জ্বর - Fever in Bengali

নিম্নলিখিত উপায়ে জ্বরের বিভিন্ন পর্যায়ের শ্রেণি বিভাজন করা হয়:  

যখন কোনও সংক্রমণ হয় বা কোনও বহিরাগত বস্তু শরীরে প্রবেশ করে স্বাভাবিক কার্যপ্রণালী ব্যাহত করে তখন জ্বর হয়। এটি কোনও অসুস্থতা নয় তবে শরীরে কোনও সংক্রমণ বা অসুস্থতার উপসর্গ। জ্বরের প্রকৃত কারণ জানা প্রয়োজন যাতে নির্দিষ্টভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়। যদি জ্বরে প্রকৃত কারণ নির্ধারণ করা সম্ভব না হয় তাহলে চিকিৎসক রোগীর অসুস্থতার ইতিহাস বিশদে পর্যালোচনা করে এবং বিভিন্ন উপসর্গ পরীক্ষা করেন যা থেকে জ্বরের প্রকৃত কারণের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। চিকিৎসক নিম্নলিখিত কিছু সাধারণ পরীক্ষা করার নির্দেশ দিতে পারেন:

• রক্ত পরীক্ষা (শ্বেত কণিকার পার্থক্যমূলক গণনা-সহ)
• মুত্র পরীক্ষা এবং কালচার
• গলার থুথু বা মিউকাস-এর নমুনা পরীক্ষা এবং কালচার
• মল পরীক্ষা এবং কালচার
• এক্স-রে

বাড়িতে থার্মোমিটারের সাহায্যে নিয়মিত তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলে জ্বরের প্রকার বুঝতে সুবিধা হয়। শরীরের 4টি জায়গায় থার্মোমিটারের সাহায্যে তাপমাত্রা পরিমাপ করা যায়। সেগুলি হল:  

• অ্যাক্সিলা (বগলের তলায়)
  বগলের নিচে থার্মোমিটারের গোড়া রাখা হয়। ধীরে ধীরে বাহুটি নিচে নামিয়ে আনা হয় যাতে থার্মোমিটারের গোড়ার অবস্থানের পরিবর্তন না হয়। আপনাকে 1 মিনিট থার্মোমিটার ধরে রাখতে হবে। সাধারণত, বগলের নিচে তাপমাত্রা প্রকৃত তাপমাত্রার চেয়ে 1°C কম হয়। কাজেই, সেইমত তাপমাত্রা রেকর্ড করুন এবং চিকিৎসককে দেখান, যদি তিনি দেখতে চান।
• কানের পর্দা  (ইয়ারড্রাম)
  কোনও শিশুর ক্ষেত্রে টিমপ্যানিক থার্মোমিটার বাবহারের ক্ষেত্রে তা ঠিকভাবে বসাতে হবে। কানের খোলের (ইয়ারওয়্যাক্স) কারণে সঠিক তাপমাত্রা নাও বোঝা যেতে পারে।
• মুখের মধ্যে
  যে সব শিশুর বয়স 4 বছর বা তার বেশি তাদের মুখের মধ্যে থার্মোমিটার রেখে তাপমাত্রা মাপা যেতে পারে। থার্মোমিটারের আগা জিভের তলায় রেখে মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে, কারণ মুখ খোলা রাখলে সঠিক তাপমাত্রা নাও পাওয়া যেতে পারে। প্রায় এক মিনিটের মত থার্মোমিটার রাখুন।
• পায়ুদেশে
  3 বছরের কম বয়সের শিশূদের ক্ষেত্রে এভাবে তাপমাত্রা মাপা যেতে পারে। প্রকৃত তাপমাত্রা এভাবে মাপা যায়। পায়ুদেশে তাপমাত্রা মাপলে তা শরীরের তাপমাত্রার চেয়ে 1°C বেশি হবে, কাজেই সেই হিসেবে তাপমাত্রা রেকর্ড করতে হবে।

যদি তাপমাত্রা মাঝারি হয় এবং বারে বারে ফিরে না আসে তাহলে প্রকৃতপক্ষে কোনও চিকিৎসার প্রয়োজন হবে না, তা নিজে নিজেই কমে যাবে। শরীরে বিভিন্ন অণুজীবের আক্রমণ ঠেকাতে  জ্বর হচ্ছে একটি প্রতিরোধী ব্যবস্থা। শরীরের তাপমাত্রার হেরফের ঘটলে অণুজীবেরা টিকতে পারে না। জ্বর বা তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপসর্গ ঠেকাতে কিছু সহজ পদক্ষেপ করা যায়। সেগুলি হল:  

• প্রচুর তরল পানীয় পান করুন, তা আপনার শরীর ঠান্ডা রাখবে এবং শরীরকে জলশুন্যতার হাত থেকে থেকে রক্ষা করবে।
• যতদিন না জ্বর কমছে ততদিন সহজপাচ্য খাবার খান।
• প্রচুর বিশ্রাম নিন।
• উষ্ণ জলে স্নান করুন।
• শরীরের ঠান্ডা জলের কমপ্রেস নিন। কপালে ঠান্ডা জলের পটি লাগান যাতে শরীরের তাপমাত্রা কম থাকে।
• টাটকা বাতাসের জন্য একটি পাখা চালু রাখুন।

হাল্কা জ্বর কমাতে ওষুধের দোকান থেকে সরাসরি কেনা (ওভার দ্য কাউন্টার) প্যারাসিটামল কার্যকরী হয় । কিন্তু যদি রক্ত পরীক্ষায় কোনও সংক্রমণ ধরা পড়ে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ মত নির্দিষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে হবে। উপশমের স্বার্থে, চিকিৎসক কোনও অ্যান্টিবায়োটিক্স, সেই সঙ্গে অ্যান্টিপায়রেটিক্স গ্রহণের পরামর্শ দিতে পারেন।

যদি খুব ছোট শিশুদের জ্বর কয়েকদিন পরেও না কমে তাহলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করাতে হতে পারে।

জীবনশৈলীর ব্যবস্থাপনা (লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট)

শরীরে কোনও বহিরাগত বস্তুর উপস্থিতির জন্য শরীরের কার্যপ্রণালীর সামান্য পরিবর্তন হলে জ্বরে উপসর্গ দেখা দেবে। সুতরাং, তাকে সামলানোর জন্য তেমন কোনও বড় মাপের পরিবর্তন করতে হবে না। সাধারণত, মানসিক চাপ, অতিরিক্ত কাজের চাপ বা বিশ্রামের অভাবের কারণেই জ্বর আসে। যদি সেরকমটি হয়, তাহলে নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিন যাতে প্রকৃত কারণের নিরাময় হয়। প্রচুর বিশ্রাম নিন, ধ্যান করুন। যদি কোনও ব্যক্তির ধুলোবালিতে অ্যালার্জি থাকে, বা চড়া সূর্যের আলো/ তাপমাত্রা সহ্য না হয়, যা থেকে তাঁর কাশি বা হিট স্ট্রোক জাতীয় অসুস্থতা দেখা দিতে পারে, তাহলে তাঁর ওইসব অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়া উচিত। পাবলিক পরিবহণ না ব্যবহার করাই উচিত কারণ সেখানে ছোটখাট সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে।

জ্বর নিয়ন্ত্রণ খুব সহজ, বহু সময়ে শুধুমাত্র প্রচুর বিশ্রাম নিলেই জ্বরের নিরাময় হয়। শরীরে জলের অভাব না হতে দেওয়ার জন্য জল খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিন এবং রক্তে ইলেক্ট্রোলাইটের মাত্রা ঠিক রাখুন। খোলামেলা, অর্থাৎ স্বচ্ছন্দ্য বোধ করছেন এমন পোশাক পরুন এবং ঘর আলোবাতাস পূর্ণ রাখুন। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ঠিক রাখুন এবং শিশুদের ক্ষেত্রে টিকা দেওয়ার সময়সূচি মাথায় রাখুন এবং টিকা দেওয়ান।