল অথবা একটি এনোস্কোপ (শেষ প্রান্তে ক্যামেরা লাগানো একটি পাতলা নল) ঢুকিয়ে আপনার পায়ু নালী পরীক্ষা করবে। ফিশারের অবস্থান দেখেও এর সম্ভাব্য কারণ সম্বন্ধে জানা যেতে পারে। পিছনে বা সামনের তুলনায় ধারের দিকে অবস্থিত ফিশারগুলি ক্রোহন’স ডিজিজের কারণে হতে পারে। যদি প্রয়োজন হয়, আরও ভালো করে রোগ নির্ণয়ের জন্য বা অন্তর্নিহিত অবস্থা সম্বন্ধে জানার জন্য, ডাক্তার রোগীর অবস্থার উপর ভিত্তি করে নমনীয় সিগময়েডোস্কোপি বা কোলনোস্কোপির ব্যবহার করতে পারেন।
এনাল ফিশারগুলির সহজেই চিকিৎসা করা যেতে পারে এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিজেই ঠিক হয়ে যেতে পারে, তবে এটা হওয়ার আসল কারণগুলির চিকিৎসা করা না হলে এই রোগটি আবার হতে পারে। সাধারণত, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার এবং প্রচুর পরিমাণে জল খেলে তা মলকে নরম করতে পারে এবং তা বেশি পরিমানে হতে পারে, যার ফলে আর কোনও ক্ষতি হয় না এবং ফিশার ঠিক হতে থাকে। মলদ্বারের ব্যথা থেকে মুক্তি পাবার জন্য টপিক্যাল অ্যানাস্থেটিক্স ব্যবহার করা যেতে পারে। চিকিৎসায় সাহায্য করার জন্য স্টুল সফ্টনার্সও দেওয়া হয়।
দিনে একাধিকবার 10-20 মিনিটের জন্য গরম টাবে স্নান করলে তা মলদ্বারের পেশীকে উপশম করতে এবং শিথিল করতে সাহায্য করবে। নার্কোটিক ব্যথার ঔষধ ব্যবহার করা উচিত নয় কারণ সেগুলি কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ায়। এই রোগের ক্ষেত্রে নাইট্রো-গ্লিসারিন মলম এবং ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার্স ওষুধগুলো ব্যবহার করা হয়। এই রোগের চিকিৎসার জন্য খুব কম অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসার মধ্যে বটুলিনাম টক্সিন ইনজেকশন এবং স্ফিঙ্কটেরটমি (মলদ্বারের স্পিঙ্কটারের সার্জারি) রয়েছে। অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে অন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঝুঁকিটা কম থাকে।