ব্রণ (পিম্পল) কি?
ব্রণ হল ত্বকের সাধারণ একটি সমস্যা, এর বৈশিষ্ট্য হল ক্ষত সৃষ্টি করা যা পিম্পল এবং ব্ল্যাকহেড বা হোয়াইটহেড নামেও পরিচিত যাতে খুব সাধারণত মুখ,কাঁধ, গলা, পিঠ এবং বুক আক্রান্ত হয়। এই সমস্যার কারণে স্থায়ী দাগ থেকে যেতে পারে ত্বকের উপরে এবং ত্বকের রুপ নষ্ট করে দেয় যদিও এটি স্বাস্থ্যের গুরুত্বর কোন ক্ষতি করে না। ব্রণ বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে এবং বিশেষত বয়ঃসন্ধিকালে দেখা যায়।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
যেসকল আকারে ব্রণ ত্বকে প্রকাশ পায় সেগুলি হল:
- হোয়াইটহেড বা ব্ল্যাকহেড বা ছোট ফোলাভাব (প্যাপুলস) সৃষ্টি।
- একটি ছোট ফুসকুড়ি (পাস্টুল) বা নীচের দিকে লালচে রঙের এরকম ব্রণ এবং যাতে পূঁয ভর্তি থাকে।
- যন্ত্রণাদায়ক ছোট গোলাকার পিন্ড (গুটি) যা ত্বকের গভীরে অবস্থিত এবং ক্ষতচিহ্নের সৃষ্টি করে।
- গর্ত বা সিস্ট যা মূলত পুঁজ দিয়ে ভর্তি থাকে এবং নিরাময় হয়ে ত্বকে ক্ষতচিহ্ন তৈরী করতে পারে।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
একাধিক কারণ রয়েছে ব্রণ হওয়ার জন্য, সেগুলি হল:
- পি.অ্যাকনেস ব্যাকটেরিয়ার দ্রুত বৃদ্ধি।
- পুরুষ (অ্যান্ড্রোজেন) এবং মহিলাদের (ইস্ট্রোজেন) শরীরে যৌন হরমোনের পরিবর্তন, ফলে লোমকূপে প্রদাহ তৈরী হয় এবং প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
- জন্মনিয়ন্ত্রক ওষুধের ব্যবহারের পরিবর্তন (শুরু করা বা বন্ধ করা) এবং গর্ভাবস্থার কারণে শরীরে হরমোনের পরিবর্তন হয়।
- পলিসিস্টিক ওভারিয়ান রোগ (পিসিওডি)।
- জীবনশৈলীগত কারণগুলি হল:
- স্থূলতা।
- মানসিক চাপ।
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা।
- শরীরচর্চার অভাব।
এটি কিভাবে নির্ণয় করা হয়?
- আক্রান্ত অংশের সম্পূর্ণ পরীক্ষা ব্রণ নির্ণয়ে সাহায্য করে। ব্রণ হওয়ার কারণ নির্ণয় করার জন্য নীচে উল্লেখিত পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়:
- রক্ত পরীক্ষা, পাশাপাশি পিসিওএস সনাক্ত করার জন্য আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যানের ব্যবহার।
ব্রণ নিরাময় করতে দীর্ঘ চিকিৎসা চালাতে হয় যেখানে সেরে উঠতে অনেক সময় লাগে এবং মূলত প্রয়োজন ঠিকমত ত্বকের যত্ন নেওয়া।
ব্রণ নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকর কিছু পদ্ধতি চিকিৎসক নির্ধারণ করেন, যেগুলি হল:
- অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার : যা সেবনের মাধ্যমে বা সাময়িকভাবে ( সরাসরি ত্বকে প্রয়োগ করা) প্রয়োগের দ্বারা ত্বকে প্রদাহের প্রভাব কমাতে এবং ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া কমাতে সাহায্য করে।
- স্যালিসিলিক অ্যাসিড এবং বেনজয়েল পারক্সাইডের সাময়িক প্রয়োগ হালকা ব্রণর চিকিৎসায় সাধারণত ব্যবহৃত হয়।
- আইসোট্রেটিনোইন ট্যাবলেট: গুরুতর ব্রণর ক্ষেত্রে এটির ব্যবহার সর্বাধিক ফলপ্রসু চিকিৎসা, লোমকূপকে উন্মুক্ত করতে এবং পুনরায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়া প্রতিরোধ করতে ব্যবহৃত হয়, যার ফলে তৈলাক্তভাব কম হয় এবং ত্বককে শীতলতা প্রদান করে।
- আলো বা বায়োফোটোনিক থেরাপি ব্যবহার করা হয় হালকা থেকে মাঝারি প্রদাহজনক ব্রণের চিকিৎসায়।
- হরমোন- নিয়ন্ত্রণ থেরাপি যেখানে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা লঘু থেকে লঘুতর থাকে এবং মহিলাদের ব্রণের চিকিৎসায় এন্ড্রোজেননাশক গর্ভনিরোধক ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে।
- সাময়িকভাবে বা সেবনের দ্বারা রেটিনোয়েডের ব্যবহার লোমকূপ উন্মুক্ত করতে এবং পাশাপাশি নতুন প্রতিবন্ধকতা দূর করার চিকিৎসায় ব্যবহার হয়।
- রেটিনয়েড সাথে বেনজয়েল পারক্সাইডের সংযোজিত থেরাপিও ব্যবহার করা যেতে পারে।
নিজের যত্ন নেওয়ার উপায়গুলি:
- হালকা ‘সাবান মুক্ত’ মুখে ব্যবহারের ক্লেনজার দিয়ে প্রতিদিন দুবার মুখ পরিষ্কার করা।
- মুখ পরিষ্কার করার জন্য পছন্দ করুন এমন ক্লেনজার যাতে রুক্ষ পদার্থ (ক্ষয়কারী ঘর্ষক) এবং অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয় নি।
- মুখ পরিষ্কার করার ক্লেনজারে পিএইচ মাত্রা সঠিক অনুপাতে থাকতে হবে।
- ত্বকের ক্ষুদ্র গর্ত (লোমকূপ) বন্ধ করে না এমন পরীক্ষিত এবং যাচাই করা দ্রব্য ব্যবহার করা উচিত।