অ্যানথ্রাক্স কি?
অ্যানথ্রাক্স একধরণের সংক্রামক রোগ যা ব্যাসিলাস আন্থ্রাসিস নামক ব্যাকটেরিয়া থেকে হয়ে থাকে। এই জীবানু সাধারণত মানুষ থেকে পশুদের মধ্যে বেশী দেখতে পাওয়া যায়। এটি নিষ্ক্রিয় বীজগুটি রূপে থাকতে পারে এবং এইভাবে বহুবছর বেঁচে থাকতে পারে। অনুকূল পরিবেশে এই গুটিগুলি অঙ্কুরিত হয় এবং কয়েক গুণ হারে বংশ বিস্তার করে। মানুষ এই বীজগুটিগুলির দ্বারা আক্রান্ত হয়, যেগুলি শরীরের সংস্পর্শে এলে সক্রিয় হয়ে যায়, গুনিতক হারে বাড়ে ও ছড়িয়ে পড়ে, এগুলি থেকে যে বিষক্রিয়া হয় তার ফলে রোগটি হয়ে থাকে। অ্যানথ্রাক্স নামটি একটি গ্রীক শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ কয়লা। এই নামকরণটির কারণ হল অ্যানথ্রাক্স থেকে ত্বকে সত্যিই কালো দাগ সৃষ্টি হয়।
সন্ত্রাসবাদীরা 2001 সালে এই কৌশল কাজে লাগিয়ে অ্যানথ্রাক্স ছড়িয়ে ছিল। অ্যানথ্রাক্সের এই জৈবসন্ত্রাসবাদী আক্রমণ খুব চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, এবং ভবিষ্যতে এই রোগটি এই জাতীয় আক্রমনের দ্বারা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য বিজ্ঞানীরা কাজ করে চলেছেন।
অ্যানথ্রাক্সের প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
উপসর্গগুলি অ্যানথ্রাক্সের ধরনের ওপর নির্ভর করে।
কিউটেনিয়াস বা ত্বক-সম্বন্ধীয় অ্যানথ্রাক্স হল যখন বীজগুটি ত্বকের কাটা স্থান দিয়ে বা ক্ষত স্থান দিয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এবং পরবর্তীকালে কালো ঘা যুক্ত চুলকায় এমন ফোলা অংশের সৃষ্টি করে। এই ঘা হাতে, মাথায়, গলায় আর মুখে দেখা যায়। কারোর কারোর মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি, পেশীতে ব্যাথা এবং জ্বর দেখা যায়।
গ্যাস্ট্রোইনটাস্টাইনাল অ্যানথ্রাক্স সংক্রমিত পশুর মাংস খেলে হয়। এর উপসর্গগুলি হল জ্বর আর খাদ্যের বিষক্রিয়া-এর জন্য বমি, অবস্থা আরো খারাপ হলে পেটে ব্যাথা, রক্ত বমি আর একটানা পেট খারাপ হতে পারে।
শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে বীজগুটি শরীরে প্রবেশের মাধ্যমে যে অ্যানথ্রাক্স হয় তা সবথেকে ভয়ানক হতে পারে। প্রথম দিকের লক্ষণগুলি হল ঠাণ্ডা লাগা, সঙ্গে জ্বর, কাশি, অবসাদ, শরীরে যন্ত্রণা এবং মাথা ব্যথা, কিন্তু পরবর্তী কালে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং পক্ষাঘাত পর্যন্ত হতে পারে।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
ব্যাসিলাস আন্থ্রাসিস নামক বীজগুটির লম্বা রডের মতো দেখতে জীবাণুটিই সংক্রমণের কারণ। এই ব্যাকটেরিয়াটি বীজগুটি রুপে অনেক বছর ধরে মাটিতে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় লুকিয়ে থাকতে পারে। এই বীজগুটিকে সহজে ধ্বংস করা যায় না। এরা সাধারণত মানুষের থেকে বেশি চারণ পশুদের সংক্রমিত করে। মানুষের মধ্যে এই জীবাণু সাধারণত নিশ্বাসের মাধ্যমে, সংক্রামিত পশুর মাংস খেলে অথবা শরীরে কাটা বা ক্ষত স্থানে বীজগুটি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমেও প্রবেশ করে।
কিভাবে এই রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
ডাক্তার রোগীর পূর্ব অসুস্থতার ইতিহাস আর তার পেশা সম্পর্কে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করেন। উপসর্গের ওপর নির্ভর করে, ডাক্তার রোগ নির্ণয় করার জন্য রোগীর সংক্রমিত ত্বকের নমুনা, গলার মধ্যেকার তরলে ভেজা গজ বা থুতু সংগ্রহ আর সরাসরি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া আর অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পরীক্ষা করে দেখেন। এছাড়াও ডাক্তার বুকের এক্স-রে এর মাধ্যমেও রোগ নির্ণয় করতে পারেন, যাতে বুকের প্রসারণ ও ফুসফুসে তরলের উপস্থিতি দেখা যেতে পারে।
অ্যান্টিবায়োটিকের দ্বারা সব রকম অ্যানথ্রাক্সের চিকিৎসা করা এবং পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব; রোগজীবাণু দ্বারা সৃষ্ট বিষক্রিয়া নষ্ট করার জন্য অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে অ্যান্টিটক্সিনস বা প্রতিবিষ ব্যবহার করতে হবে। কখনো কখনো সরাসরি শিরায় প্রয়োগ করা হয় এমন অ্যান্টিবায়োটিকও ব্যবহার করা যেতে পারে। ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিকের বিধান দেবেন ও সেই বিধান অনুযায়ী এর সেবন করতে হবে। যারা সংক্রমিত বাতাসে নিশ্বাস নিতে বাধ্য হন তাদের ক্ষেত্রে 60 দিন ধরে প্রতিষেধক অ্যান্টিবায়োটিক নিতে হবে। ফুড এন্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফ ডি এ) অ্যানথ্রাক্সের জন্য যে সমস্ত অ্যান্টিবায়োটিকগুল নেওয়ার কথা বলেছে সেগুলি হল ডক্সিসাইক্লিন, কিপ্রোফ্লোক্সাসিন, লেভোফ্লক্সাসিন, এবং প্যারেন্টেরাল প্রোক্যাইন পেনিসিলিন জি।
এই তিনটি ওষুধ ছাড়াও, রোগ নির্ণয়ের সঙ্গে সঙ্গে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি টীকা নেওয়াও শুরু করতে হবে। এই রোগের টীকা আছে কিন্তু তা সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য নয় এবং সেটি অবশ্যই কোনও অভিজ্ঞ ডাক্তারের অধীনে নিতে হবে।
এনথ্রাক্স একটি প্রতিবেদনযোগ্য রোগ; কোনো একটি রোগের ঘটনা নির্ণয়ের পরে স্বাস্থ্য সংস্থাগুলিকে জানানো উচিতI অন্যান্য অ্যান্টিবায়োটিক যেগুলি বি এন্থ্রাসিস-এর বিরুদ্ধে সক্রিয়, সেগুলি হল ডক্সিসাইক্লিন, পেনিসিলিন, অ্যামোক্সিসিলিন, এম্পিসিলিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, গ্যাটিফ্লক্সাসিন, ক্লোরামফেনিকোল ইত্যাদি।