সেলিয়াক রোগ কি?
সেলিয়াক রোগ এক ধরণের জিনগত অটোইমিউন ব্যাধি যাতে পাচনতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাই, গম ও বার্লিতে প্রধানত গ্লুটেন নামক একটি প্রোটিন থাকে, সেলিয়াক রোগে, রোগীর দেহে এই গ্লুটেনকে ধ্বংস করার জন্য প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। ফলে রোগী গ্লুটেনযুক্ত খাবার খেলে, পাচনতন্ত্রের সমস্যা শুরু হয়ে যায় পাচকগ্রন্থির প্রদাহের কারণে। ফলে, হজমের সমস্যা শুরু হয়, যা গুরুতর আকারও নিতে পারে। পরবর্তীকালে এর থেকে শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দেয়।
সেলিয়াক রোগের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গুলি কি কি?
এই রোগের কারণে অন্ত্রে যে সমস্যা তৈরি হয় তা সাধারণভাবেই প্রত্যক্ষ করা যায়, তবে, শিশু ও প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষের দেহে লক্ষণগুলি কিছুটা আলাদা রকম হতে পারে। সেলিয়াক রোগের কিছু লক্ষণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ডায়রিয়া বা পেট খারাপ
- পেট ফাঁপা
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- বমি
- ফ্যাকাশে, পাতলা, ভাসমান ধরণের মল ত্যাগ
- বদহজম
- অম্বল
- অম্বলের কারণে গলা জ্বালা
পাচনতন্ত্রের উপসর্গগুলি ছাড়া আর যে যে উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়:
- রক্তাল্পতা অর্থাৎ অ্যানিমিয়া এবং ওজন হ্রাস
- হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া
- ত্বকের চুলকানি ও তার সঙ্গে ব়্যাশ বা ফুসকুড়ি ওঠা (আরও পড়ুন: ত্বকের ব়্যাশের চিকিৎসা)
- দাঁতের সাদা রঙ অথবা এনামেল নষ্ট হয়ে যাওয়া
- মাথাযন্ত্রণা
- মুখের ঘা
সেলিয়াক রোগের প্রধান কারণগুলি কি কি?
এই রোগ জিনগত কারণে হয়, পরিবেশগত কারণে, এবং রোগ প্রতিরোধকজনিত কিছু কারণ, খাদ্যে গ্লুটেন উপস্থিত থাকলে যা রোগপ্রতিরোধকমূলক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এছাড়া, টাইপ 1 ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগ, আলসারের কারণে মলাশয়ে প্রদাহ, থাইরয়েড রোগ, মৃগী এবং ক্রোমোজম ঘটিত অসুখ ডাউন্স সিন্ড্রোমের মতো রোগের ফলস্রুতিতে সেলিয়াক রোগ দেখা দিতে পারে।
সেলিয়াক অসুখ কিভাবে নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
সেলিয়াক রোগের লক্ষণ প্রায়ই বদলাতে থাকে; আর সেই কারণে মাত্র 20 শতাংশ রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পরে। সেলিয়াক রোগ হয়েছে কিনা তা জানার জন্য পরিবারের চিকিৎসাগত ইতিহাস, রোগীর চিকিৎসাগত ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করা হয়, সেই সঙ্গে রোগীর খাদ্য তালিকা দেখা হয়, এছাড়াও, রক্ত পরীক্ষা এবং বায়োপসি করেও দেখা হতে পারে। দুরকমের রক্ত পরীক্ষা করা হয়ঃ প্রথমটি হলো সেরোলজিকাল টেস্ট যার ফলে জানা যায় গ্লুটেনকে বিনষ্ট করার জন্য শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি আছে কি না। আর দ্বিতীয় হলো হিউম্যান লিউকোসাইট অ্যান্টিজেন (এইচএলএ)-এর জন্য জেনেটিক টেস্ট। ক্ষুদান্ত্রে যেসব ছোটো ছোটো শোষক নল থাকে তার পরিকাঠামোগত কোনও ক্ষতি হয়েছে কিনা তা জানার জন্য অন্ত্রের বায়োপসি করা হয়। তবে, এইসব পরীক্ষায় সঠিক এবং ঠিকমতো ফলাফল যাতে আসে তার জন্য এই সময় গ্লুটেন জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে বলা হয়। এই ধরণের অসুখে পরবর্তীকালে শারীরিক পরীক্ষা বছরে একবার এবং তা আজীবন চালিয়ে যেতে হয়।
এই রোগ থেকে একেবারে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো গ্লুটেন নেই এমন খাবার খেতে হবে, এমনকি গ্লুটেনের উপস্থিতি আছে এমন কোনও ওষুধ, সাপ্লিমেন্ট বা সম্পূরক খাদ্য এবং পানীয় গ্রহণ করা যাবে না। একজন ভালো পুষ্টিবিদের পরামর্শে খাদ্যতালিকায় গ্লুটেনমুক্ত খাবার যেমন নিশ্চিত করতে হবে, তেমনই এটাও দেখতে হবে শরীরে যেন প্রয়োজনীয় প্রোটিনের ঘাটতি না হয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়া অন্ত্র সেরে উঠতে শুরু করে, ক্ষুদ্রান্তে অবস্থিত শোষক নলও আবার তৈরি হয়ে যায় কয়েক মাসের মধ্যে। অন্ত্র পুনরায় আগের মতো হয়ে এলে প্রদাহ দূর হয় এবং উপসর্গগুলিও আর দেখা দেয় না। খাবার ও পানীয় গ্রহণের সময় শতর্ক থাকতে হবে। প্যাকেটের গায়ে দেখে নিতে হয় গ্লুটেনের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির ব্যাপারটি। সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে তবেই তা কিনতে হয়। স্টার্চযুক্ত বা গ্লুটেনবিহীন কিছু খাদ্য, শস্য:
- ভুট্টা, নটেশাক, পেশাই করা ভুট্টা বা কর্নমিল, চাল,বাজরা, সাবু দানা ও অ্যারারুট।
- তাজা মাংস, মাছ, পোল্ট্রি জাতীয় খাবার, বেশিরভাগ দুগ্ধজাতীয় খাদ্য ও শাকসব্জি।