জেসটেশনাল ডায়াবেটিস কি?
জেসটেশনাল ডায়াবেটিস হলো এমন এক অবস্থা, যা প্রতি 100 জ্ন গর্ভবতী মহিলার মধ্যে 7 জনের হয়ে থাকে। যেসব মহিলাদের ব্লাড সুগার বা রক্তে শর্করার মাত্র আগে থেকেই স্বাভাবিক, গর্ভাবস্থার সময় কখনও সখনও তাঁদের মধ্যে গ্লুকোজ সহ্য করতে না পারার সমস্যা চলে আসে। গর্ভাবস্থার কারণে হরমোনের পরিবর্তনের জন্য অনেক মহিলারই হাই ব্লাড সুগার বা রক্তে শর্করার উচ্চ-মাত্রার সমস্যা দেখা দেয়।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গ কি কি?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, জেসটেশনাল ডায়াবেটিসের সঙ্গে কোনও উপসর্গেরই যোগ থাকে না। পরিবর্তন এতো সূক্ষ্ম ভাবে হয় যে অনেক মহিলাই বুঝতেই পারেন না যে সেটা অস্বাভাবিক। আর, এই সময় শরীরও অনেক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় যা স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় সাধারণ ব্যাপার। তাও, আপনার চিন্তিত হওয়া উচিত যদি আপনি এই লক্ষণগুলো দেখেন:
- প্রস্রাব করার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি
- খুবই অস্বাভাবিক তৃষ্ণার অনুভূতি
- সংক্রমণ যা বারবার হতে থাকে আর খুব সহজে সারানো যায় না
- ক্লান্তি
- বমি বমি ভাব
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
মাঝেমাঝে, মহিলাদের ডায়াবেটিস ধরা পড়ে না আর তা তাদের গর্ভাবস্থায় সময় গিয়ে নজরে আসে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, এটি হয় হরমোনাল পরিবর্তনের জন্য, যা ব্লাড সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। প্লাসেন্টা, যা বিকশিত হতে থাকা ভ্রূণকে পুষ্টি দেয়, সেটাও মহিলাদের শরীরে একাধিক হরমোনের সংমিশ্রন উৎপাদন করে। স্বাভাবিকভাবে এই হরমোনগুলি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যেসব মহিলার আগে থেকেই ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে, তাঁদের আরও বেশি ঝুঁকি চলে আসে জেসটেশনাল ডায়াবেটিস হওয়ার। যেসব মহিলাদের ওজন বেশি, আগে থেকে ডায়াবেটিস আছে, পরিবারে মধুমেহ রোগের ইতিহাস আছে, হাইপারটেনশন অথবা থাইরয়েড ব্যাধি এবং অন্যান্য সমস্যা আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়েছে।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
গর্ভাবস্থার সময় আপনার ব্লাড সুগার মাত্রা মাপা হবে প্রসবস্থার আগে ও প্রসূতি থাকাকালীন চেক-আপের অঙ্গ হিসেবে। এর জন্য একটি মাত্রা পরীক্ষা করাও হতে পারে। আপানকে মিষ্টিজাতীয় পানীয় গ্রহণ করতে বলা হবে আর আপনার রক্তে সুগারের মাত্রা পরীক্ষা করা হবে। একে আবার ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট (ওজিটিটি) বলা হয়। বিকল্প ক্ষেত্রে, একাধিকবার রক্তের নমুনা নেওয়া হয়, আর যদি ব্লাড সুগারের মাত্রা বেশি হয়, তাহলে নির্দিষ্ট ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট করা হয়।
চিকিৎসার লক্ষ্য হলো, রক্তে শর্কার বা গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। আর তা করা যেতে পারে খাওয়া-দাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম করে। শুধুমাত্র খাদ্য তালিকায় বদল এনে ফল পাওয়া না গেলে, ডাক্তার মেটফর্মিন অথবা ইনসুলিনের মতো ওষুধ দিতে পারেন। গর্ভাবস্থায় সময় এবং এমনকি প্রসবের পরও রক্তে শর্কার মাত্রার নিবিড় ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ জরুরি।