সিস্টিনুরিয়া কি?
সিস্টিনুরিয়া হল একটা বংশগত অসুখ যা কিডনি এবং মূত্রস্থলীতে সিস্টিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিডের সঞ্চয়ের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। ইউরিনারি তন্ত্রে সিস্টিন তৈরি হলে তার ফলে পাথর গঠিত হয়, যা মূত্রনালীতে আরও বাধা দিতে পারে। বিশ্বব্যাপী, মোট জনসংখ্যার 12% আক্রান্ত হতে দেখা যায় এবং বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে প্রায় সবাইকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে 1% - 2%-র কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করে, কিন্তু পেডিয়াট্রিক জনসংখ্যার ক্ষেত্রে, এটি প্রায় 6%-8%-র মূত্রনালীতে পাথর সৃষ্টি করে। ভারতে, অনুমান করা হয় যে সিস্টিনুরিয়ায় 12% ব্যক্তির মধ্যে ইউরিনারি পাথর আছে, এবং 50% ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি কিডনির কার্যকরীতা হারান।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
উপসর্গগুলি 10 থেকে 30 বছর বয়সের মধ্যে শুরু হতে পারে। লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি প্রধানত পাথর গঠনের কারণে হয়:
- বমি বমি ভাব
- বমি
- প্রস্রাব করার সময় ব্যথা (মূত্রত্যাগ) (আরো পড়ুন: ব্যথাদায়ক মূত্রত্যাগের চিকিৎসা)
- হিমাটুরিয়া (প্রস্রাবের মধ্যে রক্ত)।
- পার্শ্বদেশে ব্যথা
- ঘনঘন মূত্রনালীতে সংক্রমণ
অন্য একইরকম অবস্থাগুলি হল:
- ডাইবেসিক অ্যামিনোঅ্যাসিডুরিয়া (প্রস্রাবের অ্যামিনো অ্যাসিডের অত্যধিক নির্গমনের সাথে একটি কিডনির ডিসঅর্ডার)।
- সিস্টাইনোসিস (কোষের মধ্যে সিস্টিন, অ্যামিনো অ্যাসিডের একত্রীকরণ)।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
প্রধান কারণটি হল শরীরের মাধ্যমে সিস্টিনের অস্বাভাবিক নড়াচড়া, যেটা পিতামাতা উভয়ের থেকেই উওরাধিকারসূত্রে পাওয়া। এসএলসি3এ1 (SLC3A1) এবং এসএলসি7এ9 (SLC7A9) নামক জিনগুলো এই অবস্থার জন্য দায়ী। সাধারণত সিস্টিনুরিয়ার চারটি উপশাখাকে দেখা যায়:
- ধরন 1: কিডনি এবং অন্ত্রের মধ্যে অ্যামিনো অ্যাসিডের ত্রুটিপূর্ণ পরিবহন।
- ধরন 2: সিস্টিন এবং লাইসিনের সরবরাহে ক্ষতি।
- ধরন 3: উপরের উভয় কিডনির পরিবহন স্বাভাবিক অন্ত্রের পরিবহনের সঙ্গে ত্রুটিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
- হাইপারসিস্টিনুরিয়া : প্রস্রাবে সিস্টিনের মাঝারি বৃদ্ধি।
এর নির্ণয় ও চিকিৎসা কিভাবে করা হয়?
সিস্টিনুরিয়া প্রধানত উপসর্গগুলির প্রকৃতি এবং পাথরটি সিন্সিনের তৈরি কিনা তা বিশ্লেষণ করে নির্ণয় করা হয়। জিনের অবদান বুঝতে সাহায্য করার জন্য পারিবারিক ইতিহাস নেওয়া হতে পারে।
নিম্নলিখিত নির্ণায়ক পরীক্ষাগুলি সিস্টিনুরিয়াকে সনাক্ত করতে সাহায্য করে:
- প্রাথমিকভাবে প্রস্রাব পরীক্ষা করা হয়
- 24 ঘন্টার প্রস্রাব সংগ্রহ
- ইন্ট্রাভেনাস পাইলোগ্রাম(আইভিপি/IVP)
- ইমেজিং কৌশলগুলি হল:
- আল্ট্রাসাউন্ড
- সিটি স্ক্যান
- জেনেটিক বা জিঙ্গত পরীক্ষা
সিস্টিনুরিয়া চিকিৎসার লক্ষ্য হল উপসর্গগুলির থেকে মুক্তি ও পাথর গঠনে প্রতিরোধ করা। নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলির দ্বারা পাথর অপসারণের চিকিৎসা যুক্ত আছে:
- ইউরেটারোস্কোপি
- পারকিউটেনিয়াস নেফ্রোলিথোটমি
- ওপেন সার্জারি
- এক্সট্রাকর্পোরিয়াল শক ওয়েভ লিথোট্রিপসি (ইএসডব্লিউএল/ESWL)
ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছে:
- প্রস্রাব অ্যালকালাইজিং এজেন্ট
- থাইঅল-বাইন্ডিং ওষুধগুলি
জীবনধারার পরিবর্তন:
- পাথর নির্গমন করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়ার দরকার।
- সময়মত ওষুধ নিন।
- নিয়মিত প্রস্রাবের pH নিরীক্ষণ করুন।
- লবণ খাওয়া কমান।
সিস্টিনুরিয়া হল একটা গুরুতর অবস্থা যা পুনরাবৃত্তিমূলক পাথর গঠন হিসাবে উপসর্গগুলির দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। বিরল ক্ষেত্রে, এটা টিস্যুর ক্ষতি করতে পারে বা বৃক্কে (কিডনি) ব্যর্থতা আনে। সঠিক নির্ণয়ের জন্য একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা এবং দ্রুত আরোগ্য নিশ্চিত করাই শ্রেয়।