পলিসাইথেমিয়া ভেরা কাকে বলে?
পলিসাইথেমিয়া ভেরা হল স্টেম সেল বা আদি কোষের ক্যান্সার, যা 50-70 বছর বয়সী ব্যক্তিদের আক্রমণ করে। রক্তকণিকার উৎপাদনের জন্য দায়ী স্টেম কোষের অনিয়ন্ত্রিত সংখ্যাবৃদ্ধির ফলে অত্যধিক পরিমাণে লোহিত রক্ত কণিকা, শ্বেত রক্ত কণিকা এবং প্লেটলেট বা অণুচক্রিকা তৈরি হয়, যা স্বভাবত কাজ করে না।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি?
প্রাথমিকভাবে ধীর গতিতে সূত্রপাত হওয়া রোগটির লক্ষণ মূলত দীর্ঘদিন ধরে চাপা থাকে। কণিকার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কারণে রক্তের গাঢ় হয়ে যায়। হাইপোভিস্কোসিটির এই উপসর্গের ফলে রক্ত প্রবাহে থকথকেভাব এবং ডেলা (থ্রম্বোসিস) তৈরি হয়। আর এই যুগ্মপ্রভাবে অক্সিজেন সরবরাহ দুর্বল হয়ে পড়ায় দেখা দেয়:
- মাথাব্যথা।
- মাথা ঝিমঝিম।
- মাথা ঘোরা।
- কানে শোঁ শোঁ শব্দ।
- দেখার সমস্যা।
- অন্ত্র অথবা মাড়ি থেকে রক্তপাত।
- ত্বকের চুলকানি, বিশেষত উষ্ণ জলের সংস্পর্শে।
প্লেটলেটের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং তাদের মণ্ড তৈরির হওয়ার ফলে রক্তবাহিকায় প্রচুর থ্রম্বি (রক্তের ডেলা) সৃষ্টি হয়। এর থেকে হাত ও পায়ের ত্বকে প্রচণ্ড যন্ত্রণা এবং নীলচে দাগ দেখা দেয়। এটি পলিসাইথেমিয়া ভেরার বিশিষ্ট উপসর্গ, একে এরিথ্রোমেলালজিয়া বলে। সেইসঙ্গে আক্রান্ত রোগীদের পেপটিক আলসার হওয়ার আশঙ্কা বেশি হয়। এর সঙ্গে প্লীহা ও যকৃতের প্রদাহ দেখা দিতে পারে।
এর প্রধান কারণ কি?
পলিসাইথেমিয়া ভেরার সঠিক কারণ এখনও পর্যন্ত স্পষ্টভাবে বোঝা যায়নি। তবে গবেষণা অনুযায়ী, এই রোগে আক্রান্ত 90% রোগীদের শরীরে জেএকে.2 জিনের বৈচিত্র রয়েছে, যা এই অবস্থার কারণ হতে পারে।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং এর চিকিৎসা করা হয়?
রক্তকণিকা এবং অঙ্গ প্রদাহের প্রতিষ্ঠিত মানদণ্ড অনুসারে এই রোগটি নির্ণয় করা হয়।
পলিসাইথেমিয়া ভেরা নির্ণয়ের আগেকার নিয়মাবলীতে হু সংশোধন এনেছে। তবে, এর নির্ণয় এখনও ব্লাড কাউন্ট বিবেচনা করে করা হয় এবং রক্ত পরীক্ষা, রক্তপাতের সময়, প্রোথ্রম্বিনের সময়, প্রোথ্রম্বিনের সক্রিয়তার সময় টাইম, রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা প্রভৃতি পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।
পলিসাইথেমিয়া ভেরার এখনও পর্যন্ত কোনও নিশ্চিত প্রতিকার নেই, তবে পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ সহ চিকিৎসা চালালে রোগটি প্রাণঘাতী নয়। এর চিকিৎসা হল উপসর্গগুলির উপশম ঘটানো। রোগীর শরীরে রক্তপাত ও রক্ত ডেলা পাকানোর ঘটনা কমানোই এর মূল লক্ষ্য। উদাহরণস্বরূপ- ফ্লেবোটমি, অর্থাৎ শিরা কেটে অতিরিক্ত রক্ত বের করে দেওয়ার প্রক্রিয়াটি এতে নিয়মিত ব্যবহৃত হয় রক্তকণিকার সঞ্চয় রোধ করার জন্য। এটির সহায়তার জন্য আয়রন সাপ্লিমেন্ট দেওয়া দরকার। কেমোথেরাপি এড়ানো যায়। এছাড়া, দেহের অন্যান্য অঙ্গগুলির কার্যকলাপ সারা জীবন পর্যবেক্ষণ করে যেতে হয়।