নিউট্রোপেনিয়া কি?
নিউট্রোপেনিয়া এমন একটি রোগ যার ফলে রক্তে নিউট্রোফিলের মাত্রা কমে যায়। নিউট্রোফিল অস্থিমজ্জাতে গঠিত শ্বেত রক্ত কণিকাবিশেষ, যা আমাদের শরীরকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে ও জীবাণুর সাথে লড়াই করে। রক্তে নিউট্রোফিলের মাত্রা যদি মাইক্রোলিটার প্রতি 1500-এর নিচে নেমে যায়, তাহলে সেই ব্যক্তি নিউট্রোপেনিক বলে বিবেচিত হবেন।
নিউট্রোপেনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি হয়।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
নিউট্রোপেনিয়ার কোন বিশেষ উপসর্গ থাকে না। এটি সাধারণত সনাক্ত করা যায় যখন সংক্রমণ ঘটে। সংক্রমণের ক্ষেত্রে সাধারণত যেসব উপসর্গগুলি দেখা যায় সেগুলি হল:
- ক্লান্তি।
- প্রচণ্ড জ্বর।
- শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া।
- পেটে ব্যথা।
- পাতলা পায়খানা।
- ফুসকুড়ি।
- কাশি, শ্বাসকষ্ট।
- গলা ব্যথা।
- মুত্রত্যাগে ব্যথা অনুভূতি।
- উন্মুক্ত ক্ষতস্থানের চারপাশে লালচে ভাব।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
ক্যান্সার থেরাপি নিউট্রোপেনিয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত কেমোথেরাপি (ওষুধ দ্বারা) রেডিওথেরাপি (রেডিয়েশনের মাধ্যমে) এবং বায়োথেরাপি (জীবন্ত উদ্ভিজ্জ পদার্থের দ্বারা)। এই থেরাপিগুলি দ্রুত বেড়ে ওঠা ক্যান্সার কোষ এবং স্বাভাবিক কোষ উভয়কে ধ্বংস করে কারণ তারা দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:
- ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণ।
- অস্থিমজ্জার রোগ যেমন অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া।
- লিম্ফোমা ও লিউকেমিয়ার মতো টিউমার।
- প্লীহা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়া।
- রিউমেটয়েড আর্থারাইটিস, হাইপারথাইরয়েডিসম ও লুপাসের মতো অটোইমিউন।রোগগুলি।
- হাইপারথাইরয়েডিসমের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ।
- ভিটামিন B12 এর ঘাটতি।
- এইচআইভি সংক্রমণ।
- অঙ্গ প্রতিস্থাপন।
এটি কিভাবে নির্ণয় করা হয় ও এর চিকিৎসা কি?
রক্তে নিউট্রোফিলের মাত্রা নির্ণয় করার জন্য আপনার ডাক্তার রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ দেবেন। নিউট্রোপেনিয়ার কারণটি যদি স্পষ্ট না হয়, তবে আপনার ডাক্তার অস্থিমজ্জার পরীক্ষা করতে দেবেন অস্থিমজ্জায় কোনও রোগ আছে কিনা তা জানার জন্য।
নিউট্রোপেনিয়ার চিকিৎসা নির্ভর করে এর কারণের উপর ভিত্তি করে। সংক্রমণের ক্ষেত্রে, অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। কেমোথেরাপিতে, নিউট্রোফিলের পরিমাণ সাধারণত চিকিৎসার প্রথম 2 সপ্তাহে কমে যায় এবং তা স্বাভাবিক পর্যায় আসে 3 অথবা 4 সপ্তাহকালে। যদি এটি স্বাভাবিক অবস্থায় না আসে, এর বৃদ্ধি ঘটাতে থেরাপি দিতে হয়, যা অস্থিমজ্জায় শ্বেত রক্ত কণিকা উৎপাদনকে উদ্দীপিত করবে। এটি একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা, যেটি সহজলভ্য নয়।