গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব কি?
গর্ভাবস্থায় যোনি থেকে সাদা অথবা দুধের মতো পাতলা, হাল্কা-গন্ধযুক্ত লিউকোরিয়া নামক স্রাব বের হতে দেখা যায়। একে স্বাভাবিক বলেই মনে করা হয়, যদিও এর পরিমাণ, পুনরাবৃত্তির হার এবং ধারাবাহিকতা ভিন্ন হতে পারে। যোনি স্রাবের বৃদ্ধি গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম এবং পুরো গর্ভাবস্থাতেই চলতে থাকে। গর্ভধারণের শেষ সপ্তাহগুলিতে স্রাবের মধ্যে মোটা শ্লেষ্মার অংশ দেখা যায়, যা প্রসব সংক্রান্ত ইঙ্গিত দেয়।
কখনও কখনও, যোনি থেকে অস্বাভাবিকভাবে স্রাব বের হতে পারে, যার রঙ ভিন্ন হতে পারে এবং অন্যান্য উপসর্গগুলির সঙ্গে দুর্গন্ধ থাকতে পারে। চিকিৎসকের কাছে এর চিকিৎসা করানো প্রয়োজন।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
স্বাভাবিক স্রাবের উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে:
- পাতলা অথবা গাঢ় শ্লেষ্মা।
- সাদা এবং দুধের মতো রঙ।
- হাল্কা গন্ধ।
- গর্ভাবস্থার শেষ দিকে রক্তের ছোপ।
সংক্রমিত অথবা অস্বাভাবিক স্রাবের উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে:
- রঙ বদলে যাওয়া, যা হলুদ, সবুজ বা ধূসর রঙের হতে পারে।
- গন্ধ, যা বিশ্রী এবং কড়া হতে পারে।
- যোনিতে লালচেভাব অথবা চুলকানি।
- যোনিদ্বার ফুলে যাওয়া।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
স্বাভাবিক যোনি স্রাবের প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- হরমোনের মাত্রা এবং জরায়ু গ্রীবায় পরিবর্তন (শিশুকে বাইরে বের হওয়ার পথ করে দিতে)।
- সংক্রমণ প্রতিরোধের সাহায্য দৈহিক পরিবর্তন।
- শিশুর মাথা জরায়ু গ্রীবায় চাপ দেয় (গর্ভাবস্থার শেষ)।
অস্বাভাবিক স্রাবের কারণগুলি হতে পারে:
- সংক্রমণ, সাধারণত ইস্টের সংক্রমণ।
- যৌন সংক্রামিত রোগ (এসটিডি)।
- গর্ভাবস্থা সংক্রান্ত জটিলতা, যেমন - প্ল্যাসেন্টা প্রিভিয়া বা প্ল্যাসেন্টাল অ্যাবরাপশন।
- বাহ্যিক উপাদানের অংশ থেকে যাওয়া (ট্যাম্পন, কন্ডোম) অথবা প্রদাহ (জীবাণুনাশক, ডিওডোরেন্ট অথবা লুব্রিকেন্টের কারণে)।
- সার্ভিকাল এক্টোপি বা পলিপ।
- টিউমার।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
চিকিৎসক যৌন সংক্রান্ত ও চিকিৎসাজনিত তথ্য সহ বিস্তারিত ইতিহাস জেনে নেবেন এবং স্পেকুলাম, অ্যাবডমিনাল পালপেশন ও বাইম্যানুয়াল পরীক্ষার মাধ্যমে যোনি এবং জরায়ু গ্রীবার সম্পূর্ণ পরীক্ষাও করবেন। আরও কিছু টেস্ট করানোরও পরামর্শ দেওয়া হতে পারে:
- যোনি স্রাবের পিএইচ পরীক্ষা।
- হাই ভ্যাজাইনাল সোয়্যাব (এইচভিএস)।
- ক্লামাইডিয়া, গনোরিয়া এবং ট্রাইকোমোনিয়াসিসের জন্য ট্রিপল এনএএটি (নিউক্লেয়িক অ্যাসিড অ্যামপ্লিফিকেশন টেস্ট)।
- ক্লাইমাইডিয়া স্ক্রিনিং।
- এসটিডির জন্য স্ক্রিনিং।
যোনি স্রাবের ব্যবস্থাপনায় প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার উপায়ের মধ্যে রয়েছে:
- আরামদায়ক, ঢিলেঢালা সুতির অন্তর্বাস ব্যবহার করে এবং যৌনাঙ্গের অংশ শুকনো রেখে সংক্রমণ এড়ানোর চেষ্টা করা যায়।
- যোনির স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে খাদ্য়তালিকায় দই এবং অন্যান্য ফারমেন্টেড ফুড বা গাঁজিয়ে তৈরি করা খাবার রাখুন।
-
সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য, যোনির মলম বা সাপোজিটরি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়, যার মধ্যে থাকতে পারে:
- ফ্লুকোনাজোল।
- ক্লট্রিমাজোল।
- মেট্রোনাইডাজোল।
- ক্লিন্ডামাইসিন 2% ক্রিম।
- ইট্রাকোনাজোল।