প্রসব যন্ত্রণা এবং প্রসব জটিলতা কি?
গর্ভাবস্থা এবং প্রসব একটি নারীর জীবনের অনন্য অভিজ্ঞতা। তবে, কিছু স্বাস্থ্যের সমস্যা এই অভিজ্ঞতাকে নষ্ট করে দিতে পারে, যেমন প্রসব যা স্বাভাবিকভাবে অগ্রসর হয় না হওয়া, দুর্বল সংকোচন অথবা সার্ভিক্স বা জরায়ু গ্রীবার খারাপ প্রসারণ। সব প্রসববেদনা এবং ডেলিভারির জটিলতার জন্য, ‘অবস্টেরিক কমপ্লিকেশন’ অ্যাখ্যাটি ব্যবহার করা হয় আর এটি মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের উপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে।
চিকিৎসা না করালে তাড়াতাড়ি জল ভাঙা বা অ্যামনিওটিক স্যাক ফেটে যাওয়া ব্যাপারটিকে জটিল করে দিতে পারে, আর তা সংক্রমণের কারণ হতে পারে। অন্য সমস্যাগুলি হল মায়ের ঠিক করে পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া, ছোটোখাটো শারীরিক অস্বাভাবিকতা এবং প্রসবের সময় জটিলতা। এই জটিলতা বাচ্চার উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে আর ভবিষ্যতে আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
একইভাবে, প্রসবের খারাপ ভাবে অগ্রসর হওয়া তখন হয় যখন প্রথমবার প্রসবের 20 ঘণ্টা পেরিয়ে যায় আর প্রসবের পর 14 ঘণ্টা পার হয়ে যায়। তাই, বাচ্চার আর মায়ের ওপর যে কোনরকম ক্ষতিকারক প্রভাব এড়াতে এই জটিলতাকে এবং তার সাথে সম্পর্কিত উপসর্গগুলি বোঝা দরকার।
এর প্রধান কারণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
প্রসবের অগ্রসরের ধরনের সঙ্গে সঙ্গে জটিলতা অনেক ধরণের হতে পারে। এগুলি হল:
- পেরিনিয়াল টিয়ার বা যোনিপথের টিস্যু ছিঁড়ে যাওয়া।
- শিশুর অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন।
- গর্ভানলে সমস্যা।
- জল ভাঙার সমস্যা।
- শিশুর মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব।
- প্রসবের সময় কাঁধের আড়ষ্ঠতা।
- যোনির অত্যাধিক রক্তপাত।
- রক্ত মিশ্রিত মিউকাস বেরনো।
- জটিলতা, যা গর্ভপাতের কারণ হতে পারে।
- এক্ল্যাম্পসিয়া- উচ্চ রক্তচাপ এবং গর্ভাবস্থার সময় প্রস্রাবে প্রোটিনের উপস্থিতি; এটি একটি চিকিৎসাজনিত জরুরি অবস্থা।
- জরায়ুর ভাঙন।
- এক্টোপিক গর্ভাবস্থা (জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ, বিশেষ করে ফ্যালোপিয়ান টিউবে)।
- ফিকে গায়ের রঙ।
- গর্ভাবস্থায় পিছনের দিক আগে বেরিয়ে আসা।
- ফাইব্রয়েডস।
- শিশুর শরীর এবং মাথা বড় আকারের।
- যোনির দেওয়াল থেকে নাড়ির বিচ্ছেদে সমস্যা।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
জটিলতার প্রধান কারণগুলি হল:
- মায়ের মধ্যে পুষ্টির অভাব।
- মদ্যপান করা বা সংস্পর্শে আসা।
- সামান্য শারীরিক সমস্যা।
- প্রসবে জটিলতা।
- আগে সি-সেকশন হওয়া।
- গর্ভাবস্থায় হাইপারটেনশন।
- ওবেসিটি বা স্থুলকায়তা।
অন্যান্য সমস্যাগুলি হল:
- নাড়ি সংক্রান্ত সমস্যা: নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে, নাড়ি হয়ত শিশুর হাতে জড়িয়ে বা পায়ে জড়িয়ে যেতে পারে। কিছু চরম ক্ষেত্রে, নাড়ি শিশুর গলার পেঁচিয়ে যেতে পারে। এই অবস্থার সম্মুখীন হলে মৃত্যু এড়াতে সিজারিয়ান সেকশন করা হতে পারে।
- অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন।
- আগে থেকে জল ভাঙা শুরু হলে সমস্যা জটিল হতে পারে, যদি তার পরের পদক্ষেপ প্রসব না হয় তাহলে।
- জরায়ুর ফেটে যাওয়া অথবা সঙ্কোচনের অক্ষমতার ফলে যোনির খুব বেশি রক্তপাতের কারণে মায়ের মৃত্যু ঘটতে পারে।
- জটিলতা বাড়তে পারে যদি গর্ভাবস্থা 42 সপ্তাহের বেশি হয়।
- যদি মায়ের বয়স বেশি হয়, যেমন ত্রিশোর্ধ্ব।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
ভ্রূণ সঙ্কট হল একটা অবস্থা যেখানে হৃদস্পন্দনের মাত্রা এবং অক্সিজেনের মাত্রা প্রভাবিত হয়।ফিটোস্কোপ বা কার্ডিয়োটোকোগ্রাফির মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা হয়।
মাতৃত্বকালীন সমস্যার ধরনের কথা মাথায় রেখে উপরে উল্লেখিত অবস্থাগুলির চিকিৎসা ভিন্ন হতে পারে আর তা হল:
- সম্পূর্ণ বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম বা কিছু গুরুতর ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধানে বিশ্রাম করতে হয়।
- ব্লাড ট্রান্সফিউশন।
- অবিলম্বে সিজারিয়ান ডেলিভারি।
- ফর্সেপ বা অনুরূপ কোনও যন্ত্র ব্যবহার করা, যাতে ভ্যাজিনাল ডেলিভারিতে সুবিধা হয়।