প্রস্রাব অসংযম (প্রস্রাব ধারণে অক্ষমতা) কাকে বলে?
মূত্রস্থলী বা প্রস্রাবের উপর নিয়ন্ত্রণ কমে যাওয়ার ফলে অনভিপ্রেত ভাবে প্রস্রাব হয়ে যাওয়ার সমস্যাকে বলে প্রস্রাবে অসংযম বা প্রস্রাব ধারণে অক্ষমতা। এটি মূলত বয়স্কদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়, বিশেষত মহিলাদের মধ্যে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রস্রাব অসংযম ঘটার সম্ভাবনাও বাড়তে থাকে। মূত্রথলির স্ফিঙ্কটার পেশীগুলি দুর্বল হয়ে যাওয়ার ফলে মূত্রের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে অক্ষম হয়ে পড়লে এই সমস্যাটির সৃষ্টি হয়। এটি বিভিন্ন প্রকৃতির হতে পারে, যেমন স্ট্রেস, আর্জ, ওভারফ্লো, মিক্সড, ফাংশন এবং সম্পূর্ণ অসংযম।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি?
এই রোগের সবথেকে পরিচিত কয়েকটি লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি হল:
- ঘনঘন প্রস্রাব পাওয়া।
- বিছানায় প্রস্রাব হয়ে যাওয়া।
- তলপেটে চাপের অনুভূতি।
- জোরে হাসি বা কাশির সময় প্রস্রাব বেরিয়ে আসা।
- ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব।
- সম্পূর্ণভাবে প্রস্রাব না হওয়ার অনুভূতি।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
প্রস্রাব অসংযম বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন:
- মূত্রথলির আস্তরণের প্রদাহ।
- স্ট্রোক।
- প্রস্টেট জড়িত থাকলে।
- কিডনি বা মূত্রথলিতে পাথর হওয়া।
- কোষ্ঠকাঠিন্য।
- টিউমার যেটি মূত্রথলিতে চাপ সৃষ্টি করে।
- মদ্যপান।
- মূত্রনালির সংক্রমণ বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউ.টি.আই)।
- উত্তেজনা প্রশমনের ওষুধ।
- ঘুমের ওষুধ।
- পেশী শিথিল করার ওষুধ।
- ভারী বস্তু বহন।
- মাল্টিপল সক্লেরোসিস জাতীয় স্নায়ুরোগ।
- অস্ত্রোপচার বা আঘাতের ফলে মূত্রথলি নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুগুলির ক্ষতি।
- অবসাদ (ডিপ্রেশন) বা উদ্বেগ (এংজাইটি)।
কিভাবে এটি নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
রোগীর বিস্তারিত ইতিহাস সংগ্রহের পর চিকিৎসক শরীরে উপস্থিত যেকোন সম্ভাব্য অস্বাভাবিকত্ব খুঁজতে শারীরিক পরীক্ষা করে থাকেন। যে পরীক্ষাগুলি করা হয় তার কয়েকটি নিচে দেওয়া হল:
- ইউরিন্যালিসিস – মাইক্রোস্কোপিক এবং কালচার।
- পোস্ট ভয়েড রেসিডিউয়াল টেস্ট (পিভিআর) – প্রস্রাবের পর মূত্রথলিতে অবশিষ্ট মূত্রের পরিমাণ জানতে সাহায্য করে।
- অটোইমিউন এন্টিবডি এবং ইত্যাদি খুঁজতে রক্ত পরীক্ষা।
- সিস্টোগ্রাম – এটি একপ্রকার এক্স-রে যা মূত্রথলির উপর করা হয়।
- পেলভিক আল্ট্রাসাউন্ড।
- ইউরোডায়নামিক টেস্টিং – মূত্রথলি ও তার স্ফিঙ্কটার পেশিগুলি কতটা চাপ সহ্য করতে পারে সেটি এই পরীক্ষার সাহায্যে নির্ণয় করা হয়।
- সিস্টোস্কোপি।
রোগটি নির্ণয়ের পরে এর চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকে, যেমন :
- প্রস্রাব সংগ্রহ করার জন্য ইউরিন ড্রেনেজ ব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে।
- প্যাড, প্যান্টি লাইনার, অ্যাডাল্ট ডায়পার প্রভৃতি পণ্য ব্যবহার করা যেতে পারে যেগুলি তরল শোষণ করে নেয়।
- প্রস্রাব চুঁইয়ে বেরোনোর ফলে ত্বকে সৃষ্ট লালভাব ও ফুসকুড়ি কমানোর জন্য অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ক্লেনসার ব্যবহার করা হয়।
- ইন্টারমিটেন্ট ক্যাথেটারাইজেশন – মূত্রনালির মধ্যে দিয়ে ক্যাথেটার প্রবেশ করিয়ে মূত্র সংগ্রহ করা হয়। ক্যাথেটার হল একটি নমনীয় নালী যা মূত্রথলিতে প্রবেশ করানো হয়। এগুলি লেটেক্স দিয়ে তৈরি হয় এবং এর উপর টেফ্লন বা সিলিকনের আবরণ থাকে। ক্যাথেটার প্রবেশ করানোর পর একটি বেলুন ফুলিয়ে দেওয়া হয় যাতে ক্যাথেটারটি খুলে না যায়।
- পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গে কন্ডোম বা টেক্সাস ক্যাথেটার প্রভৃতি বহিঃস্থ সংগ্রাহক ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়।
- টয়লেটের বিকল্প হিসেবে বেডসাইড কমোড বা কমোড সিট, বেড প্যান ও ইউরিনাল ব্যবহার করা যেতে পারে।
- কেগেল এক্সারসাইজ জাতীয় শ্রোর্ণীপেশীর ব্যায়াম এই সমস্যায় সাহায্য করতে পারে।
- টাইমড ভয়েডিং – এই প্রক্রিয়ায়, একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর রোগীকে প্রস্রাব করানো হয় যা মূত্রথলির নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- বায়োফিডব্যাক – এর মাধ্যমে রোগী নিজের দেহসংকেত সম্পর্কে সচেতন হতে শেখে। এই প্রক্রিয়াটি মূত্রথলি ও মূত্রনালির পেশীর উপর রোগীর নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
- কফি, মদ ও তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া উচিত।