গলায় অবস্থিত একটি ছোটো অঙ্গ থাইরয়েড গ্রন্থি থাইরয়েড হরমোন ক্ষরণ করে আর শরীরের হোমিওস্ট্যাটিস বজায় রাখার জন্য দায়ী। এই হরমোনগুলির মাত্রায় কোনওরকম অসামঞ্জস্যতার কারণে শরীরের বিভিন্ন কার্যপ্রণালীতে ত্রুটি দেখা দিতে পারে। থাইরয়েড রোগ খুবই সাধারণ ব্যাপার এবং পুরুষদের তুলনায় মহিলারাই বেশি আক্রান্ত হন। থাইরয়েডের প্রধান দুটি সমস্যা হল - হাইপারথাইরয়েডিজম এবং হাইপোথাইরয়েডিজম। হাইপারথাইরয়েডিজম অত্যধিক মাত্রায় থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত, অন্যদিকে এই হরমোনের মাত্রাল্পতাকে হাইপোথাইরইয়েডিজম বলে। থাইরয়েড ক্যান্সার থাইরয়েড গ্রন্থির আরেকটি গভীর সমস্যা এবং পৃথিবীতে সবচেয়ে সাধারণ এন্ডোক্রাইন ক্যান্সার। এর অন্তর্নিহিত কারণগুলি স্পষ্ট এবং রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিত করা যেতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাভাবিক কার্যকলাপ পুনরুদ্ধারে সহায়ক হতে পারে। জীবনশৈলীর সুব্যবস্থাপণার মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়োডিন সমৃদ্ধ সুষম খাদ্যগ্রহণ এবং মানসিক চাপের মোকাবিলায় ধ্যান ও যোগব্যায়ামের অনুশীলন। এর সঙ্গে নিয়মিত চেকআপ এবং এন্ডোক্রাইনোলজিস্টের কাছে পরামর্শ নেওয়া থাইরয়েডের সমস্যার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
থাইরয়েডের সমস্যাগুলি কি কি?
থাইরয়েড গ্রন্থি একধরণের এন্ডোক্রাইন বা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি, যা দুই ধরণের হরমোন উৎপাদন করে - ট্রাইআয়োডোথাইরোনিন (টি3) এবং থাইরক্সিন (টি4)। এই হরমোনের উৎপাদন এবং ক্ষরণকে অ্যান্টেরিয়র পিটুইটারিতে উৎপন্ন থাইরয়েড-স্টিমুলেটিং হরমোন (টিএসএইচ) নিয়ন্ত্রণ করে, যা পরবর্তীকালে থাইরয়েড রিলিজিং হরমোন বা টিআরএইচের মাধ্যমে সক্রিয় হয়। এই হরমোনগুলি শরীরের মূল বিপাক ক্রিয়ার জন্য দায়ী। অনুপযুক্ত উদ্দীপনার কারণে থাইরয়েড গ্রন্থি যখন অত্যধিক অথবা অপর্যাপ্ত পরিমাণে হরমোন উৎপাদন করে, তখন থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা অটোইমিউন রোগ অথবা থাইরয়েড গ্রন্থিতে ক্যান্সারযুক্ত বা ক্যান্সারবিহীন উপস্থিতি আর নাহলে এই গ্রন্থির প্রদাহের কারণে হতে পারে। সারাবিশ্বে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে থাইরয়েড সমস্যা বেশি দেখা যায়, 0.5 শতাংশ পুরুষদের তুলনায় প্রায় 5 শতাংশ মহিলা এই সমস্যায় আক্রান্ত। থাইরয়েডের সব সমস্যাই শেষ পর্যন্ত থাইরয়েড হরমোনের অত্যধিক অথবা স্বল্প ক্ষরণের রূপ নেয়, আর তা শরীরের প্রায় প্রত্যেকটি কোষকে প্রভাবিত করে।