ব্লাস্টোমাইকোসিস কি ?
ব্লাস্টোমাইকোসিস হল ব্লাসটোমাইসেস ডার্মাটাইটিডিস নামক ছত্রাক দ্বারা সংঘটিত একটি বিরল রোগ। ভিজে মাটিতে থাকা ছত্রাকের বীজগুটিগুলি শ্বাসগ্রহণের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। ব্লাস্টোমাইকোসিস সমগ্র শরীরক্রিয়াকেই আক্রান্ত করে, বিশেষত ফুসফুস এবং ত্বকে, ক্রমে তা রেচনতন্ত্রে, অস্থিতে এবং স্নায়ুতন্ত্রে ছড়িয়ে পরে। এই রোগের লক্ষণগুলি ফ্লুর মতোই হয়, তারসঙ্গে পরবর্তী পর্যায়ে ত্বকের সমস্যাও (ব্রণ ও আঁচিলের মতো উদ্গিরণ) হয়ে থাকে।
এটির প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি ?
ব্লাস্টোমাইকোসিসের উপসর্গগুলি ছত্রাকের বীজগুটিগুলি শ্বাসগ্রহণের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করার 3 সপ্তাহ থেকে 3 মাসের মধ্যে দেখা যায়। এই উপসর্গগুলির ইনফ্লুয়েঞ্জার সাথে মিল আছে যা কিছুদিনের মধ্যেই সেরে যায়। বেশীরভাগ ব্যক্তির ক্ষেত্রেই উপসর্গগুলি চোখে পড়ে না। যাইহোক, যখন সংক্রমণটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষত যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ক্ষেত্রে এগুলি প্রকাশ পায়।
- জ্বর
- রাতে অতিরিক্ত ঘাম বা হঠাৎ গরমের অনুভুতি হওয়া
- কাশি এবং যখন ফুসফুস সংক্রামিত হয় তখন থুতুর সাথে রক্ত পড়া
- বুকে ব্যথা
- মাংসপেশি ও গাঁটে ব্যথা
- অতিরিক্ত ক্লান্তিভাব এবং সাধারণ অস্বস্তি বোধ
- বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই ওজন হ্রাস পাওয়া
- ফুসফুসের ব্লাস্টোমাইকোসিসের কিছু জটিল ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া ও রেস্পিরেটরি ডিসট্রেস সিন্ড্রোম হয়।
- ত্বকের সংক্রমণের উপসর্গগুলির মধ্যে অনাবৃত জায়গাগুলিতে ক্ষত সৃষ্টি যেগুলি দেখতে ধূসর বা বেগুনী রঙের আঁচিল বা ঘা এর মতো হয়। এগুলি নাক ও মুখের ভিতরেও হতে পারে ও সাধারণত বেদনাদায়ক নয়। ব্রণগুলি থেকে সহজেই রক্তপাত হয়।
- অস্থির মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে অস্থিকলাগুলি ধ্বংস হয়ে যায় এবং হাড়ে পুঁজ জমা হয়।
- ব্লাস্টোমাইকোসিসের জন্য অনেক সময় অন্ডোকোষ, প্রস্টেট এবং এপিডিডাইমিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পরে।
- ব্লাস্টোমাইকোসিস যখন স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলে তখন অনেক সময় মেনিনজাইটিস হতে পারে।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
ব্লাস্টোমাইকোসিস হয় ব্লাস্টোমাইসেস নামক ছত্রাকের কারণে। এটা মূলত ভেজা মাটি, ঘুণ ধরা কাঠ বা শুকনো পাতায় দেখা যায়। নিশ্বাস গ্রহণ করার সাথে সাথে ছত্রাক শরীরে প্রবেশ করে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। ব্লাস্টোমাইসেস সাধারণত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং আফ্রিকায় দেখা যায়।
এটি কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
চিকিৎসকেরা ব্লাস্টোমাইকোসিস রোগটি রোগীর অতীতের ইতিহাস, উপসর্গ, শারীরিক পরীক্ষা, এবং নানা পরীক্ষার দ্বারা নির্ণয় করেন।
পরীক্ষাগারে যে পরীক্ষাগুলি করা হয় সেগুলি হল:
- ত্বক থেকে ঘষা দিয়ে সংগৃহীত অথবা গলার লালা থেকে সংগৃহীত নমুনা থেকে পরীক্ষাগারে কৃত্রিম উপায়ে ছত্রাকের বিস্তার ও বৃদ্ধি ঘটিয়ে অনুশীলন করা।
- সংগৃহীত থুতুর সাথে একটি বিশেষ রাসায়নিক (10% পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড) মিশিয়ে থুতু পরীক্ষার দ্বারা ছত্রাক সনাক্ত করা সম্ভব।
- কলাবিন্যাস সনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে আক্রান্ত শরীরকলাগুলির মধ্যে ছত্রাক দৃষ্টিগোচর করা সম্ভব হয়।
- সংক্রমণের ফলে ফুসফুসের কোনো ক্ষতি হয়েছে কিনা জানার জন্য বুকের এক্স-রে করা হয়।
- মেরুদণ্ড ও মস্তিষ্কে ছত্রাক সনাক্ত করার জন্য সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড বিশ্লেষণ করা হয়।
ব্লাস্টোমাইকোসিস মূলত ছত্রাকরোধী ওষুধ দ্বারা চিকিৎসা করা হয়। রোগের গুরুত্ব অনুযায়ী ইট্রাকোনাজোল এবং আম্ফোটেরিসিন বি নামক ছত্রাকরোধী ওষুধগুলি সাধারণত রোগীর চিকিৎসার জন্য দেওয়া হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সংক্রমণের তীব্রতার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা 6 মাস থেকে 1 বছর পর্যন্ত চলতে পারে।
(আরও পড়ুন: ছত্রাকঘটিত সংক্রমনের চিকিৎসা)