জিয়ারডিয়াসিস কি?
জিয়ারডিয়াসিস হলো পরজীবী- জিয়ারডিয়া ল্যাম্বলিয়া’র কারণে হওয়া ক্ষুদ্রান্ত্রের সংক্রমণ। জিয়ারডিয়া ল্যাম্বলিয়া হলো একটি অণুজীব, যা মানুষ, বিড়াল ও কুকুরের মতো পোষ্য অথবা গবাদিপশু (গরু ও ভেড়া)-র মতো অন্যান্য জীবন্ত হোস্ট প্রাণীর ওপর নির্ভর করে বাঁচে। এই অণুজীব হোস্ট প্রাণীর ক্ষুদ্রান্ত্রে বাস করে আর নিজের চারপাশে একটি আবরণ তৈরি করে, যাকে সিস্ট বলা হয়। মলত্যাগ করার সময়, সিস্ট মলের সাথেই বেরিয়ে যায় আর এইভাবেই পরজীবীটি শরীরের বাইরে বেঁচে থাকে, যতক্ষণ না অন্য কোনও হোস্ট প্রাণী খুঁজে পাচ্ছে।
জানা গিয়েছে, জিয়ারডিয়াসিসের প্রাদুর্ভাব ভারতীয় জনসংখ্যার মধ্যেই বেশি। প্রাদুর্ভাবের হার উত্তর ভারতে প্রায় 5.5 থেকে 70 শতাংশ আর দক্ষিণে এই হার 8 থেকে 37.1 শতাংশ। বাচ্চাদের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে বেশি।
এর প্রধান লক্ষণ আর উপসর্গগুলি কি কি?
সংক্রমিত হওয়ার 7 থেকে 25 দিনের মধ্যেই উপসর্গগুলি দেখা দিতে শুরু করে। কোনও কোনও ব্যক্তির মধ্যে লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে। তাও, কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
- পাতলা পায়খানা
- পেট ফাঁপা বা গ্যাস
- খিঁচুনি
- বমি বমি ভাব
- ডিহাইড্রেশন
- দুর্বলতা
- ওজন হ্রাস
জ্বর হয়তো হতে পারে, কিন্তু তা খুবই বিরল।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
জিয়ারডিয়াসিস হলো পরজীবী জিয়ারডিয়া ইনটেস্টিনালিস বা জিয়ারডিয়া ল্যাম্বলিয়া ঘটিত ক্ষুদ্রান্তের সংক্রমণ। এই রোগ মূলত পরজীবীটির সিস্ট দ্বারা সংক্রমিত খাদ্য ও জল গ্রহণের মাধ্যমে ছড়ায়। অন্যান্য যে উপায়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে, তা হলো:
- হ্রদ, নদনদী এবং খালের অশুদ্ধ জল পান করা, বিশেষ করে ভ্রমণকারীদের মধ্যে দেখা দেয় এই রোগ।
- এমন কোনও জলাশয়ে সাঁতার কাটা, যেখানে জিয়ারডিয়াসিস পরজীবীর উপস্থিত রয়েছে।
- সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে পাযুপথে যৌন সঙ্গম বা পায়ুমৈথুন, এভাবে মলের সংস্পর্শে আসতে পারেন অপর ব্যক্তি
- রান্না না করে মাংস খাওয়া
- টয়েলেট বা প্রস্রাবখানা ব্যবহারের পর হাত না ধোয়া
মানুষের সংস্পর্শে এই রোগ ছড়ালেও, কিন্তু রক্তের মাধ্যমে ছড়ায় না।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
লক্ষণের ওপর নির্ভর করে অণুজীবের সনাক্ত করার জন্য, আপনার ডাক্তার আপনাকে মল পরীক্ষা করাতে বলতে পারেন। কখনও কখনও আপনাকে হয়তো একাধিকবার মলের নমুনা চাওয়া হতে পারে।
জিয়ারডিয়াসিসের চিকিৎসায় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালস হলো একমাত্র বিকল্প। সাধারণত, এই চিকিৎসা 3 থেকে 7 দিন চলে। ওষুধের সাথে, সঠিক ভাবে জল খেতে হবে, যাতে ডায়রিয়ার কারণে হওয়া ডিহাইড্রেশন রোধ করা যায়।
আপনি এই সংক্রমণ রোধ করতে পারেন, এই গুলো করা উচিত:
- জলাশয়, নদী অথবা হ্রদের থেকে জল পান না করা
- শুধুমাত্র ফোটানো জল পান করা
- টয়লেট বা বাথ্রুম ব্যবহার অথবা বাচ্চার ডায়পার পরিবর্তন করার পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়া
সংক্রমিত হওয়া থেকে নিজের পরিবার অথবা অন্যান্যদের আপনি যেভাবে রক্ষা করতে পারেন:
- ডায়রিয়া কমার পর যতক্ষণ না 24 ঘণ্টা কাটছে সংক্রমণের কবলে পড়া আপনার বাচ্চাকে স্কুল বা ডে কেয়ারে না পাঠানো।
- আপনার মধ্যে যদি লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে খাবার রান্না করবেন না।
- যতক্ষণ না লক্ষণ চলে যাচ্ছে, ততদিন বাড়ির কোনও জিনিস সবাই মিলে না ব্যবহার করা।