লালা গ্রন্থির সমস্যা কি?
লালা গ্রন্থি লালা উৎপাদন করে এবং তা মুখে ছড়িয়ে দেয়। মুখে অনেকগুলো ছোট ছোট গ্রন্থির মধ্যে তিনটে প্রধান লালা গ্রন্থি আছে। সেগুলো হল:
- প্যারোটিড গ্রন্থি – এটি গালে অবস্থিত কানের সামনের দিকে। এর নালীটি শেষ হয় ওপরের পেষক দাঁতের নিকটে।
- সাবম্যান্ডিবুলার গ্রন্থি – এই গ্রন্থিগুলো নীচের চোয়ালের তলদেশে অবস্থিত, যার নালীটি শেষ হয় সামনের দিকের নীচের পাটির দাঁতের পিছনের দিকে।
- সাবলিঙ্গুয়াল গ্রন্থি – এটি জিবের নীচে অবস্থিত এবং লালা নিঃসরণ করে মুখের নীচের তলে।
যখন এই গ্রন্থিগুলোর ক্ষতি হয় বা যথেষ্ট লালা উৎপাদন না করে, সেটি লালা গ্রন্থির সমস্যায় পরিণত হয়। এর মধ্যে অত্যাধিক, অপর্যাপ্ত বা সম্পূর্ণভাবে লালা উৎপাদনে অভাব দেখা যেতে পারে।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
লালা গ্রন্থির সমস্যা অন্যান্য গ্রন্থির কাজে বিঘ্ন ঘটায় এবং তার ফল হল নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি:
- মুখে বাজে স্বাদ।
- শুষ্ক মুখগহ্বর।
- মুখ খুলতে সমস্যা হওয়া।
- মুখে ব্যথা।
- মুখে বা ঘাড়ে অথবা জিবের নীচে ফোলাভাব।
- লালার উৎপাদনে অভাব।
- অত্যাধিক লালার উৎপাদন।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
লালা গ্রন্থির সমস্যা হতে পারে এই কারণগুলির জন্য:
- সিয়ালোলিথিয়াসিস- ক্যালসিয়ামের পাথর গঠিত হয়, যা এর নালীতে প্রতিরোধ সৃষ্টি করে এবং তার ফলে প্রদাহ সৃষ্টি হয়।
- সিয়ালাডেনিটিস- গ্রন্থিতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে যা এর নালীতে প্রতিরোধ সৃষ্টি করে।
- ভাইরাস যেমন ফ্লু ভাইরাস, কক্সস্যাকি ভাইরাস, মাম্পস, ইকোভাইরাস এবং সাইটোমেগালোভাইরাস হল সেইসকল ভাইরাস যেগুলো গ্রন্থিকে আক্রান্ত করে।
- জোগ্রেন’স সিন্ড্রোম।
- ক্যানসারযুক্ত বা ক্যানসারবিহীন টিউমার এই তিনটে গ্রন্থির মধ্যে যে কোন একটায় দেখা দিলে।
এটি কিভাবে নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
আপনার ডাক্তার আপনার মুখ খুব ভালোভাবে পরীক্ষা করবেন এবং তারপর এক্স-রে করবে্ন এটা সনাক্ত করার জন্য যে গ্রন্থির নালীতে কোন প্রতিবন্ধকতা আছে কি না। এমআরআই এবং সিটি স্ক্যান হয়তো জরুরী হতে পারে বিশদ তথ্য জানার জন্য। একজন মুখের শল্য চিকিৎসক হয়তো প্রভাবিত জায়গাটিকে অবশ করে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতাটি সরিয়ে দেবে লালার নালী থেকে। ডাক্তার বায়োপসি করতে পারেন আক্রান্ত গ্রন্থির যাতে অটোইমিউন রোগের ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করতে সাহায্য হয়।
যদি সমস্যাটি সৃষ্টি হয় কোন সিস্টেমিক বা প্রনালীবদ্ধ রোগের কারণে, তাহলে সেটার প্রথমে চিকিৎসা করা হয়। নন-ক্যানসারাস টিউমার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সরিয়ে দেওয়া হয়। ক্যানসারাস টিউমারের ক্ষেত্রে রেডিয়েশন থেরাপি দেওয়া হয় অস্ত্রোপচারের পর।