স্পাইনাল মাসকিউলার অ্যাট্রফি কি?
স্পাইনাল মাসকিউলার অ্যাট্রফি (এসএমএ) একটা অসুখ যেটা আমাদের শরীরের ঐচ্ছিক পেশীকে প্রভাবিত করে, যেটা মেরুদন্ডের স্নায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যখন নার্ভের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এর ফলস্বরুপ এই নার্ভের সাথে যুক্ত পেশীতে দূর্বলতা ও সংকোচন দেখা যায়। এটা শিশুদের মধ্যে দেখা যায় এবং জিনের দ্বারা স্থানান্তরিত হয়।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
এসএমএর লক্ষণ ও উপসর্গগুলি অসুখের প্রকারের উপর নির্ভর করে।
চার প্রকারের এসএমএ দেখা যায় এবং এদের উপসর্গগুলো হলো:
- টাইপ I - প্রচন্ড মারাত্বক ধরণের।
- বসতে অসুবিধা।
- মাথা সোজা রাখতে অক্ষম।
- ঢোক গিলতে অসুবিধা।
- শ্বসনতন্ত্রের পেশীও প্রভাবিত হয় (বাচ্চারা দুই বছর বয়সের বেশি খুব কমই বাঁচে)।
- টাইপ II - 6-18 মাস বয়সের শিশুরা প্রভাবিত হয়।
- শরীরের ঊর্দ্ধভাগের পেশীর চাইতে নিম্নভাগের পেশী বেশি প্রভাবিত হয়।
- হামা দিতে, হাঁটতে, ইত্যাদিতে অসুবিধা
- এটা দীর্ঘ ইনফ্যান্টাইল এসএমএ নামেও পরিচিত।
- টাইপ III - 2-17 বছর বয়সের শিশুরা প্রভাবিত হয়। (জুভেনাইল এসএমএ)।
- এটা সবচাইতে মৃদু প্রকারের এস এম এ।
- শরীরের নিম্নাঙ্গ প্রভাবিত হয় এবং এর ফলে পেশীর দূর্বলতা হয়।
- শিশুরা দৌড়াতে, সিঁড়ি চড়তে, চেয়ার থেকে উঠতে খুব অসুবিধা বোধ করে।
- টাইপ IV - এটা সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়।
- সাধারণত ঊর্দ্ধ ও নিম্ন উভয় অঙ্গই আক্রান্ত হয়।
- পেশীর দূর্বলতা, হাঁটতে অসুবিধা, অবিচলিত হাঁটার ধরণ ইত্যাদি ।
এর প্রধান কারণগুলো কি কি?
স্পাইনাল মাসকিউলার অ্যাট্রফি একটা জিনের রোগ যেটা ঘটে জিনের ত্রুটির জন্য বা জিনের পরিবর্তনের জন্য। জিন যেটা মোটর নিউরন প্রোটিন (এসএমএন) তৈরী করে সেটা বদলে যায়। এর ফলে প্রোটিন খুব কম তৈরী হয় এবং ফলস্বরুপ মাসকিউলার অ্যাট্রফি দেখা যায়।
এসএমএ জিনের দ্বারা প্রবাহিত হয়। যদি শিশুর একটা স্বাভাবিক জিন থাকে এবং অন্যটা পরিবর্তিত জিন থাকে, তাহলে এই শিশু ভোগে না কিন্তু ও এই রোগের বহনকারী হয় এবং সে কোনো অবস্থায় তার নিজের শিশুকে এই ব্যাধি সরবরাহ করতে পারে; কিন্তু যদি শিশুর দুটো জিনেই ত্রুটি থাকে তাহলে সেই শিশু এই রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং পরবর্তী বংশধরের মধ্যে এই ব্যাধি সরবরাহ করবে।
এদের কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
এসএমএ নির্ণয় করা কঠিন হতে পারে। শারীরীক পরীক্ষার সাথে ক্লিনিকাল ইতিহাস থাকা সত্বেও এটা অন্যান্য অবস্থার অনুকরণ করে। কিছু বিশেষ রক্ত এবং রেডিওলজিকাল অনুসন্ধান এসএমএ নির্ণয় করতে সাহায্য করে।
- রক্ত পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে এসএমএ জিনের জিনগত মূল্যায়ন।
- ই এম জি – পেশীতে নার্ভের ঘাতের মূল্যায়ণে সাহায্য করে।
- সি টি স্ক্যান এবং এম আর আই স্ক্যানস – পেশীর কাঠামো মূল্যায়ণে সাহায্য করে এবং অ্যাট্রফি খোঁজ করে।
- পেশীর বায়োপসি – মাইক্রোস্কোপের নিচে পেশীর কোষের মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে।
এসএমএর কিছু ধনাত্মক চিকিৎসার জন্য গবেষনা চলছে। বর্তমানে কিছু সহায়ক চিকিৎসা পাওয়া গেছে যেগুলো উপসর্গগুলোর গম্ভীরতা কম করে এবং জীবনযাত্রা উন্নত মানের করে।
- খাবার – কম কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার এবং প্রোটিনভরপুর খাবার খেতে বলা হয়।
- শারীরীক থেরাপী – শরীরের ঊর্দ্ধ এবং নিম্ন উভয়ভাগের পেশীর টানের উন্নতির জন্য এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। মিউকাস জড়ো হওয়া এড়াতে এবং ছাতির পেশীর কার্যকলাপের উন্নতির জন্য শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে বলা হয়।
- অ্যাসিস্টিভ গিয়ারস – যেমন নড়াচড়াতে সাহায্য করতে যন্ত্র (চাকাযুক্ত চেয়ার), বাহুর সাহায্যের জন্য স্প্লিন্টস এবং ব্রেসেস এবং পা নাড়াতে সাহায্যকারী জুতো ব্যবহার করা হয়।