ভিটামিন কে-এর অভাব কি?
ভিটামিন কে হলো ফ্যাটে দ্রবণীয় ভিটামিন, অর্থাৎ এই রকমের ভিটামিন মানব শরীরে শোষণের জন্য ফ্যাটের দরকার পড়ে। ভিটামিন কে দু’টি রূপে বিদ্যমান – ভিটামিন কে1 (ফাইলোকুইনন), যার উৎস হলো উদ্ভিদ এবং কে2 (মেনাকুইনন), যা প্রাকৃতিকভাবে অন্ত্রের মধ্যে সংশ্লেষিত হয়। ফাইলোকুইনন ভিটামিন কে-এর প্রধান খাদ্য উৎস এবং পালংশাক, ব্রোকোলি ও বাঁধাকপির মতো সবুজ পাতাওয়ালা সব্জিতে পাওয়া যায়। আর মেনাকুইনন সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু পশুজাত খাদ্য এবং ফারমেন্টেড বা গাঁজানো খাদ্যবস্তু থেকে পাওয়া যায়। গাঁজানোর জন্য দায়ী ব্যাক্টেরিয়াই মূলত এটি উৎপাদন করে এবং অধিকাংশ ব্যক্তির ক্ষেত্রেই শরীরের অন্ত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি হয়।
ভিটামিন কে শরীরে গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন তৈরি করে, যা রক্তপাত নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী। ভিটামিন কে-এর অভাব হলো এমন একটি অবস্থা যাতে শরীর এই রকমের গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন তৈরিতে অক্ষম হয়ে পড়ে, যা রক্তপাতের ঝুঁকি হিসেবে দেখা দেয়।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গ কি?
নিচে তালিকাভুক্ত কিছু লক্ষণ ও উপসর্গ এই ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়:
- অত্যধিক রক্তপাত।
- সহজে কালশিটে পড়া।
- নখের তলার চামড়ায় রক্তপাত।
- পাচননালীর যেকোনও স্থান থেকে রক্তপাত।
- ফ্যাকাসেভাব ও দুর্বলতা।
- গাঢ় রঙয়ের মল অথবা রক্ত পায়খানা।
- প্রস্রাবে রক্ত।
- হাড় দুর্বল।
- ফুসকুড়ি।
- দ্রুত হৃদস্পন্দন।
এর প্রধান কারণ কি?
ভিটামিন কে-এর অভাব যে কোনও বয়সে হতে পারে, কিন্তু সদ্যোজাতদের মধ্যে এর ঝুঁকি বেশি। ভিটামিন কে-এর ঘাটতির অন্যান্য কারণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:
- অপুষ্টি।
- লিভারের রোগ।
- অপর্যাপ্ত খাদ্যগ্রহণ।
- ফ্যাটের শোষণে দুর্বলতা।
- সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত এবং অ্যান্টিকোয়াগুলেন্ট ওষুধ।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
ভিটামিন কে-এর অভাব চিহ্নিত করতে রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত ইতিহাস জেনে নেওয়া হয়। রক্তপাতের সময় চিহ্নিত করার জন্য কোয়াগুলেশন টেস্ট করা হয়। ভিটামিন কে-এর ঘাটতির প্রভাবের মূল্যায়ন করার জন্য অন্যান্য পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে প্রোথ্রম্বিন টাইম, ব্লিডিং টাইম, ক্লটিং টাইম এবং অ্যাক্টিভেটেড পার্শিয়াল প্রোথ্রম্বিন টাইম।
চিকিৎসা পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত:
- ভিটামিন কে সম্পূরক খাওয়ার ওষুধ অথবা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ।
- ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাদ্যগ্রহণ, যেমন – সবুজ পাতাওয়ালা সব্জি, সর্ষে, বাঁধাকপি, ব্রোকোলি।