ম্যানটেল সেল লিম্ফোমা কাকে বলে?
ম্যানটেল সেল লিম্ফোমা (এমসিএল) একপ্রকার নন-হজকিন লিম্ফোমা। এই রোগটি অত্যন্ত আক্রমনাত্বক এবং বিরল। এমসিএল রোগে লিম্ফোমার উৎপত্তি হয় লসিকা গ্রন্থির আবরণ বা করোনা-তে। ম্যানটেল সেল লিম্ফোমা সাধারণত পাকনালি ও অস্থিমজ্জায় দেখতে পাওয়া যায়।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কি?
এমসিএল রোগের উপসর্গগুলির সাথে অন্যান্য প্রকার লিম্ফোমার উপসর্গের মিল আছে। এর প্রাথমিক লক্ষণগুলিকে স্বাস্থ্যের সাধারণ সমস্যা ভেবে সহজেই উপেক্ষা করা হতে পারে। এই প্রাথমিক উপসর্গ গুলি হল:
- ঘাড়, কুচকি বা বগলের লসিকা গ্রন্থির ফোলা।
- অতিরিক্ত ক্লান্তি।
- অনিয়মিত ও বারবার জ্বর হওয়া।
- রাতে ঘাম হওয়া।
- হঠাৎ এবং অকারণ ওজন হ্রাস।
এর অগ্রসর পর্যায়ের উপসর্গ হলো:
- হাড়ের যন্ত্রণা।
- শ্বাসের সমস্যা।
- দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতা ও ক্লান্তি।
- পূর্ব লিখিত উপসর্গগুলোর ব্যাপ্তি ও তীব্রতা বৃদ্ধি।
এই রোগের প্রধান কারণগুলি কি কি?
একাধিক কারণে এমসিএল রোগটি হতে পারে, কিন্তু কোন নির্দিষ্ট কারণটি এর জন্য দায়ী তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। এমসিএল-এর 90% এর বেশী রোগীর মধ্যে সাইক্লিন D1 নামক প্রোটিনের অত্যধিক উৎপাদন দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও ল্যাকটেজ ডিহাইড্রোজেনেজ ও বিটা 2 মাইক্রোগ্লোবিউলিন-এর মত কিছু প্রোটিনও এদের শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে পাওয়া যায়।
কিভাবে এটি নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
রোগীর শরীরে যদি লিম্ফ টিউমার বা ক্যান্সারের সম্ভাব্য উপসর্গ দেখতে পাওয়া যায় তাহলে চিকিৎসক বা প্যাথলজিস্ট বায়োপ্সির পরামর্শ দেন যার সাহায্যে ক্যানসার আক্রান্ত অঞ্চলে উপস্থিত কোষের প্রকৃতি নির্ণয় করা যায়।
লিম্ফোমা কোষ খুঁজে পাওয়া গেলে পরবর্তী পর্যায়ে আরও কিছু পরীক্ষা করা হয়, যেমন বুকের এক্স-রে, রক্ত পরীক্ষা, কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি (সিটি) বা ম্যাগনেটিক রেসোনান্স ইমেজিং (এম আর আই) যার সাহায্যে দেহের কোন অংশ কতটা আক্রান্ত হয়েছে জানা যায়।
ক্যান্সার কোন ধাপে আছে তার উপর এমসিএল এর চিকিৎসা নির্ভর করে।
রোগের প্রাথমিক পর্যায়ের সবথেকে প্রচলিত চিকিৎসা ওষুধপ্রয়োগ; যদিও অগ্রসর পর্যায়ে কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন ব্যবহৃত হয়। রিটুকসীম্যাব জাতীয় কিছু ওষুধ যারা ক্যান্সার আক্রান্ত B-কোষ গুলিকে আক্রমণ করে তারাও এই পর্যায়ের চিকিৎসায় সাহায্য করে। বিশেষ ক্ষেত্রে যখন হাই ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সম্পূর্ন অনুপস্থিতি) দেখতে পাওয়া যায় তখন চিকিৎসক অস্থিমজ্জা অথবা স্টেমসেল প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন যাতে শরীরে নতুন ও সুস্থ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে।