মচকানো কি?
মচকানো হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে শারীরিক ক্রিয়ার সময় আমাদের শরীরের হাড়গুলির সঙ্গে যুক্ত লিগামেন্ট অতিপ্রসারিত হয় অথবা ছিঁড়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, এটা গোড়ালিতে হয়, কিন্তু এটা হাতের লিগামেন্টেও হতে পারে। রিপোর্ট অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি দিন 30,000 মচকানোর ঘটনা ঘটে।
এর প্রধান লক্ষন ও উপসর্গগুলি কি কি?
প্রধান উপসর্গগুলি হলো
- প্রভাবিত অঙ্গে ওডেমা (ফোলা)।
- ব্যথা।
- প্রভাবিত অঙ্গ নাড়াতে অক্ষমতা।
- প্রভাবিত জায়গায় কালশিটে ভাব।
- প্রভাবিত জায়গায় সংবেদনশীলতা অনুভব।
গ্রেড অনুযায়ী মচকানো শ্রেণীবিভাগ করা যায়:
- গ্রেড 1 মৃদু: ভার সহ্য করতে পারে।
- গ্রেড 2 মাঝারি: খোঁড়ানো (গোড়ালি মচকে গেলে)।
- গ্রেড 3 প্রচণ্ড: হাঁটায় অক্ষমতা।
এর প্রধান কারণগুলো কি কি?
লিগামেন্টের উপর অত্যধিক চাপ পড়লে গাঁট বা জোড় নিজের অবস্থান থেকে সরে যেতে পারে। এর ফলে জোড় প্রসারিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিছু ক্রিয়াকলাপ যেমন হাঁটার সময় বেকায়দায় পা ফেলা, হাঁটার বা দৌড়ানোর সময় অথবা পড়ে যাওয়ার পর গোড়ালি মোচড় খেলে মচকানোর ঘটনা ঘটতে পারে। প্রচণ্ড মচকানোর ঘটনা বাররবার ঘটলে লিগামেন্ট এবং জোড় স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ হতে পারে।
এটি কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
রোগের প্রধান নির্ণয় রোগীকে মচকানোর কারণ জিজ্ঞাসা করে করা হয়। অন্যান্য অবস্থার সঙ্গে এই অবস্থা আলাদা করতে চিকিৎসক প্রভাবিত অংশের শারীরিক পরীক্ষা করেন। আক্রান্ত অংশের চারপাশে হালকা চাপ দেওয়া মচকানো নির্ণয় করতে সাহায্য করে। প্রভাবিত অংশের পরিসীমাও পর্যবেক্ষণ করা হতে পারে। অবস্থার পরীক্ষা করতে এক্স-রে, স্ট্রেস এক্স-রে, এমআরআই স্ক্যান, ও আল্ট্রাসাউন্ডের মতো ইমেজিং কৌশলও ব্যবহার করা হতে পারে।
মচকানোর চিকিৎসায় প্রধানত আক্রান্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নড়াচড়া বন্ধের ওপর জোর দেওয়া হয়। আক্রান্ত অঙ্গকে বিশ্রাম দিলে সবচাইতে ভালো হয়; বরফ সেঁক ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। ওই অংশ ঠাণ্ডা সেঁক কিছু দিয়ে জড়িয়ে রাখলে অতিরিক্ত সাহায্য মেলে এবং ফোলাভাব কমাতেও সাহায্য করে। সাধারণত অধিকাংশ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারমুক্ত পদ্ধতিই যথেষ্ট। ফিজিওথেরাপির পুরো কোর্স করালে পুনরায় পূর্ণ সচলভাব ও শক্তি ফিরে আসার ক্ষেত্রে সাহায্য দিতে পারে। উপসর্গ উপশমে বেদনানাশক ওষুধ কাজে লাগতে পারে।
সঠিক যত্নের মাধ্যমে মচকানোর ঘটনায় ব্যবস্থাপনা নেওয়া যেতে পারে, ঠিক যেমন সহজেই সংশোধন করা যায়। প্রভাবিত অঙ্গের নড়াচড়া বন্ধ করে দিলে এবং উপরোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করলে এটা খুব তাড়াতাড়ি সেরে উঠতে পারে।