টেস্টিকুলার ক্যান্সার কি?
টেস্টিক্যাল (অন্ডকোষ) হলো পুরুষদের জননাঙ্গ, যা স্পার্ম বা শুক্রাণু উৎপাদন করে এবং টেস্টোস্টেরন নামক হরমোনটি ক্ষরণ করে। টেস্টিকুলার ক্যান্সার একটি বিরল ক্যান্সারের ধরণ এবং এটি মূলত 15-45 বছর বয়সের পুরুষদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। প্রাথমিক ভাবে এটি অন্ডকোষের উপর একটি যন্ত্রণাহীন মাংসপিণ্ডরূপে উপস্থিত হয়। এই প্রকার ক্যান্সার সেরে যায় এবং চিকিৎসায় উচ্চ সাফল্যের হার দেখতে পাওয়া যায়।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
অন্ডকোষ অঞ্চলে চাপের পরিবর্তন ও স্ফীতির কারণে এবং অতিরিক্ত টেস্টোস্টেরন উৎপাদনের ফলে টেস্টিকুলার ক্যান্সারের উপসর্গগুলি দেখা দেয়। এগুলি হল:
- একটি বা দুটি টেস্টিক্যাল বা শুক্রাশয়েই মাংসপিন্ড অথবা ফোলাভাব সৃষ্টি হয়।
- অণ্ডকোষ ভারী হওয়ার অনুভূতি।
- অন্ডকোষে তরলের সঞ্চয়।
- অণ্ডকোষে ব্যথা বা অস্বস্তি।
- শ্রোণী অঞ্চলে হালকা ব্যথা।
- পিঠের তলভাগে যন্ত্রণা।
- স্তনে সংবেদনশীলতা বা তা পরিবর্ধিত হওয়া।
এর কারণগুলি কি কি?
টেস্টিকুলার ক্যান্সারের নিশ্চিত কোন কারণ পরিষ্কারভাবে জানা যায় না, কিন্তু একাধিক প্রবণতা বা ঝুঁকির উপাদান আছে যাদের উপস্থিতি একজন ব্যক্তির মধ্যে এই রোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। এই উপাদানগুলি হল:
- টেস্টিক্যালের অস্বাভাবিক বিকাশ – ক্লাইনফেলটার’স সিনড্রোম নামক জিনগত রোগে যেরকম শুক্রাশয়ের অস্বাভাবিক বা ক্ষীণ বিকাশ দেখতে পাওয়া যায় সেরকমভাবে শুক্রাশয়ের বিকাশ ঘটলে এই ক্যান্সার হয়ে থাকতে পারে।
- অনবতীর্ণ শুক্রাশয় (ক্রিপ্টরকিডিজম) – ভ্রূণাবস্থায়, শুক্রাশয় তলপেট থেকে অণ্ডকোষের অবস্থানে নেমে আসে, কিন্তু কিছুক্ষেত্রে, এটি ঘটে না, এবং শুক্রাশয় তলপেটেই থেকে যায়।
- বংশগতভাবে শুক্রাশয়ের ক্যান্সারের দীর্ঘ ইতিহাস থাকলে।
- বয়স – 15-45 বছর বয়সসীমার পুরুষদের মধ্যে শুক্রাশয়ের ক্যান্সারের প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
কিভাবে এটি নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
যথাযথ চিকিৎসাগত ইতিহাস সংগ্রহ, ও তার সাথে শারীরিক পরীক্ষা টেস্টিকুলার ক্যান্সার নির্ণয়ে সাহায্য করে, তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য এবং উপযুক্ত চিকিৎসাপদ্ধতি নির্বাচনের জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট পরীক্ষা করা অবশ্য প্রয়োজনীয়। এই পরীক্ষাগুলি হল:
- রক্ত পরীক্ষা – আলফা-ফেটোপ্রোটিন, বিটা এইচসিজি এবং ল্যাকটেট ডিহাইড্রোজেনেসের মত টিউমার চিহ্নিতকারীরা শুক্রাশয়ের ক্যান্সার নির্ণয়ে সাহায্য করে।
- সোনোগ্রাফি – অন্ডকোষ অঞ্চলের আলট্রাসোনোগ্রাফির মাধ্যমে ক্যান্সারের বিস্তৃতি ও মাংসপিন্ডটির প্রকৃতি নির্ধারণে সাহায্য করে।
- সিটি স্ক্যান – এই পরীক্ষাটি সাধারণত রোগীর শরীরে ক্যান্সারের বিস্তৃতি জানতে সাহায্য করে।
- হিস্টোপ্যাথলজি – টিউমারের মাংসপিন্ডটি অপসারণের পর, সেটি মাইক্রোস্কোপের তলায় পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সারের প্রকৃতি জানা যায়।
ক্যান্সারের প্রকৃতি ও পর্যায়ের উপর নির্ভর করে এর চিকিৎসা পদ্ধতি নির্বাচন করা হয়। কিছুক্ষেত্রে, রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং নিজস্ব পছন্দও চিকিৎসাপদ্ধতি নির্বাচনে প্রভাব ফেলে। এই রোগের বিভিন্ন চিকিৎসাগুলি হল:
- অস্ত্রোপচার (অর্কিডেক্টমি) – এর আদর্শ চিকিৎসা হল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আক্রান্ত শুক্রাশয় এবং লসিকা গ্রন্থির (লোকো-রিজিওনাল নোড) অপসারণ। এই প্রক্রিয়া সাধারণত ক্যান্সার নির্মূল করে।
- রেডিয়েশন থেরাপি – এই প্রক্রিয়ায় উচ্চ শক্তির এক্স-রে রশ্মির সাহায্যে ক্যান্সার কোষগুলিকে ধ্বংস করা হয়, কিন্তু রেডিয়েশন থেরাপির একাধিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে এবং এটি শুধুমাত্র কয়েকটি নির্দিষ্ট প্রকৃতির ক্যান্সারের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়।
- কেমোথেরাপি – কেমোথেরাপির ওষুধগুলি ক্যান্সার কোষগুলিকে নষ্ট করতে সাহায্য করে। প্রায়শই অস্ত্রোপচারের পর অবশিষ্ট ক্যান্সার কোষগুলি ধ্বংস করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এটিরও একাধিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে।