অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা কি?
অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা একটি খাদ্যাভ্যাসজনিত রোগ উপরন্তু একটি মানসিক রোগ যাতে একজনের ওজন কমানোর ইচ্ছা অস্বাভাবিকভাবে শরীরের ওজন কমানোতে পরিণত হয়। এটা দেখা গেছে যে রোগীর সুস্থ শরীর সম্বন্ধে বিকৃত ধারনা থাকে এবং ওজন কমানোর জন্যে কঠোর পরিশ্রম করে। যদিও অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা সাধারণত কৈশোরে শুরু হয়, এটি অপেক্ষাকৃত ছোট শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও দেখা যায়।
অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসার প্রধান লক্ষন ও উপসর্গগুলি কি কি?
-
খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কিত উপসর্গগুলি:
- রোগা হওয়া সত্বেও খাবার তালিকায় হরেকরকম বাধানিষেধ
- অযথা বাহানা দিয়ে খাবার না খাওয়ার অভ্যাস
- খুব অল্প খাওয়া সত্বেও খাবার ও ক্যালরি নিয়ে বাতিক
- প্রায়ই খাবার খাওয়ার ভান করা বা খাবার খাওয়া নিয়ে মিথ্যা কথা বলা
-
চেহারা ও শরীরের আকারগত উপসর্গগুলি:
- হঠাৎই, প্রচুর ওজন কমে যাওয়া
- নিজের ওজন বেশী ভাবা নিয়ে ভ্রম
- নিজেকে কেমন দেখাচ্ছে তা নিয়ে বাতিকগ্রস্তের মতো সচেতনতা
- সবসময়ে নিজের শরীর ও চেহারা নিয়ে খুঁতখুতে হওয়া
- নিজেকে পরিশুদ্ধ করার উপসর্গগুলি:
- অতিরিক্ত-ব্যায়াম
- খাবার পরে জোর করে বমি করা
- ওজন কমানোর জন্যে ওষুধ (যেমন, জোলাপ) খাওয়া
-
যেসব সতর্কতামূলক চিহ্ন ও উপসর্গগুলির দিকে নজর রাখতে হবে: বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, ভঙ্গুর হাড় ও নখ, খুব বেশী চুল পড়া, ঘন ঘন অজ্ঞান হওয়া।
অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসার প্রধান কারনগুলি কি কি?
অ্যানোরেক্সিয়া কোনো একটি কারনে হয় না, এটির পিছনে বহুমুখী সমস্যা থাকে:
-
সাধারণ কারনগুলি:
- পারফেক্সনিজম বা উৎকর্ষবাদীতা, বাতিকগ্রস্ত ও প্রতিযোগিতামূলক পারিবারিক রীতি
- পারিবারিক দ্বন্দ্ব
- শিক্ষাগত চাপ
- পরিবারের সদস্যদের অনিয়মিত খাদ্যাভাস
-
যে কারনগুলি এই সমস্যাকে ত্বরান্বিত করে:
- গালিগালাজপূর্ণ শৈশব
- বয়ঃসন্ধি বা কিশোর অবস্থার সূত্রপাত
অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা কিভাবে নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
-
রোগ নির্ণয়ের মাপকাঠি:
- একটা নির্দিষ্ট বয়সের অনুপাতে যে ওজন ও উচ্চতা থাকা উচিৎ সেই অনুপাতে সঠিক বা তার আশেপাশে ওজন না রাখা
- ওজন কম হওয়া সত্বেও, খুব বেশী ওজন বেড়ে যেতে পারে ভেবে অকারণ ভয়
- ওজন ও আকারের বিচারে নিজের চেহারা সম্বন্ধে অবাস্তব ধারনা
- মেয়েদের মধ্যে যাদের মাসিক রজঃস্রাব শুরু হতে চলেছে, কম করে তিন মাস রজঃস্রাব না হওয়া
-
চিকিৎসা:
- প্রাথমিক স্তরেই ব্যবস্থা নেবার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করে পুনরায় খাওয়ানো শুরু করতে হবে যাতে ওজন বাড়ানো যায়। এটি কিশোর ও তরুণদের জন্য প্রযোজ্য।
- দ্বিতীয় উপায় হিসেবে খাদ্যতালিকা বিষয়ক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও তার সাথে সাইকোথেরাপি করানো। এক্ষেত্রে, পরিবারের সদস্যদের রোগীকে পুনরায় খাওয়ানোর দায়িত্ব নিতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় ফল খুব ধীরে পাওয়া যায়, কিন্তু ওজন বাড়ার হার বজায় থাকে।
- অ্যানোরেক্সিয়ার জন্য সাইকোথেরাপি পদ্ধতিটি দীর্ঘকালীন ও জটিল হয় এবং জ্ঞানীয় ও আচরনগত থেরাপি এর অন্তর্ভুক্ত থাকে যাতে জ্ঞানীয় পরিকাঠামোতে পরিবর্তনের উপর জোর দেওয়া হয় ও তার সাথে সহযোগিতামূলক থেরাপি যোগ করা হয়। একটি সুস্থ থেরাপিগত সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য সহযোগিতামূলক থেরাপি প্রয়োজন হয়, এভাবেই অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসার কারণগুলি চিহ্নিত করা ও তার সমাধান করা সম্ভব হবে।