বেড ওয়েটিং (বিছানা ভেজানো) কি?
বেড ওয়েটিং, সমস্যাটি রাত্রিবেলা ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব হয়ে যাওয়া বা বিছানা ভেজানো হিসেবেও পরিচিত। এটি ঘুমের মধ্যে প্রস্রাবের একটি অনিচ্ছাকৃত পুনরাবৃত্তিমূলক ধরণ I এই সমস্যা সাধারণত, প্রায় 5 থেকে 7 বছর বয়সের পর আর হয় না। সারা বিশ্বের স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাদের মধ্যেই এই সমস্যাটা দেখা যায়। যদিও বাচ্চাদের এবং কিশোরদের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করে ফেলাটা সাধারণ ব্যাপার। তবে, ভারতে এই ধরণের সমস্যার কথা খুব একটা শোনা যায় না। গোটা বিশ্বে এই ধরণের সমস্যার হার 1.4 - 28 শতাংশ আর ভারতে এর প্রভাব 7.61 - 16.3 শতাংশ।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো কি কি?
সাধারণত, শিশুরা 5 বছর বয়সের মধ্যেই টয়লেট ব্যবহার করতে শিখে যায়। তবে, মূত্রথলির ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ আয়ত্ত করার কোনও নির্দিষ্ট বয়স নেই। কিছু কিছু বাচ্চা 5 থেকে 7 বছর বয়সের মধ্যে এই সমস্যায় পড়তে পারে। তবে যেসব উপসর্গ এবং লক্ষণের ক্ষেত্রে অবিলম্বে চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে, সেগুলো হল:
- 7 বছর বয়সের পরেও বাচ্চা বিছানায় প্রস্রাব করলে।
- রাত্রে বিছানায় কয়েক মাস প্রস্রাব করা বন্ধ থাকার পর আবার শুরু।
- ঘুমের মধ্যে বিছানা ভিজিয়ে ফেলার পাশাপাশি প্রস্রাবের সময় যন্ত্রণা অনুভব, প্রস্রাবের রঙ গোলাপি বা লাল, অত্যধিক তৃষ্ণা, মল শক্ত বের হওয়া অথবা নাক ডাকা।
এর প্রধান কারণ কি?
এর সঠিক কারণ নিয়ে এখনো কোনো নিশ্চিত তথ্য নেই, কিন্তু নিম্নলিখিত ব্যাপারগুলি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে:
- ছোটো মূত্রথলি: মূত্রাশয় সম্পূর্ণরূপে বিকশিত হয়নিI
- মূত্রথলি ভরে উঠেছে, তা বুঝে উঠতে না পারা: মূত্রথলি ভরে উঠলেও, সংশ্লিষ্ট শিশুটিকে তার মূত্রথলি জাগিয়ে তুলতে পারে না, কারণ মূত্রথলিকে যে স্নায়ুগুলি নিয়ন্ত্রণ করে, সেগুলি স্বাভাবিক গতিতে পূর্ণতা লাভ করতে পারেনিI
- হরমোনজনিত ভারসাম্যহীনতা: কিছু মানুষের অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোন (এডিএইচ) কম থাকতে পারে, যার ফলে রাতে প্রস্রাব কম মাত্রায় তৈরি হয়।
- মূত্রনালীর সংক্রমণ: সংক্রমণের কারণে শিশুর প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে অসুবিধা হতে পারে। (আরও পড়ুন: ইউটিআই চিকিৎসা)
- স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যাঘাত: ঘুমের সময় শ্বাস নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি হতে পারে টনসিল অথবা অ্যাডিনয়েডের প্রদাহজনিত সমস্যা অথবা ফুলে উঠলে।
- ডায়াবেটিস: সাধারণত, আপনার সন্তানের শরীর যদি রাতে শুকিয়ে ওঠে, তাহলে বিছানায় ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব করা ডায়াবেটিসের প্রথম লক্ষণ হতে পারে।
- দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য: দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য মাংসপেশীর কার্যকারিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যেগুলি উভয় প্রস্রাব এবং মলত্যাগকে নিয়ন্ত্রণ করে।
- মানসিক চাপ: ভয়-প্ররোচিত মানসিক চাপ বিছানায় প্রস্রাব করার কারণ হতে পারেI
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
চিকিৎসক সন্তানের প্রস্রাবের রুটিনের ওপর নজর রাখার জন্য আপনাকে পরামর্শ দিতে পারেন এবং প্রয়োজনে ডায়েরিতে লিখে রাখা দরকার হতে পারে।
উল্লেখ্য বিষয়গুলি হল:
- কতবার প্রস্রাব হচ্ছে
- মলত্যাগ কতবার হচ্ছে এবং তার ধারাবাহিকতা
- শুতে যাওয়ার সময় তরল সেবন করা
যে পরীক্ষাগুলো চিকিৎসার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে:
- মূত্রের ধরণ এবং বিশ্লেষণ: সংক্রমণ, ডায়াবেটিস, মূত্রে রক্তের বা অন্য কোন পদার্থের থাকার নমুনা পরীক্ষা করা।
- রক্ত পরীক্ষা: অ্যানিমিয়া, ডায়াবেটিস, কিডনি সমস্যা এবং অন্যান্য অবস্থার জন্য পরীক্ষা করা।
- মূত্রাশয়ের আল্ট্রাসাউন্ড: প্রস্রাবের পরে মূত্রাশয়তে কতটা পরিমাণ প্রস্রাব থাকছে, তা জানার জন্য পরীক্ষা।
- ইউরোডাইনামিক পরীক্ষা: প্রস্রাব কিভাবে জমা হচ্ছে এবং বের হচ্ছে, তা পরীক্ষা করে দেখা হয় এর মাধ্যমে।
- সিস্টোস্কপি: মূত্রাশয়ে ক্যামেরা প্রবেশ করিয়ে দেখা হয়, মূত্রাশয় কিরকম অবস্থায় রয়েছে।
বিছানায় প্রস্রাব করা খুব একটা বড় সমস্যা নয়, কারণ এটি একটি শিশুর বেড়ে ওঠার পর্যায়কে নির্দেশ করে। তবে, এর ফলে শিশুরা বিব্রত এবং আত্মসম্মানহানি বোধ করতে পারে। বাবা-মায়েরাও এই পরিস্থিতির সংশোধন করতে নিজেকে অসহায় বোধ করতে পারেন।
এই ধরণের পরিস্থিতি যেভাবে সামলাতে হয়:
- বাবা-মা এবং শিশুকে বিছানায় প্রস্রাব করার ব্যাপারটি নিয়ে বোঝানো এবং তাদের আশ্বস্ত করা যে এটি নিরাময় করা যেতে পারে।
- ডাক্তার এডিএইচের অনুরূপ ওষুধ দিতে পারেন, যা এডিএইচের মতোই কাজ করে এবং চাপমুক্ত করতে পারে, এর কাজ মূত্রাশয়কে শিথিল করা।
নন-ড্রাগ পদ্ধতি: কোনো ব্যক্তি যে ধরনের পণ্য কিনতে পারেন
- নিষ্পত্তিযোগ্য বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য শোষক অন্তর্বাস প্যান্টI
- ময়শ্চার অ্যালার্মের ব্যবহার, বাচ্চা রাত্রিবেলা বিছানায় প্রস্রাব করলে আপনা থেকেই তা জানান দেবে।
নিজে যত্ন নেওয়ার টিপস:
- দিনের বেলা আপনার সন্তানের পানীয় গ্রহণের পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা করুন এবং সন্ধ্যার পর থেকে, তা সীমাবদ্ধ করুন।
- ঘুমোতে যাওয়ার আগে প্রস্রাব সেরে নেওয়ার ব্যাপারে সন্তানকে প্রশিক্ষণ দিন।
- প্রতিবারই আপনার সন্তানকে উৎসাহিত করুন যাতে সে স্বস্তিবোধ করে এবং আত্মবিশ্বাস পায়।
- এমনকি আপনার সন্তান যদি বিছানায় প্রস্রাব করেও ফেলে, তবুও তাকে বকাঝকা করবেন না বা শাস্তি দেবেন না, তাহলে আসল উদ্দেশ্যটাই বিফল হয়ে যাবে।
- বিছানার চাদর পরিষ্কার করার সময় আপনাকে সাহায্য করার জন্য সন্তানকে উৎসাহিত করুন, যাতে সে স্বস্তিবোধ করে।