শুক্রাণুর সংখ্যা কম হওয়া - Low Sperm Count in Bengali

প্রজনন-অনুর্বরতা একজন ব্যক্তির পিতা হওয়ার পথের প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা। এটি একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা যা বিশ্বের অনেক দম্পতিকে প্রভাবিত করছে। স্ত্রী অথবা পুরুষ অথবা দুজনই এই অবস্থার কারণ হতে পারেন। পুরুষদের প্রজনন-অনুর্বরতার উৎস কোন বংশগত কারণ অথবা প্রাকৃতিক কারণ যাতে শুক্রাণুর গঠনে এবং কাজে ত্রুটি রয়েছে। এগুলি ঠিক করা যেতে পারে অথবা স্থায়ীও হতে পারে। অন্তত এক বছর ধরে অসুরক্ষিত যৌন সঙ্গমের পরও যদি একটি দম্পতী সন্তান ধারণে অসমর্থ হন, তাহলে ডাক্তারবাবুরা তাদের অনুর্বর বলে নির্ণয় করেন। পরীক্ষা করে দেখা হয় সমস্যাটি কার, পুরুষের নাকি স্ত্রীর, নাকি দুজনেরই। 20-30% পুরুষদের বীর্যের ত্রুটির কারণে শুক্রাণুর সংখ্যা কম হয়। এর অন্তর্নিহিত কারণ জানার জন্য ডাক্তারবাবু রোগীর জীবনধারা, অভ্যাস এবং পেশার বিস্তারিত ইতিহাসের পর্যালোচনা করেন। যখন নির্ণীত হয় যে একজন ব্যক্তির শুক্রাণুর সংখ্যা কম, তখন সমস্যাটিকে ডাক্তারবাবুর সঠিক নির্দেশিকা মেনে চিকিৎসা করা যেতে পারে। এই নির্দেশিকাতে থাকে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস, কিছু পূর্ব-সতর্কতা, খাদ্যের সাথে পুষ্টি সংযোজন এবং প্রয়োজন হলে ওষুধ।

কম শুক্রাণু সংখ্যাকে এই ভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় যে পরীক্ষার তরলে (বীর্য) পাওয়া শুক্রাণুর সংখ্যা প্রয়োজনীয় গড় শুক্রাণু সংখ্যার চেয়ে কম থাকে। একজন পুরুষ প্রজনন সক্ষম কিনা (তিনি পিতা হতে পারবেন কিনা) তা নির্ণয় করার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামিতি। সাধারণ গড় শুক্রাণু সংখ্যা হল  প্রতি নমুনায় 15-39 মিলিয়ান। কম শুক্রাণু সংখ্যা হল নমুনাতে 15 মিলিয়ানের চেয়ে কম শুক্রাণু।

সাধারণত এর কোন লক্ষণ থাকে না। তবে কিছু কিছু ব্যক্তির নিচে দেওয়া লক্ষণগুলি থাকতে পারে:

• অন্তত এক বছর ধরে অসুরক্ষিত যৌন সঙ্গমের পরও সন্তান ধারণে অসমর্থ হন।
• একজন ব্যক্তির যৌন ইচ্ছে কম হতে পারে।
• যৌনাঙ্গে ফোলা থাকতে পারে।

অন্তর্নিহিত কারণের উপরে কম শুক্রানু থাকার চিকিৎসা নির্ভর করে। যদি অন্তর্নিহিত কারণটি চিকিৎসার যোগ্য হয়, তাহলে কম শুক্রাণুর চিকিৎসা হতে পারে। এই চিকিৎসার সাথে জড়িত:

• বিস্তারিত ইতিহাস
  ​নিম্ন লিখিত বিষয়গুলি জানার জন্য এটি সাহায্য করবে
  • অসুস্থতার পদ্ধতিগত চিকিৎসা (যেমন, ডায়াবেটিস (মধুমেহ) মেলিটাস এবং আপার রেসপিরেটারি অসুখ)।
  • অতীতে কোন শল্য চিকিৎসা হয়েছিল কিনা।
  • যৌন-বাহিত সংক্রমণ সহ যৌন ইতিহাস।
  • তাপমাত্রা, কোন বিষাক্ত বস্তু বা কীটনাশকের সংস্পর্শে আসা।
  • পেশাগত ইতিহাস যা কাজের সময় কোন কিছুর সংস্পর্শে আসা।
     
• পরামর্শ দেওয়া
  আপনার অবস্থার কথা আপনার ডাক্তারবাবু সব চেয়ে ভাল করে বুঝিয়ে বলতে পারবেন। আপনার সমস্যা এবং ব্যক্তিগত ইতিহাস ডাক্তারবাবুকে বলতে দ্বিধা করবেন না। তাহলে রোগের কারণ খুঁজে বার করা এবং তার চিকিৎসা সহজ হবে। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই যে আপনার ডাক্তারবাবু আপনার মানসিক চাপ, যা কিনা শুক্রাণুর সংখ্যা কম হওয়ার কারণ হতে পারে, তার মোকাবেলা করতে সাহায্য করবেন।
   
• উচ্চ তাপ, বিকিরণ এবং বিষাক্ত বস্তুর সংস্পর্শ পরিত্যাগ করলে শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।
   
• Taking ভারী ধাতুর কারখানায় কাজ করার সময় এবং কীটনাশক ব্যবহারের সময় সঠিক যত্ন এবং সুরক্ষার ব্যবস্থা করবেন।
   
• ধূমপান এবং তামাক চিবানো পরিত্যাগ করলে উপকার পাবেন।
   
• মদ্যপান পরিত্যাগ করুন। এটা প্রমাণীত যে মদ শুক্রাণুর বিকাশকে প্রতিহত করে।
   
• সঠিক ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য, ব্যায়াম এবং খাদ্যে পুষ্টি সংযোজন স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ করে এবং তা শুক্রাণুর সংখ্যা কম হওয়ার সমস্যার মোকাবিলা করবে।
   
• যদি শুক্রনালীর শিরা-ঘটিত টিউমার শুক্রাণুর সংখ্যা কম হওয়ার কারণ হয় তাহলে শল্য চিকিৎসা এর সমাধান করবে।
   
• জেনেটিক ত্রুটির ক্ষেত্রে সঠিক মূল্যায়ন এবং অসুখের উপর নির্ভর করে বীর্য নিষ্কাসনের বিকল্প পদ্ধতি সাহায্যকারী হতে পারে।
   
• শুক্রাণুর সংখ্যা কম হওয়ার কারণ যদি আপনার নেওয়া কোন ওষুধ হয়, তাহলে আপনার ডাক্তারবাবু সেই ওষুধের মাত্রা কম বা বন্ধ করে দিতে পারেন।

জীবনধারার ব্যবস্থাপনা

শুক্রাণুর সংখ্যা কম হলে জীবনধারার পরিবর্তন আপনাকে সাহায্য করতে পারে। এইগুলি অন্তর্ভুক্ত হল:

• স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাদ্যের সাথে সাথে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যে পুষ্টি সংযোজন করা।
   
• চাপ ধ্বংসকারী কার্যকলাপে অংশ নিয়ে চাপ-মুক্ত থাকুন। যেমন ধ্যান, গভীর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং যোগ।
   
• দৈনিক কার্যকলাপের সাথে রোজ 30-45 মিনিট ব্যায়াম করা।
   
• ধূমপান ত্যাগ করা এবং মাত্রারিক্ত মদ্যপান না করা।
   
• ধূমপান পরিত্যাগ করা।.
   
• অত্যধিক গরম জালে স্নান না করা।