পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (পিসিওএস) কাকে বলে?
মহিলাদের মধ্যে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে সৃষ্ট একগুচ্ছ উপসর্গের সমষ্টিকে বলে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম, যাকে ছোট করে পিসিওএস বলা হয়। এটি সাধারণত 18-35 বছর বয়সী প্রজনন বয়সের সময়ের মধ্যে যে মহিলারা আছেন তাদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। রোগটির একটি বিশিষ্ট উপসর্গ থেকে এর নামের উৎপত্তি হয়েছে। আক্রান্ত রোগিণীর অন্তত একটি ওভারি বা ডিম্বাশয়ে 12 বা তার বেশি ফলিকল তৈরি হয় (সবসময় নয়), এবং ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন (এফ এস এইচ) ও লিউটিনাইজিং হরমোন (এল এইচ) প্রভৃতি হরমোনের মাত্রায় পরিবর্তন দেখা যায়।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি?
এই রোগের উপসর্গগুলি হল
- এমেনোরিয়া যার অর্থ হলো ঋতুস্রাব না হওয়া।
- ডিসমেনোরিয়া যার অর্থ হলো যন্ত্রণাদায়ক ঋতুস্রাব।
- অনিয়মিত ঋতুস্রাব।
- হিরসুটিজম যার অর্থ হলো দেহে ও মুখে অতিরিক্ত লোমের উপস্থিতি।
- পিম্পল বা ব্রণ।
- কোমরের কাছে ব্যথা।
- গর্ভধারণের সমস্যা।
- স্থূলত্ব, যাতে পেটে চর্বিসঞ্চয়ের সম্ভাবনা থাকে।
- পেরিফেরাল ইনসুলিন প্রতিরোধ।
- বন্ধ্যাত্ব।
- রোগীর পরিবারে মাসিকসংক্রান্ত সমস্যা, এড্রেনাল এনজাইমের অভাব, বন্ধ্যাত্ব, স্থূলত্ব এবং মেটাবলিক সিনড্রোম বা ডায়াবিটিসের ইতিহাস থাকতে পারে। অথবা, রোগী অতিরিক্ত রক্তপাত বা দীর্ঘস্থায়ী ঋতুস্রাবের অভিযোগ করতে পারে।
এর প্রধান কারণগুলি কি?
পিসিওএস রোগটির জিনগত প্রবণতা দেখতে পাওয়া যায়, এবং বাবা ও মা দুজনের থেকেই অটোজমাল ডমিনেন্ট জিন হিসাবে এটি পরবর্তী প্রজন্মে বাহিত হয়। রোগীদের শরীরে অধিক মাত্রায় এন্ড্রোজেন (পুরুষ হরমোন) উপস্থিত থাকে, বিশেষত টেস্টোস্টেরন। এই হরমোনগুলি ডিম্বাণুচক্রের বিন্যাসে ব্যাঘাত ঘটায় এবং বিভিন্ন উপসর্গের সৃষ্টি করে। হরমোনগুলির ফলে ফলিকলের বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। এই অপরিণত ফলিকলের জন্যই ডিম্বাশয়কে দেখে মনে হয় তা তরলপূর্ণ সিস্টে ভর্তি।
কিভাবে একে নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
এই রোগটি নির্ণয়ের জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খ চিকিৎসার ইতিহাস সংগ্রহ ও শারীরিক পরীক্ষার দরকার। ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মধ্যে আছে থাইরয়েডের ক্রিয়ার পরীক্ষা; এফএসএইচ, প্রোলাক্টিন এবং এলএইচ মাত্রা; টেস্টোস্টেরন ও রক্তশর্করার মাত্রা। এগুলির আগে, আল্ট্রাসোনোগ্রাফীর মত নন-ইনভেসিভ ইমেজিং প্রক্রিয়া ব্যবহার করা যেতে পারে। ডিম্বাশয়ে সিস্টগুলির উপস্থিতি দেখতে লাগে অনেকটা মুক্তোর মালার মত।
এর চিকিৎসা হল রোগীকে আরো স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে উৎসাহী করে তোলা। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ওজনহ্রাস, নিয়মিত শরীরচর্চা প্রভৃতি পরিবর্তনের মাধ্যমে হরমোনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। এছাড়াও চিকিৎসক হরমোন থেরাপির নির্দেশ দিতে পারেন। প্রাকডায়াবিটিস অথবা ইনসুলিন প্রতিরোধের ক্ষেত্রে মেটফর্মিন জাতীয় ইনসুলিন সেনসিটাইজিং ওষুধও সাহায্য করে।