হাড় বেড়ে যাওয়া বা হাড় বৃদ্ধি কাকে বলে?
হাড় বেড়ে যাওয়া হল খুব অল্প হাড়ের বৃদ্ধি, যা হাড়ের শেষভাগে দেখা যায়, বিশেষত সন্ধিস্থলে যেখানে দুটো হাড় পরস্পরের সাথে মিলিত হয়। সুষুম্নাকাণ্ডেও হাড়ের বৃদ্ধি দেখা যায়। এর ফলে সুষুম্নাকাণ্ডে বা ক্ষতিগ্রস্ত সন্ধিস্থলে বাড়তি চাপ পড়ে।
সাধারণত, হাড় বেড়ে যাওয়া ঘটে যেখানে প্রদাহ বা আঘাত থাকে, তরুণাস্থি বা রগের কাছাকাছি। হাড় বেড়ে যাওয়া সাধারণত যেখানে যেখানে হয়:
- পায়ের গোড়ালির হাড়ের নীচের তলে - যাকে গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি বলে। এটা যন্ত্রণাকর হয়।
- হাত - হাড় বৃদ্ধি হাতের আঙুলের সন্ধিতে হয়, যাতে আঙুল নাড়ানো সম্ভব হয় না।
- কাঁধ - হাড় বৃদ্ধি রগে ব্যথার সৃষ্টি করে (রগের ব্যথা) যেহেতু কাঁধের চক্রাকার কড়াতে রগ আর পেশীর মধ্যে ঘর্ষণ হয়, এভাবে, কাঁধ সঞ্চালনে বাঁধা দেয়।
- সুষুম্না কাণ্ড - সুষুম্নাকাণ্ড সরু হয়ে যাওয়া, যাকে স্পাইনাল স্টেনোসিস বলে, যা হাড় বৃদ্ধির জন্যই ঘটে, এতে যন্ত্রণার কারণ ঘটে, অসাড়তা হয়, স্নায়ুগুলিতে সংঘর্ষের কারণে পায়ে দুর্বলতা দেখা যায়।
- নিতম্ব ও হাঁটু - হাড়ের বৃদ্ধি ব্যথার কারণ ঘটায় এইসব জায়গাগুলিতে ফলে হাঁটার গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
কখনো কখনো, হাড় বৃদ্ধি পাওয়ার কোনও উপসর্গ থাকে না। কিন্তু, যখন উপসর্গগুলি দেখা যায়, শরীরের কোথায় এটা হয়েছে তার উপর নির্ভর করে। হাড় বৃদ্ধি যন্ত্রণার কারণ ঘটায়, অসাড়তা এবং আশেপাশের পেশীতে, রগে, স্নায়ুতে বা ত্বকে অস্বস্তির জন্য আক্রান্ত অংশে সংবেদনশীলতা দেখা যায়।
গোড়ালিতে হাড় বৃদ্ধি হলে তার জন্য হাঁটতে অসুবিধা হয়, তার সাথে সংবেদনশীলতা এবং ফোলাভাব দেখা যায়। কখনো কখনো, যদি হাড় বৃদ্ধি গোড়ালির একদম নীচে হয়ে থাকে তবে পুরো পায়ের নীচে ব্যথার সৃষ্টি হয়।
সুষম্নাকাণ্ডে যদি হাড় বৃদ্ধি পায় স্নায়ুগুলির মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়, যাতে অসাড়তা দেখা যায়, রণন এবং ওই স্নায়ু শরীরের যে অংশে বাহিত হয় সেখানে ব্যথার সৃষ্টি হয়।
যখন হাড় বৃদ্ধি থেকে কোনও ব্যথা সৃষ্টি হয় না বা কোনও উপসর্গ দেখা দেয় না, তখন এক্স-রের মাধ্যমে তা ধরা পড়ে।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
হাড় বৃদ্ধি সাধারণত ব্যথাভাব ও চাপভাবের সৃষ্টি করে।
অস্টিওআর্থারাইটিস বা হাড়ের বাত একটি পুনরুৎপাদনকারী হাড়ের সন্ধির রোগ, যা হাড় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বয়স্ক মানুষদের মধ্যে এটি খুবই চোখে পড়ে। যখন আমাদের বয়স হয়ে যায়, বহু ব্যবহারের ফলে তরুণাস্থির ক্ষয় হয়, এতে হাড়ের ভর কমে যায়। অবস্থার সামাল দিতে শরীর হাড় বৃদ্ধি ঘটায়।
কিভাবে এর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা হয়?
পরীক্ষা করে দেখার সময়, ডাক্তার হাড়ের সন্ধির আশেপাশে হাত দিয়ে ব্যথার জায়গাটি খোঁজার চেষ্টা করেন। ডাক্তার ওই জায়গাটির এক্স-রে করাতে বলতে পারেন। অন্যান্য ইমেজিং টেস্ট, যেমন এমআরআই স্ক্যান, সিটি স্ক্যান, মাইলোগ্রাম করাতেও বলতে পারেন।
রোগ নির্ণয় হয়ে গেলে, ডাক্তার ব্যথা ও অস্বস্তিভাব কমানোর জন্য কিছু ওষুধ দিতে পারেন। ওই স্থানটিতে ঠান্ডা সেঁক নিলে তাও অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।
গোড়ালির হাড় বৃদ্ধির জন্য ডাক্তার বিশেষ জুতো ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দেন। লম্বা সময় ধরে ব্যথা থাকলে সার্জারির প্রয়োজন পড়ে।
বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়, শারীরিক থেরাপি, কাজকর্মের কিছু পরিবর্তনও দরকার পড়ে। যদি হাড়ের বৃদ্ধির জন্য স্নায়ুতে চাপ পড়ে তবে প্রচন্ড যন্ত্রণার কারণ হতে পারে, তখন সার্জারির পরামর্শ দেওয়া হয়।
(আরো পড়ুন: হাড়ে ব্যথার কারণ)