জেসটেশনাল হাইপারটেনশন কি?
প্রস্রাবে প্রোটিনের উপস্থিতি ছাড়াই গর্ভবতী (বিশেষ করে 20 সপ্তাহ গর্ভধারণের আগে) মহিলাদের মধ্যে উচ্চ-রক্তচাপের সমস্যা (হাইপারটেনশন: রক্তচাপ 140/90-এর বেশি)-কে জেসটেশনাল হাইপারটেনশন বলা হয়। 20 সপ্তাহের গর্ভাবস্থার পর, হাইপারটেনশনের পাশাপাশি প্রস্রাবে যদি প্রোটিনের উপস্থিতি থাকে, তাহলে সেই অবস্থাকে প্রি-এক্লাম্পসিয়া বলা হয়।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গ কি কি?
যদিও জেসটেশনাল হাইপারটেনশনের লক্ষণ এবং উপসর্গ বিভিন্ন গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন হয়, কিন্তু তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত সবচেয়ে সাধারণগুলি হলো:
- হঠাৎ করে ওজন বেড়ে যাওয়া
- ফুলে যাওয়া (ওডেমা)
- দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথা
- বমি করা বা বমি বমি ভাব
- অল্প প্রস্রাব হওয়া
- পেটে ব্যথা হওয়া বা পেটের ওপরের দিকে ব্যথা হওয়া
- দেখতে অসুবিধে হওয়া, যেমন ঝাপসা দেখা বা একই জিনিস দু’টি করে দেখা
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
জেসটেশনাল হাইপারটেনশনের কারাগুলি হলো:
- আগেকার গর্ভাবস্থায় বা গর্ভবতী হওয়ার আগে হাইপারটেনশন সংক্রান্ত ইতিহাস।
- একই সঙ্গে ডায়াবেটিস অথবা কিডনির রোগ থাকা।
- আফ্রিকান অ্যামেরিকান জাতির অন্তর্গত হওয়া বা 20 বছরের কম বয়স হওয়া বা 40 বছরের বেশি বয়স হওয়া।
- একসঙ্গে একাধিক সন্তান গর্ভে ধারণ করা, যমজ বা ত্রিতয় সন্তান।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
ডাক্তার প্রথমে আপনার উপসর্গের বিষয়ে বিস্তারিত ইতিহাস জানতে চাইবেন, তারপর রক্তচাপ মাপবেন। এই নিন্মলিখিত পরীক্ষাগুলো করাতে হয় হাইপারটেনশনের কারণ জানার জন্য:
- ওজন আর ফোলা ভাব ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করা।
- রক্ত জমাট বাঁধার পরীক্ষা।
- প্রস্রাব পরীক্ষা করা, প্রস্রাবে প্রোটিন আছে কি না, তা দেখার জন্য (প্রস্রাবে প্রোটিনের উপস্থিতি কিডনির কার্যকারিতায় সমস্যার ইঙ্গিতবাহক)।
- লিভার আর কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা।
ভ্রূণের স্বাস্থ্যের পরীক্ষা করার জন্য, ভ্রূণের পর্যবেক্ষণ করার দরকার, সেগুলি হলো:
- ফিটাল মুভমেন্ট কাউন্টিং টেস্ট করা হয় ভ্রূণের লাথি আর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য।
- ননস্ট্রেস টেস্টিং (এনএসটি) ব্যবহার করা হয় গর্ভের মধ্যে চলাফেরার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ শিশুর হৃদস্পন্দন মাপার জন্য।
- বায়োফিজিকাল প্রোফাইল করা হয় যাতে তা ননস্ট্রেস টেস্টকে আলট্রাসাউন্ডের সঙ্গে মিলানো যায়, তাতে ভ্রূণের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করতে সুবিধা হয়।
- ডপ্লার ফ্লো আলট্রাসাউন্ড হলো এমন এক ধরণের আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা যার সাহায্যে রক্তবাহিকায় রক্ত প্রবাহ মাপা হয়।
জেসটেশনাল হাইপারটেনশনের চিকিৎসাতে রয়েছে:
রোগীর সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য আর চিকিৎসাজনিত ইতিহাস দেখে ডাক্তার চিকিৎসা পরিকল্পনা করেন। এই চিকিৎসার প্রাথমিক লক্ষ্য হলো, অবস্থা যাতে আর না খারাপ হয় এবং যে কোনওরকম জটিলতা এড়ানো। নিম্নলিখিত পদক্ষেপ অনুসরণ করা হয় জেসটেশনাল হাইপারটেনশন চিকিৎসা করার জন্য:
- আরাম করা (বাড়িতে বা হাসপাতালে)।
- অ্যান্টিহাপারটেন্সিভ ওষুধের মাধ্যমে দেখভাল, যেমন - কোনও ব্যক্তির গুরুতর হাইপারটেশন থাকলে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট অথবা অন্যান্য ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
- যদি জেসটেশনাল হাইপারটেনশন অবস্থা আরও বিগড়ে যায় বা প্রিক্ল্যাম্পসিয়ায় অগ্রসর হয়, তাহলে ল্যাবোরেটরিতে বারবার প্রস্রাব আর রক্ত পরীক্ষা করাতে হয়।
- সময়ের আগে হওয়া শিশুদের মধ্যে ফুসফুসের অপরিপক্কতা গুরুতর সমস্যা, তাই কর্টিকস্টেরয়েড ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যাতে ফুসফুসের পরিপক্কতা বৃদ্ধি পায়।