অ্যাক্রোমেগালি কাকে বলে?
অ্যাক্রোমেগালি শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ “অ্যাক্রোন” যার অর্থ চূড়ান্ত এবং “মিগাল” যার অর্থ বৃহৎ। এটি এমন একটি রোগ যেখানে হাত পা অতিরিক্ত বড় হয়ে যায়, যার কারণ হল শরীরে গ্রোথ হরমোনের অতিরিক্ত ক্ষরণ।
এটি সাধারণত মধ্য-বয়স্ক মানুষদের মধ্যে বেশী দেখা যায় এবং দীর্ঘদিন বিনা চিকিৎসায় রোগটি থেকে যেতে পারে। অ্যাক্রোমেগালি সাধারণত একটি বিরল রোগ, কিন্তু সময়মতো চিকিৎসা না করালে সমস্যা জটিল আকার নিতে পারে।
এর প্রধান লক্ষণ আর উপসর্গগুলি কি কি?
সাধারণ উপসর্গ
- এটির একটি উল্লেখযোগ্য উপসর্গ হল হাত, পা, মাথার খুলি আর মুখের হাড়ের মাপ সাধারণের থেকে বড় হওয়া। আংটি অথবা জুতো পড়তে অসুবিধা হলে তখন ব্যাপার টি নজরে আসে।
- চোয়ালের হাড় বেড়ে যায় এই রোগে, এর ফলে চোয়ালের অংশটা বেশী বড় লাগে মুখের বাকি অংশের অনুপাতে।
অন্যান্য উপসর্গ
- স্বরনালী বড় হয়ে যাওয়ার ফলে গলার স্বর কর্কশ হয়ে যায়।
- চামড়া আলগা, মোটা আর তৈলাক্ত হয়ে যায়।
- মাংস পেশীর দুর্বলতা এবং বিষন্নতা দেখা দেয় তার সঙ্গে গাঁটে ব্যাথা আর শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়।
- মহিলাদের অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দেখা দেয়, আর পুরুষদের ক্ষেত্রে ইরেক্টিল ডিসফাংশন দেখা যায়।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
- হরমোনের অসামঞ্জস্য
খাদ্যাভ্যাস, দুশ্চিন্তা, জীবন শৈলীতে পরিবর্তন, অথবা সঠিকভাবে ঘুম না হওয়া ইত্যাদি কারণে শরীরে বিভিন্ন হরমোনের অসামঞ্জস্য বা ইনসুলিন জাতীয় গ্রোথ হরমোন (আই জি এফ) -এর অসামঞ্জস্য হলে অ্যাক্রোমেগালি হয়।
- পিটুইটারিতে টিউমার
পিটুইটারিতে টিউমার, যাকে এডেনোমা বলে, সেটা হলে গ্রোথ হরমোন-এর অত্যাধিক ক্ষরণ হয়, যার ফলে অনেক সময় অ্যাক্রোমেগালি হয়ে থাকে।
- নন-পিটুইনারি বা অন্যান্য টিউমার
শরীরের অন্য গুরুত্বপুর্ন অঙ্গে যেমন মস্তিষ্ক, ফুসফুস, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি বা অগ্ন্যাশয়ে টিউমার হলেও গ্রোথ হরমোন এর ক্ষরণ বেড়ে যেতে পারে যার ফলস্বরূপ অ্যাক্রোমেগালি হয়ে থাকে।
এর রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা কিভাবে সম্ভব?
অ্যাক্রোমেগালিতে যেহেতু ধারাবাহিক উপসর্গ দেখা যায়, অনেক সময় তাই রোগ নির্ণয় সম্ভব হয় না, ফলস্বরূ্প বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি হয়। এই রোগ নির্ণয়ের জন্য যে সব পদ্ধতি অবলম্বন করা যায় সেগুলি হল:
- রক্ত পরীক্ষা
একবার পরিক্ষা করে জি এইচ এবং আই জি এফ-১ এর স্তর জানা যায় না। তাই এগুলি বারবার করতে হয়। গ্রোথ হরমোন সাপ্রেশন টেস্ট বা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে রোগ নির্ণয় সম্ভব।
- ইমেজিং অথবা প্রতিবিম্বকরণ
এক্স-রে স্ক্যান সব থেকে ভাল উপায় হাড়ের গঠনগত পরিবর্তন জানার জন্য। একটি চৌম্বকীয় অনুরণন দ্বারা প্রতিবিম্বকরণ (এম আর আই) অথবা কম্পিউটারাইজড টোমোগ্রাফি (সিটি স্ক্যান) করলে টিউমারের সঠিক আয়তন আর অবস্থান নির্ণয় সম্ভব।
গ্রোথ হরমনকে নিয়ন্ত্রণ করা, টিউমারের আয়তন ছোট করা এবং তার আনুষঙ্গিক উপসর্গগুলি নিয়ন্ত্রণ করা হল এই চিকিৎসা উদ্দ্যেশ্য। আক্রান্ত ব্যাক্তির আক্রান্ত হবার কারণ, উপসর্গ, রোগীর বয়স এবং জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা পদ্ধতি ঠিক করা হয়।
- খাবার ওষুধ
যে হরমোনটি এই রোগের জন্য বিশেষভাবে দায়ী, সেটি চিহ্নিত করার পর আপনার এন্ডোক্রনোলজিস্ট (হরমোন গ্রন্থি আর সেই সংক্রান্ত অসুখ বিশারদ) আপনার ওষুধ ঠিক করেন আপনার জি এইচ ও আই জি এফ-১ এর স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। এই সব ওষুধের পার্শপ্রতিক্রিয়া হিসাবে বমি বমি ভাব , বমি আর ডাইরিয়া বা পেট খারাপ দেখা দিতে পারে।
- সার্জারি
যাদের টিউমার আছে তাদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে পরবর্তিকালে পিটুইটারি গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া আর হরমোন নিঃসরণে সমস্যা হতে পারে।
- রেডিয়েশন বা বিকিরণ
সার্জারি করার পরেও কারও কারও ক্ষেত্রে টিউমার পুরোপুরি নাও যেতে পারে। তখন এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় জি এইচ স্তর নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। রেডিয়েশন পদ্ধতি অনেক মাস ধরে চলতে পারে। ফলে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যেমন, দৃষ্টিগত সমস্যা বা মস্তিষ্কে ক্ষত দেখা দিতে পারে।
সময়ে সঠিক চিকিৎসা করালে অ্যাক্রোমেগালির বিভিন্ন জটিলতা যেমন ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন বা ঘুমের অ্যাপনিয়া সমস্যা এড়ানো যায়।