সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারী ডিজিজ) কি?
সিওপিডি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারী ডিজিজ হলো ফুসফুসের তীব্র প্রদাহজনক রোগ যার ফলে ফুসফুসে ঠিকমতো বায়ু-পরিবাহিত হতে পারে না। সারা বিশ্বে, মৃত্যুহার এবং রোগ উপসর্গের একটি অন্যতম প্রধান কারণ হল সিওপিডি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাবলুএইচও) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারা বিশ্বে 65 মিলিয়ন মানুষ সিওপিডি রোগে মাঝারি থেকে গুরুতর রকমভাবে আক্রান্ত। তথ্য অনুসারে ভারতে 2%-22% পুরুষ ও 1.2%-19% মহিলা সিওপিডির শিকার।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
প্রাথমিক অবস্থায়, সিওপিডি হয়েছে কি না তা বুঝতে পারা সহজ হয় না কারণ উপসর্গগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত অন্যান্য সমস্যার মতোই মনে হয়। সিওপিডি-র সাধারণ উপসর্গগুলি হল:
- শ্বাস নিতে অসুবিধা
- কাশি
- অত্যাধিক শ্লেষ্মা ক্ষরণ
- শ্বাস নেবার সময় বুকে সাঁইসাঁই শব্দ হওয়া
- বুকে চাপ অনুভব
- ঠোঁট অথবা হাতের নখের রঙ নীলচে হয়ে যাওয়া
- ক্লান্তি
- অকারণে ওজন হ্রাস
- পায়ের নীচের দিকে ইডিমা বা শোথ
সিওপিডি হল ফুসফুসের তিনটি প্রগতিশীল সমস্যা – দীর্ঘস্থায়ী ব্রংকাইটিস, এমফিসেমা, এবং স্থায়ীভাবে শ্বাসকষ্ট। কোনো ব্যক্তির দীর্ঘস্থায়ী ব্রংকাইটিস হলে তার উপসর্গগুলি হবে একনাগাড়ে কাশি আর তার সঙ্গে শ্লেষ্মা ক্ষরণ। এফিসেমার ক্ষেত্রে, অ্যালভিওলাই (ফুসফুসের মধ্যে থাকা ছোটো ছোটো বায়ুথলি) আক্রান্ত হয় এবং বিভিন্ন বায়বীয় অস্বস্তিকারক পদার্থের কারণে ধবংস হয়ে যায়, যেমন, সিগারেটের ধোঁয়া।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
সিওপিডির ঝুঁকির বিষয়গুলি ও কারণগুলি হল ধূমপান, জৈব জ্বালানি অথবা ঘরবাড়িতে উৎপন্ন ধোঁয়ার সংস্পর্শে আসা। অন্যান্য ঝুঁকির কারণগুলি হল হৃদযন্ত্রের সমস্যা, বুকজ্বালা, বিষণ্ণতা অথবা ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগের মতো একাধিক মারাত্মক সমস্যা। পরোক্ষ ধূমপান ও বিরল জিনঘটিত সমস্যার কারণে শরীরে যদি আলফা-1 এর ঘাটতি হয়, তা থেকে সিওপিডি হতে পারে। হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট থাকলে তা সিওপিডির সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
এটি কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
সিওপিডি নির্ণয় করতে নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি করা হয়:
- ফুসফুসের কার্যকারিতা পরীক্ষা: ফুসফুসের কার্যক্ষমতা জানার জন্য।
- বুকের এক্স-রে: ফুসফুসের অন্য কোনও সমস্যা আছে কি না সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে।
- ধমনীর মধ্যে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহের বিশ্লেষণ।
- পরীক্ষাগারের পরীক্ষাগুলি।
সিওপিডি রোগীর চিকিৎসার জন্য সাধারণত গোল্ড গাইডলাইনস ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসার অন্তর্গত হল:
- প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
- ধূমপান ত্যাগ করা এবং যতটা সম্ভব ধোঁয়া ও শ্বাসযন্ত্রের অস্বস্তি বাড়ানো পদার্থ এড়িয়ে চলা।
- ওষুধপত্র:
- ব্রঙ্কোডিলেটরস।
- নিঃশ্বাসের মাধ্যমে স্টেরোয়েড নেওয়া।
- একাধিক ইনহেলার ব্যবহার করা।
- ফসফোডিয়েস্টেরেস-4 ইনহিবিটরস।
- অ্যান্টিবায়োটিকস।
- ওষুধপত্রের ব্যবহার ছাড়া চিকিৎসা:
- অক্সিজেন থেরাপি।
- ফুসফুস পুনর্ক্ষম করার প্রক্রিয়া।
- অস্ত্রোপচার:
- ফুসফুসের আয়তন কমানোর অস্ত্রোপচার।
- ফুসফুস প্রতিস্থাপন।
- বুলেকটমি।
সিওপিডি রোগের ক্ষেত্রে সঠিক পদক্ষেপ হলো রোগ প্রতিরোধ এবং রোগের বৃদ্ধি রোধ করা।
এই রোগ কখনও সম্পূর্ণ সারে না। কিন্তু, সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করলে, সিওপিডি আক্রান্ত ব্যক্তিও সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে পারেন।
(আরও পড়ুন: ফুসফুসের সংক্রমণের চিকিৎসা)