আই সকেট ফ্র্যাকচার বা চোখের কোটর ভাঙা কি?
অক্ষিগোলকের চারপাশে থাকা যে কোনও একটি হাড় আঘাত লেগে ভেঙে গেলে, তা থেকে আই সকেট ফ্র্যাকচার বা চোখের কোটর ভাঙা সমস্যা হয়। চোখের চারপাশের হাড় অরবিট বা অরবিটাল বোন নামেও পরিচিত। শুধুমাত্র অরবিটাল দেওয়ালে চিড় অথবা তার সঙ্গে সঙ্গে অরবিটাল রিমে ফাটল দেখা দিলেও, চোখের কোটরে ফাটল বা ভাঙার সমস্যা হতে পারে।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
ফাটলের ধরনের ওপর লক্ষণ এবং উপসর্গ নির্ভর করে
অরবিটাল ফ্লোর (ব্লো আউট) ফ্র্যাকচারের সঙ্গে যুক্ত উপসর্গ:
- ডাবল ভিশন অর্থাৎ একই জিনিস দু’টো দেখা
- অক্ষিগোলকের উপাদান ম্যাক্সিলারি সাইনাসে আটকে পড়া
- অক্ষিগোলক পিছন দিকে সরে যাওয়া
- চোখ ঝুলে পড়া
- স্নায়ুতে আঘাত লাগলে আলোর মতো উদ্দীপক বস্তুর প্রতি সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়
গোলকের ভিতরের দেওয়ালে আঘাত লাগার ফলে যে উপসর্গগুলি দেখা যায়:
- এক্ষেত্রে নিচের দিকে চাপ লেগে নাকেও চিড় ধরতে পারে
- আহত চোখের ভিতরের কোণগুলির মধ্যে দূরত্ব বেড়ে যায়
- অরবিটের মেঝেতে ফাটল ধরে
- চোখের চারপাশ ফুলে ওঠা
- অশ্রুবিন্দুর নালীতে ক্ষতি
- নাক দিয়ে রক্তপাত
অরবিটের ছাদের অংশে ফাটল ধরার সঙ্গে যুক্ত উপসর্গ:
- এধরনের ফ্র্যাকচার বিরল এবং এক্ষেত্রে সামনের দিকে সাইনাস ও মস্তিষ্কে আঘাত লাগতে পারে।
- সেরিব্রোস্পাইনাল রাইনোরিয়া (একটি সঙ্গিন অবস্থা, যখন সেরিব্রোস্পাইনাল রস বা মস্তিষ্ক রস সাইনাস ও নাকের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে আসে)
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
এধরনের আঘাত সাধারণত সজোরে কোনও কিছুর আঘাতে হয়; বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মুখে কোনও আঘাতের ফলে হয়, যেমন - গাড়ি দুর্ঘটনা, খেলতে গিয়ে আঘাত, শারীরিক হামলা (সরাসরি চোখে আঘাত লাগা)।
এর নির্ণয় এবং চিকিৎসা কিভাবে করা হয়?
অক্ষিকোটরে ফাটল ধরার ঘটনায় অপথালমোলজিস্ট বা চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞনের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। তিনি চোখ এবং তার চারপাশের অংশ শারীরিক পরীক্ষা করে দেখবেন।
চোখের দৃষ্টি এবং চোখের কোটরে অক্ষিগোলকের স্থান মূল্যায়ণ করে দেখবেন।
অতিরিক্ত যে সমস্ত পরীক্ষা দরকার পড়ে:
- খুলির এক্স-রে
- ফাটল এবং তার আশপাশের অংশ মূল্যায়ণের জন্য সিটি স্ক্যান।
জটিল সমস্যার ক্ষেত্রে, নিউরোসার্জনের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে অটোল্যারিঞ্জোলজিস্টের কাছে যেতে হতে পারে।
আঘাত ও উপসর্গ কতোটা গুরুতর তার ওপর আই সকেট ফ্র্যাকচারের চিকিৎসা নির্ভর করে।
- অল্প আঘতের ক্ষেত্রে, উপসর্গ থেকে উপশম দিতে নালজেসিক, অ্যান্টিবায়োটিক প্রফিল্যাক্সিস যথেষ্ট।
- গুরুতর আঘাতের ক্ষেত্রে, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হাড়ের সংশোধন ও মেরামত প্রয়োজন।
নিজ যত্ন:
- উঁচু বালিশে মাথা রেখে বিশ্রাম নিতে হবে।
- ফোলা কমানোর জন্য ঠাণ্ডা সেঁক নেওয়া দরকার।
- হাঁচি, কাশি অথবা নাক ঝাড়া এড়িয়ে চলতে হবে।