হিট স্ট্রোক কি?
হিট স্ট্রোক হলো এমন একটি চিকিৎসাগত জরুরি অবস্থা যার ফলে শরীরের তাপমাত্রা 40 ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার ওপরে চলে যায় এবং, এই অবস্থায় সূর্যের প্রখর তাপ সরাসরি লাগার পর, শরীর তার স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে পারে না। সাধারণত, উচ্চ-তাপমাত্রায় শরীর স্বাভাবিকভাবে নিজেকে ঠাণ্ডা করে রোমকূপের মাধ্যমে ঘাম বের করে কিন্তু, এই পরিস্থিতিতে শরীর তার সেই স্বাভাবিক কাজকর্ম বজায় রাখতে পারে না। তাপজনিত এই সমস্যা গ্রীষ্মকালে খুব সাধারণ ব্যাপার যা অত্যাধিক তাপের সংস্পর্শে আসার ফলে বাচ্চা ও বয়ষ্কদের উপরেই বেশি প্রভাব ফেলে। যারা বাইরে কাজ করেন, তাঁরাও হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। যদি হিট স্ট্রোকের অবিলম্বে ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে এটা শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রতঙ্গকে নষ্ট করে দিতে পারে এবং তা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ভারতবর্ষে তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু সংক্রান্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে, হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে।
এর সঙ্গে জড়িত প্রধান কারণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তি নিম্নলিখিত সাধারণ উপসর্গগুলি উপলব্ধি করতে পারেন:
- কোনওরকম ঘাম দেওয়া ছাড়াই ত্বক লাল, গরম ও শুষ্ক হয়ে ওঠে।
- শ্বাসকষ্ট।
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
- ক্লান্তি।
- বমিভাব।
- বমি হওয়া।
- মাথাব্যথা।
- হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি (আরও পড়ুন: ট্যাকিকার্ডিয়ার কারণ)।
- সবকিছু গুলিয়ে যাওয়া।
- খিটখিটে ভাব।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
হিট স্ট্রোকের প্রধান কারণ হলো সূর্যের তাপের সংস্পর্শে সরাসরি আসা। আর এই সমস্যা তাদেরই দেখা দেয়, যারা রোদের মধ্যে পরিশ্রমের কাজ বা পরিশ্রমবিহীন কাজকর্ম করেন। যারা বেশি মাত্রায় হিট স্ট্রোক প্রবণ তারা হলো
- শিশু।
- বয়ষ্ক ব্যক্তি।
- যাঁরা বাইরের পরিবেশে কাজকর্ম করেন।
- স্থুলকায় ব্যক্তি বা মোটা মানুষ (আরও পড়ুন: স্থুলকায় রোগের চিকিৎসা)।
- মানসিক ভাবে অসুস্থ ব্যক্তি।
- যারা মদ্যপান করেন।
- যারা জল অথবা পানীয় কম গ্রহণ করেন, এর ফলে ডিহাইড্রেশন বা শরীরে জলের ঘাটতি দেখা দেয়।
কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
যদি দেখেন যে কোনও ব্যক্তির হিট স্ট্রোক হয়েছে, তাহলে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তাকে কোনও ছায়ার তলায় ও ঠাণ্ডা পরিবেশে নিয়ে যান। তারপর তাঁর শরীরের তাপমাত্রা কমাতে ভিজে তোয়ালে অথবা হাওয়া দেওয়ার বন্দোবস্ত করুন। যদি সম্ভব হয়, হিট স্ট্রোকের কবলে পড়া ব্যক্তির বগলে ও কুঁচকির জায়গায় আইস প্যাক দিন। প্রাথমিক সুশ্রুষার পর রোগীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া আবশ্যক।
হাসাপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার রোগীর অবস্থা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা করবেন যেমন শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যায় অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। যতক্ষণ না শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় (মানব শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা 38 ডিগ্রি সেলসিয়াস) নেমে আসছে, চিকিৎসক অনবরত চেষ্টা করে যান তাপমাত্রা নামানোর। হিট স্ট্রোক অন্য কোনও কারণে হয়েছে কি না তা জানার জন্য চিকিৎসক ল্যাব টেস্ট বা পরীক্ষাও করাতে পারেন।
নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি মেনে চললে নিজেই নিজেকে হিট স্ট্রোক থেকে রক্ষা করতে পারেন
- শরীরে জলের মাত্রা ঠিক রাখতে, পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খান।
- হাল্কা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরুন।
- দুপুর 12টা থেকে 3টে পর্যন্ত সূর্যের তাপ প্রখর থাকে, এই সময় যতটা সম্ভব রোদ্দুরে কম থাকুন।
- টুপি অথবা স্কার্ফ পরার পাশাপাশি ছাতা ব্যবহার করুন।