অ্যান্টিথ্রম্বিনের অপর্যাপ্ততা বা অভাব কি?
অ্যান্টিথ্রম্বিন হল এমন এক ধরণের প্রোটিন, যা আমাদের রক্তে পাওয়া যায়। প্রধানত, এটি রক্ত পাতলা করার মৃদু উপাদান হিসেবে কাজ করে এবং প্রতিরোধকের ভূমিকা নেয় যাতে রক্ত অত্যাধিক মাত্রায় জমাট না বেঁধে যায়। কার্যকারিতার দিক থেকে দেখলে অ্যান্টিথ্রম্বিনের কাজ হলো থ্রম্বিনের ঠিক উল্টো, যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
রক্তে অ্যান্টিথ্রম্বিন প্রোটিনের অভাবে রোগীর দেহে শিরার মধ্যে যখন-তখন রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে (ভিনাস থ্রম্বোসিস)।
অ্যান্টিথ্রম্বিনের অপর্যাপ্ততা বা অভাব জন্মগত অথবা অর্জিত হতে পারে।
এর সঙ্গে যুক্ত প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
যে সমস্ত ব্যক্তির অ্যান্টিথ্রম্বোসিসের সমস্যা রয়েছে, তাদের শিরার মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে আর এজন্যই একে ভেনাস থ্রম্বোসিস বলা হয়। যিনি এই রোগে আক্রান্ত, তাঁর দেহে চল্লিশ বছর বয়স হওয়ার আগে থেকেই থ্রম্বোসিসের প্রথম পর্যায়ের সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। এই সময় শিরার ভিতরকার দেওয়ালে দেওয়ালে রক্ত জমাট বেঁধে আটকে যেতে থাকে।
ভিনাস থ্রম্বোসিস বা শিরার থ্রম্বোসিস সাধারণত শরীরের নিম্নাংশের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে হতে দেখা যায়। অতএব, যে পায়ে এই সমস্যা তৈরি হবে, তাতে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি উপলব্ধি করতে পারেন:
- ফোলাভাব
- যন্ত্রণা
- প্রদাহ
পা থেকে জমাট বাঁধা রক্ত যদি মুক্ত হয়ে ফুসফুস পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তাহলে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি সাধারণত অনুভব করতে পারেন
অ্যান্টিথ্রম্বিনের অভাব বা ঘাটতির প্রধান কারণ কি?
জন্মের পর যদি শরীরে অ্যান্টিথ্রম্বিনের ঘাটতির সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে তার জন্য নিম্নলিখিত কারণগুলি দায়ী থাকতে পারে:
- লিভার সিরোসিস অর্থাৎ যকৃতে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত
- কিডনি বা বৃক্কে সমস্যার উপস্থিতি
- গুরুতর মানসিক আঘাত পাওয়া
- গুরুতরভাবে আগুনে পুড়ে যাওয়া
- কেমোথেরাপি
অ্যান্টিথ্রম্বিনের ঘাটতির সমস্যা জন্মগতও হতে পারে। পুরুষ এবং মহিলা উভয়েই সমানভাবে জিনঘটিত কারণে উত্তরাধিকার সূত্রে এই সমস্যার বাহক হতে পারেন। দেহে একটি অস্বাভাবিক রকমের জিনের উপস্থিতির কারণে রক্তে অ্যান্টিথ্রম্বিন প্রোটিনের মাত্রা কমে যেতে পারে।
কিভাবে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
এই রোগ নির্ণয় করতে রোগীর শারীরিক উপসর্গের ধরণ পরীক্ষা করা হয় এবং তার সঙ্গে চিকিৎসক এই ব্যাপারটাও নিশ্চিত করে নেন যে রোগীর আর কোনও সমস্যা রয়েছে কি না। এরপর, ডাক্তার খুব সম্ভবত রোগীকে রক্ত পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন যাতে জানা যায় যে রক্তে অ্যান্টিথ্রম্বিনের মাত্রার ঘাটতি আছে কি না। তবে, আরও অনেক কারণ রয়েছে, যার ফলে রক্তে অ্যান্টিথ্রম্বিন প্রোটিনের মাত্রা কমে যেতে পারে। সেজন্য এই রোগের মূল কারণ এবং রোগীর দেহে অ্যান্টিথ্রম্বিনের ঘাটতির সমস্যা জন্মগতভাবে এসেছে কি না জানার জন্য বারবার টেস্ট করানোর প্রয়োজন পড়তে পারে।
প্রাথমিকভাবে, অ্যান্টিথ্রম্বিনের ঘাটতির সমস্যায় চিকিৎসায় রক্ত পাতলা করার জন্য ওষুধ দেওয়া হয়, এই ওষুধগুলি অ্যান্টিকোয়াগুলেন্ট নামেও পরিচিত। তবে, ওষুধ নেওয়ার মাত্রা এবং কতবার নেওয়া হবে, তা ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হয়। আর তার সঙ্গে এই ওষুধের ব্যবহারের ব্যাপারেও কড়া নজর রাখতে হয়।