চোখের অ্যালার্জি কি?
চোখের অ্যালার্জির ফলে চোখে ফোলাভাব এবং চোখ লাল হয়ে যায় যার কারণস্বরূপ চোখে প্রদাহ বা জ্বালাভাবকে দায়ী করা যায় ও এর কারণ হল অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদানের সংস্পর্শে আসা যেমন ধুলো,ফুলের রেণু, গুঁড়া মাটি প্রভৃতি। এইগুলিকে বলা হয় অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান। অ্যাজমা, হে ফিভার, ত্বকে অ্যালার্জি (যেমন- এগজিমা, প্রভৃতি), প্রভৃতি। চোখের অ্যালার্জি শিশু এবং কিশোরদের মধ্যে বেশী দেখা যায়।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
রক্তে হিস্টামাইন নামক রাসয়নিকের নিঃসরণ এবং অ্যালার্জির সংস্পর্শে আসার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ চোখে অ্যালার্জি হয়। উপসর্গগুলি অনেকদিন পর্যন্ত থাকতে পারে অথবা আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে পুনরায় হতে পারে এবং এটি ছোঁয়াচে নয়।
- চোখে অত্যধিক চুলকানি।
- চোখে লালচে ভাব। (আরও পড়ুন: লাল হয়ে যাওয়া চোখের চিকিৎসা)
- চোখ জ্বালা করা সাথে চোখে জল পড়া।
- উজ্জ্বল আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা বা সহ্য করতে না পারা।
- বন্ধ নাক বা নাক থেকে জল পড়া, হাঁচি, মাথা ব্যাথা, কাশি প্রভৃতি হয় যখন শ্বাসযন্ত্রে অ্যালার্জি দেখা দেয়।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
চোখ যখন অ্যালার্জি্র সংস্পর্শে আসে তখন রোগ প্রতিরোধক প্রক্রিয়া প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে অ্যালার্জিগুলি থেকে নিষ্কৃতি পেতে। বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জেনস বা অ্যালার্জিগুলি গুলি হল:
- ধূলিকণা।
- ফুলের রেণু।
- বায়ু দূষণ, ধোঁয়া ইত্যাদি।
- পোষ্যের লোম, রাগ বা হামলা ইত্যাদি।
- ছত্রাক বা গুঁড়া মাটি।
- শক্তিশালী সুগন্ধী, রং ইত্যাদি।
- খাবার সংরক্ষণন।
- পোকামাকড়ের কামড়।
- বিরল ক্ষেত্রে, চোখের গুরুতর অ্যালার্জি যেমন ভারনাল কনজাঙ্কটিভাইটিস হলে চোখের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হতে পারে, বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে।
চোখের অ্যালার্জি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে ডাক্তার চোখের অ্যলার্জি নির্ণয় করেন:
- উপসর্গের ইতিহাস।
- স্লিট ল্যাম্প ব্যবহার করে চোখের পরীক্ষা।
- রক্তের আইজিইর (IgE) মাত্রা পরীক্ষা।
- ত্বকের অ্যালার্জি পরীক্ষা।
- চোখ থেকে নির্গত পদার্থে বা পিঁচুটিতে শ্বেত রক্তকণিকার অস্তিত্ব সনাক্ত করার জন্য মাইক্রোস্কোপের নীচে তা পরীক্ষা করা হয়।
চোখের অ্যালার্জির চিকিৎসা পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত হল:
- নিজের যত্নের উপায়গুলি।
- অ্যালার্জির কারণগুলি এড়িয়ে চলা।
- চোখ ঘষা এড়িয়ে চলা।
- চোখ লাল এবং চুলকালে কনটাক্ট লেন্স ব্যবহার না করা।
- ধুলো থেকে চোখকে রক্ষা করতে ঝড় বা হাওয়া বইলে সানগ্লাস ব্যবহার করা।
- বাড়ির ভিতরে আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে রাখা কারণ এটি ছত্রাক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- দূষণ, ধুলো,ধোঁয়া ইত্যাদি এড়িয়ে চলা।
- মাইট বা অতি ক্ষুদ্র পরজীবী কীটের কারণে চোখের অ্যালার্জি থেকে বাঁচতে প্রতিদিন বিছানাপত্র পরিষ্কার করা।
- পোষ্যের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়িয়ে চলা।
- অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে চোখ ধুয়ে নিতে হবে যাতে অ্যালার্জেন বা অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থ পরিষ্কার হয়ে যায়।
- চোখের অ্যালার্জি চিকিৎসার জন্য ডাক্তার সাধারণত কিছু ওষুধের পরামর্শ দেন।
- অ্যান্টি-হিস্টামাইনস নামক ট্যাবলেট এবং চোখের ড্রপ সাহায্য করে চোখের চুলকানি এবং জ্বালাভাব কমাতে।
- মাস্ট সেল স্টেবিলাইজার ওষুধ চোখে অ্যালার্জির জ্বালাভাব কমাতে সাহায্য করে।
- ডিকনজেসট্যান্ট চোখের ড্রপ চোখের লালচেভাব এবং ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।
- কৃত্রিম চোখের জলের ড্রপ চোখকে আর্দ্র রাখতে এবং চোখ থেকে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থ বের করতে সাহায্য করে।
- কর্টিকোস্টেরয়েড চোখের ড্রপ চোখে গুরুতর জ্বালা নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।
- ইমিউনথেরাপি ইনজেকশনগুলি নির্দিষ্ট অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বাড়ায় এবং পরবর্তীকালে চোখের অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে।