ডাবের জলের উপকারীতা, ক্যালরি, ব্যবহার, পুষ্টি-গত তথ্য, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া - Coconut Water Benefits, Calories, Uses, Nutrition facts, Side effects in Bengali

জল এবং খনিজ সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে ডাবের জল শরীরের কার্যত হারিয়ে খনিজ এবং তরল পদার্থকে পুনরায় পূর্ণ করতে পারে। শারীরিক পরিশ্রমের পরে এখন এটি বিকল্প প্রাকৃতিক পানীয় হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ডাবের জল, একটি শ্বেতসার-খনিজ সমৃদ্ধ পানীয় এবং বিশুদ্ধ জলের তুলনা মূলক একটি পরীক্ষাতে পাওয়া গেল যে ডাবের জলের স্বাদ অন্যগুলির তুলনায় বেশি সুমিষ্ট এবং পানের পরে কোন বমির ভাব আসে না। এতে পেট ভর্তির অনুভব আসে এবং পেটের কোন গোলমাল হয় না। পরীক্ষাটি থেকে এই উপসংহারে পৌঁছানো গিয়েছে যে শারীরিক পরিশ্রমের পরে ডাবের জল দেহের আর্দ্রতা বৃদ্ধির একটি ভাল উৎস।

শরীরের স্বাভাবিক বিপাক ক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট ফ্রি র‍্যাডিক্যালগুলি অস্থিতিশীল অণু। অধিক পরিমাণে এই সক্রিয় অক্সিজেন দেহের কোষগুলির ক্ষতি করতে পারে এবং অক্সিডেটিভ চাপ তৈরি করতে পারে। অত্যধিক পরিমাণে অক্সিডেটিভ চাপ তৈরি হলে দেহ নানা রকমের অসুখের শিকার হতে পারে, যেমন কর্কট রোগ, এ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস এবং মধুমেহ। তাহলে আপনি কি করে ফ্রি র‍্যাডিকেলের পরিমাণ কম রাখতে পারবেন?

দেহে ফ্রি র‍্যাডিকেল তৈরি হওয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলি। গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে যে ডাবের জলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে, ফলে অক্সিডেটিভ চাপ সৃষ্টি হতে বাধা দেয়। ডাবের জলে রয়েছে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, ক্যাফেইক অ্যাসিড এবং বিভিন্ন ধরণের ফেনোলিক যৌগ, যেগুলি ফ্রি র‍্যাডিকেলগুলিকে দেহ থেকে বার করে দেয়। একটি প্রিক্লিনিক্যাল পরীক্ষা দেখাচ্ছে যে ডাবের জলে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলি কার্যকর ভাবে দেহের রক্তচাপ, রক্তের গ্লুকোজ, ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা এবং ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা হ্রাস করে এবং দেহের স্বাভাবিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্রিয়া উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি করে।

(আর পড়ুন: অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য)

বৃক্কের পাথরগুলি কঠিন স্ফটিক এবং এদের জমা হওয়ার উপসর্গ হল তলপেটে তীব্র ব্যথা এবং প্রস্রাবে জ্বালা হওয়া। মূত্রাধার প্রণালীর সাথে এই পাথরগুলির ঘর্ষণে ফলে প্রস্রাবের সাথে রক্তক্ষরণ (হেমাটুরিয়) হতে পারে। প্রাণীদের নিয়ে একটি পরীক্ষায় জানা গিয়েছে যে সাত সপ্তাহ ধরে প্রাণীদের ডাবের জল পান করালে বৃক্কের পাথর কম হয় এবং স্ফটিকের সংখ্যাও হ্রাস পায়। এই গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে যেন বৃক্কের পাথরের প্রাকৃতিক চিকিৎসার জন্য ডাবের জল ব্যবহার করা যেতে পারে।

ত্বক আমাদের দেহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং এটিই হল সাধারণ সংক্রমণ, দূষণ এবং ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মির বিরুদ্ধে দেহের প্রথম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে বিভিন্ন ধরণের অবস্থা যেমন চর্ম রোগ, গায়ে ছোপ পড়া এবং ক্ষতিকারক ফ্রি র‍্যাডিকেলের থেকে ত্বককে রক্ষা করা জরুরী। একটি সুস্থ, স্বাস্থ্যকর উজ্জ্বল ত্বক পাওয়ার জন্য আমরা কি না করতে পারি। গবেষণা দেখিয়েছে যে ডাবের জল গায়ে ছোপ পড়া হ্রাস করতে পারে। ডাবের জলে থাকে ভিটামিন সি, যা একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।

পরীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে যে গায়ে ছোপ পড়া (পিগমেন্টেশান), ইউভি রশ্মির প্রভাবে চামড়ায় বয়স বৃদ্ধির ছাপ পড়া, প্রদাহ এবং সংক্রমণ প্রতিহত করতে পারে ডাবের জলের ভিটামিন সি।

অন্য আরেকটি পরীক্ষা দেখিয়েছে যে ডাবের জলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাস গুণ থাকাতে চামড়ার সাধারণ সংক্রমণ জনিত রোগ প্রতিহত হয়।

ডাবের জল চুলের পক্ষে খুবই উপকারী। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে ডাবের জল চুল পড়া এবং চুলের অকাল পক্কতা নিবারণ করে। গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে যে চুলে ডাবের জল প্রয়োগ করলে চুলের আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায় এবং ঔজ্জ্বল্য বাড়ে। এ'ছাড়া চুলে থাকে ক্যাপ্রাইলিক অ্যাসিড যার অ্যান্টি-ফাঙ্গাল গুণ আছে, তাই চুলের খুসকি প্রতিরোধ করতে পারে।

রক্তে অধিক পরিমাণে চর্বি থাকলে সেই অবস্থাকে হাইপারলিপিডেমিয়া বলা হয়। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা বা ঝুঁকি বেড়ে যায়, যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক, ইত্যাদি। প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ যেমন ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম এবং উপাদান যেমন এ্যাস্করবিক অ্যাসিড উপস্থিত থাকলে চর্বির উপরে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

একটি প্রিক্লিনিক্যাল পরীক্ষা দেখিয়েছে যে ডাবের জল মোট কোলেস্টেরল (টিসি) এবং খারাপ কোলেস্টেরলের (এলডিএল) মাত্রা হ্রাস করে এবং ভাল কোলেস্টেরলের (এইচডিএল) মাত্রা বৃদ্ধি করে।

(আরও পড়ুন: উচ্চ কোলেস্টেরলের চিকিৎসা)

দীর্ঘ সময় ধরে হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে অত্যধিক পরিমাণে গ্লুকোজ থাকা) হলে তাকে মধুমেহ রোগ বলা হয়। এর কারণ হল দেহ গ্লুকোজের পূর্ণ বিপাক করতে ব্যর্থ হয়। অনেকগুলি পরীক্ষার ফলাফল থেকে মনে করা হচ্ছে যে ডাবের জলের হাইপোগ্লাইসেমিক (রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কম করা) ধর্ম আছে। প্রাণীদের নিয়ে করা একটি গবেষণা দেখাচ্ছে যে ডাবের জল রক্তের গ্লুকোজ এবং গ্লাইকোসাইলেটেড হেমোগ্লোবিনের মাত্রা হ্রাস করতে পারে। গ্লাইকোসাইলেটেড হেমোগ্লোবিনের হল একজনের রক্তের গ্লুকোজের গড় মান।

(আরও পড়ুন: মধুমেহর চিকিৎসা)

দাঁতের ক্যারিস, অর্থাৎ দন্তক্ষয়ের প্রাথমিক কারণ হল এস. মিউটানস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। গবেষণা দেখাচ্ছে যে ডাবের জলের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া ধর্ম আছে। এর কারণ হল ডাবের জলে লাউরিক অ্যাসিডের উপস্থিতি।

ডাবের জলের এই অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল গুণ মুখের কয়েকটি সমস্যা, যেমন মুখের ঘা, প্রতিরোধ করে। ডাবের জলে উপস্থিত সুক্রোজ মোনোলাউরেট এবং গ্লাইকোলিপিড উপাদানগুলি এস. মিউটানস'এর বিকাশে বাধা দিয়ে দাঁতের ক্যারিস প্রতিরোধ করে।