কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ কি?
কোন বাহ্যিক উৎস ছাড়াই একটি বা দুটি কানেই অস্বাভাবিক একপ্রকার ভোঁ ভোঁ শব্দ অথবা গুঞ্জনের আওয়াজ হওয়ার ঘটনাকে বলে কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ, এই উপসর্গটিকে ডাক্তারি পরিভাষায় টিনিটাস বলা হয়। এটি হতে পারে গর্জনের মতো শব্দ, বা টিকটিক অথবা হিসহিস শব্দ। এটি মৃদু অথবা জোরালো শব্দ হতে পারে। তবে, টিনিটাস কোন রোগ নয় এবং বহু ব্যক্তি প্রায়ই এই সমস্যায় পড়ে থাকেন।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
টিনিটাস নিজেই একটি উপসর্গ যা শ্রবণ ব্যবস্থায় অস্বাভাবিকত্বের ইঙ্গিত দেয়।
টিনিটাস বলতে সাধারণত একটি বা উভয় কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ শোনাকে বোঝানো হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি শব্দটিকে অন্য যেভাবে বর্ণনা করতে পারেন:
- গর্জন।
- হিসহিস শব্দ।
- শিসের শব্দ।
- অস্পষ্ট গুন গুন আওয়াজ।
কোন কোন ব্যক্তি এক্ষেত্রে কানে জোরালো শব্দ শোনার অভিযোগ করতে পারেন, আবার অল্প কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত মৃদু শব্দ হতে পারে। তবে, টিনিটাসে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে, শুনতে পাওয়া শব্দটি কখনোই বাহ্যিক উৎস থেকে আসেনা। এটি কয়েক মিনিট বা তার থেকেও বেশিক্ষণ ধরে শোনা যেতে পারে।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
টিনিটাস সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখতে পাওয়া যায়, এবং এটি পুরুষ ও মহিলা উভয়কেই আক্রান্ত করতে পারে। টিনিটাসের একাধিক কারণ থাকতে পারে:
- কানে সংক্রমণ।
- সাইনাসে সংক্রমণ।
- হরমোনের পরিবর্তন।
- থাইরয়েডের অস্বাভাবিকত্ব।
- কানে আঘাত।
- অবসাদ।
- খোল জমে কানের ফুটো বন্ধ হয়ে যাওয়া।
- নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ খাওয়া।
বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে, টিনিটাস শ্রবণশক্তি হারানোর প্রথম লক্ষণ হিসাবে দেখা দিতে পারে। যেসব ব্যক্তিরা
কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে যারা কাজ করেন, যেমন কারখানা বা গানবাজনার উৎসবের কর্মীরা, অল্প সময়ের জন্য টিনিটাসে ভুগতে পারেন অথবা অতিরিক্ত শব্দের ফলে সৃষ্ট শ্রবণ ক্ষমতার হ্রাস পাওয়ার সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী উপসর্গে ভুগতে পারেন।
টিনিটাস বিষণ্ণতা এবং অন্যান্য মানসিক অসুস্থতার উপসর্গরূপেও দেখা দিতে পারে।
অত্যন্ত সাধারণ এই সমস্যাটি কখনো কখনো কোন নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই হতে পারে।
কিভাবে এটি নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
টিনিটাস নির্ণয়ের জন্য বা এর কারণ নির্ধারণের জন্য, চিকিৎসক আক্রান্ত ব্যক্তির শ্রবণশক্তির পরীক্ষা করতে পারেন এবং আক্রান্ত ব্যক্তি কি প্রকারের শব্দ শুনতে পাচ্ছেন সেই সম্বন্ধে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। স্ক্যানিং এবং ইমেজিং পরীক্ষা, যেমন সিটি এবং এমআরআই, করা হতে পারে কোনরকম আঘাতের লক্ষণ খোঁজার জন্য। কানের মধ্যে বহিরাগত উপাদান আছে কিনা দেখার জন্য অটোস্কোপি নামক প্রক্রিয়ায় একটি যন্ত্রের সাহায্যে কানের ভিতর পরীক্ষা করা যেতে পারে।
সাধারণত, কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ নিজে থেকেই সেরে যায় এবং এর জন্য কোন বিশেষ চিকিৎসার দরকার পড়ে না। তবে এর পিছনে কোন নির্দিষ্ট কারণ থাকলে, সেটির চিকিৎসা করানোর প্রয়োজন হতে পারে।
রক্তবাহে আঘাতের চিকিৎসার জন্য এবং চাপের ফলে সৃষ্ট টিনিটাস কমানোর জন্য ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়ে গেলে, তার জন্য হিয়ারিং এইডস বা শ্রবণে সহায়ক যন্ত্রবিশেষ দেওয়া হতে পারে।