প্রোটিনের অভাব কি?
প্রোটিন হল মানুষের শরীরের বৃদ্ধির জন্য অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। প্রোটিনের অভাব খুবই সাধারণ সমস্যা, বিশেষ করে নিরামিষাশী এবং ভেজানদের মধ্যে। এটা অনুমান করা হয় যে লক্ষ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুরা এই সমস্যায় ভোগে কারণ তারা যে খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করে তার থেকে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় প্রোটিন পায় না। কসিয়রকর হল গুরুতর প্রকারের প্রোটিনের অভাবজনিত রোগ এবং তা শিশুদের মধ্যে খুবই সাধারণভাবে দেখা যায়।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
প্রোটিন হল অন্যতম পরিপোষক উপাদান যা মানুষের শরীরে দরকার পড়ে হরমোন এবং এনজাইম উৎপাদন করার জন্য এবং টিস্যু বা শরীরকলা গঠনের জন্য। প্রোটিনের অভাবের ফল হল সদ্যজাত শিশুদের মধ্যে এবং বাচ্চাদ্দের মধ্যে বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হওয়া। কিছু সাধারণ লক্ষণ এবং উপসর্গ যা এই সমস্যার সাথে জড়িত তা হল:
- ত্বকের নীচে জল জমা যার জন্য জায়গাটা ফোলা বা স্ফীত দেখায়। এটি কসিয়রকরের একটি বিশেষ লক্ষণ।
- যদি জরুরী প্রোটিন না গ্রহণ করা হয় তা লিপোপ্রোটিনের উৎপাদনকে স্তব্ধ করে দিতে পারে, ফলে শরীরে মেদ জমতে থাকে। এই অবস্থার ফল হল স্থূলতা এবং প্রতিনিয়ত লিভারে মেদ জমতে থাকে, যা চরম পর্যায়ে, লিভারের ফেলিওরে পরিণত হতে পারে।
- প্রোটিন হল ত্বক,চুল এবং নখের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রোটিনের অভাবে তাই চুল পড়া এবং শুষ্ক, আঁশের মতো ত্বক দেখা দিতে পারে। নখে সাদাভাব বা নখে শিরাওঠা ভাব দেখা দিলে তা প্রোটিনের অভাবের কারণে হতে পারে।
- অবসাদ।
- পেশীতে ব্যথা এবং হাড়ের সন্ধিতে ব্যথা।
- পেশীর ক্ষয়।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
প্রোটিনের অভাব হতে পারে অসামঞ্জস্যপূর্ণ খাদ্যতালিকার কারণে শরীরে ঠিকমত প্রোটিন শোষিত না হলে বা নির্দিষ্ট কিছু রোগের কারণে, যার জন্য প্রোটিন সঠিকভাবে সংশ্লেষিত হয় না বা শরীরে সঠিকভাবে কাজে লাগে না। প্রোটিনের অভাব বা হাইপোপ্রোটিনেমিয়ার প্রধান কারণগুলি হল:
-
অপুষ্টি
উন্নয়নশীল অথবা অনুন্নত দেশে প্রোটিনের অভাবের সবথেকে বড় কারণ হল অপুষ্টি, যেখানে খাদ্যতালিকায় যথযথ পরিমাণে প্রোটিন থাকে না যা শরীরের দরকার। - কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে
কিডনি ঠিক করে না কাজ করার ফলে প্রোটিন শরীর থেকে বেড়িয়ে যায়, কারণ কিডনিতে নেফ্রনগুলি সঠিকভাবে কার্যকরী না হওয়ার কারণে মুত্রের মাধ্যমে প্রোটিন শরীর থেকে বেড়িয়ে যাওয়াকে আটকাতে পারে না।
-
অন্তর্নিহিত চিকিৎসাগত সমস্যাগুলি
প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগ যেমন আলসারেটিভ কোলাইটিস অথবা ক্রোন’স রোগ, যা অন্ত্রের ক্ষতিসাধন করে এবং প্রোটিন শোষনে বাধা দেয়।
এটি কিভাবে নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
কোন ব্যক্তির মধ্যে প্রোটিনের অভাবের লক্ষণ দেখার পর, ডাক্তার হয়তো তাকে রক্ত পরীক্ষা করতে বলবেন যাতে শরীরে প্রোটিনের মাত্রার মূল্যায়ন করা যায়, তারসাথে লিভাব্র এবং কিডনির কার্যকারিতার পরীক্ষাও করা হয়ে থাকে।
একটি সুষম খাদ্যতালিকা বজায় রাখা হল শরীরে প্রোটিনের অভাব পূরণের প্রথম পদক্ষেপ। একটি খাদ্যতালিকা প্রস্তুত করা হয় ব্যক্তির ওজন এবং সমস্যার গুরুত্ব অনুযায়ী। এতে উল্লেখ করা থাকে কতটা প্রোটিন গ্রহণ করা দরকার এবং কি কি খাদ্য খাওয়া উচিত প্রাত্যহিকভাবে। পাঁঠার মাংস হল প্রোটিনের ভরপুর উৎস আমিষভোজীদের জন্য। আর যারা নিরামিষ খান তাঁদের জন্য বাদাম, বীজজাতীয় খাদ্য, সয়াবিন , মুসুর ডাল এবং বিনস রাখার পরামর্শ দেওয়া হয় তাদের খাদ্যতালিকায়। কিছু সম্পূরক খাদ্য এবং ওষুধও দেওয়া হয় গুরুতর অবস্থার ক্ষেত্রে।
যে ক্ষেত্রে প্রোটিনের অভাবের কারণ হল কোন অভ্যন্তরীণ রোগ, রোগটি সারানোর সাথে সাথে প্রোটিন সম্পূরক দেওয়া হল সমস্যাটির সঠিক সমাধান।