ব্লাডার ইনফেকসন বা মূত্রথলির সংক্রমণ কাকে বলে?
ব্লাডার ইনফেকসন (সিস্টাইটিস) হল খুব সাধারণ ধরণের মূত্রনালী অঙ্গের সংক্রমণ যা শিশু ও বড়দের সমান ভাবে আক্রান্ত করে। মূত্রনালী অঙ্গের অন্যান্য যে অংশগুলিতে সংক্রমণ ঘটে সেগুলির মধ্যে আছে কিডনি (পাইলোনেফ্রাইটিস) এবং মূত্রনালী (ইউরিথ্রাইটিস)। ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ব্লাডার ইনফেকসনে বেশি ভোগে। ব্লাডার বা মূত্রথলির সংক্রমণে মূত্রত্যাগে জ্বালাভাব এবং বার বার মূত্রত্যাগ খুব সাধারণ উপসর্গ। যদি চিকিৎসা না করানো হয়, তবে মূত্রথলি থেকে সংক্রমণ কিডনিতে এবং/অথবা মূত্রনালীতে ছড়িয়ে পড়ে। ডাক্তার সংক্রমণের থেকে বাঁচার জন্য এবং অস্বস্তিকর উপসর্গগুলি রক্ষা পেতে অ্যান্টিবায়োটিক দেন।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
মূত্রথলির সংক্রমণের সাথে জড়িত উপসর্গগুলি প্রায়ই পীড়নের সৃষ্টি করে। যার মধ্যে আছে:
- মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা এবং/অথবা জ্বালাভাব। (আরো পড়ুন: মূত্রত্যাগের সময় ব্যথার কারণ)
- হঠাৎ হঠাৎ মূত্রত্যাগের তাড়না, মূত্রত্যাগের পরেই আবার মূত্রত্যাগের ইচ্ছা, যা দিনে অথবা রাতে সমানভাবে অনুভুত হয়
- মূত্র চেপে রাখতে অপারগতা বা অক্ষম
- মূত্রের রঙ পরিবর্তন - ধোঁয়াটে, গাঢ়বর্ণের, প্রভৃতি।
- মূত্রে রক্ত আসা, যদি সংক্রমণ খুব বেশি হয়
- খুব দুর্গন্ধযুক্ত মূত্র
- তলপেটে ব্যথা সাথে সাধারণ দূর্বলতা
- জ্বর-এর সাথে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, যখন সংক্রমণ খুব বেশি হয়
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মূত্রনালীর সংক্রমণ বা মূত্রথলির সংক্রমণ এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংঘটিত হয়, যাকে বলে
ই. কোলাই.
যেসব কারণগুলি সংক্রমণ ঘটার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, সেগুলি হল
- মূত্রথলির সাথে দীর্ঘদিন ক্যাথেটার লাগানো থাকলে
- যৌন সংসর্গ, মেনোপজ, গর্ভনিরোধকের প্রতিবন্ধক ব্যবস্থা (মধ্যচ্ছদা), গর্ভধারণ প্রভৃতি সাধারণভাবে মহিলাদের মধ্যে মূত্রথলির সংক্রমণ ঘটায়। মহিলারা মূত্রথলির সংক্রমণের শিকার হন কারণ তাদের মূত্রনালীর দৈর্ঘ্য কম হয় এবং মূত্রদ্বারটি মলদ্বারের কাছে অবস্থান করে
- ডায়াবেটিস
- প্রোস্টেট গ্রন্থির বেড়ে যাওয়া
- বেশি বয়স ও দীর্ঘকালীন অসুস্থতার সাথে দীর্ঘদিন হাঁটতে চলতে না পারা
- মূত্রনালীর সার্জারি ও অন্যান্য প্রক্রিয়া
এর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা কিভাবে করা হয়?
ডাক্তার মূত্রথলির সংক্রমণের রোগ নির্ণয় করেন উপসর্গগুলির ও শারীরিক পরীক্ষাগুলির উপর নির্ভর করে। যেসব পরীক্ষা দ্বারা এই রোগ নির্ণয় হয়, সেগুলি হল:
মূত্রের বিশ্লেষণ
- সংক্রমণের সময়ে মূত্রে বেড়ে যাওয়া অ্যাসিডের মাত্রা দেখার জন্য ডিপ-স্টিক টেস্ট করা হয়। মূত্রে সংক্রমণ হয়েছে কিনা দেখার জন্য এটি হল খুব সাশ্রয়কর পরীক্ষা।
- নাইট্রাইটস এবং লিউকোসাইট এস্টারেস পরীক্ষা সংক্রমণের সময়ে মূত্রে শ্বেত রক্ত কণিকা আছে কিনা সনাক্ত করে।
- সংক্রমণ-সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি দেখার জন্য পরীক্ষাগারে কৃত্রিম উপায়ে মূত্রের নমুনা থেকে, ইউরিন কালচার করা হয়।
প্রতিবিম্ব দ্বারা গবেষণা
বারবার হওয়া ও উচ্চ-পর্যায়ের সংক্রমণে বিভিন্ন পরীক্ষা করে দেখা হয়, বা যে সংক্রমণে সাধারণ চিকিৎসা দ্বারা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না সেক্ষেত্রে কিছু পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষাগুলির মধ্যে আছে:
- সিস্টোস্কপি
- আলট্রাসাউন্ড
- এক্স-রে প্রতিবিম্বকরণ
- ইন্ট্রাভেনাস পায়েলোগ্রাম (আইভিপি)
- কম্পিউটারাইজড টোমোগ্রাফি স্ক্যান (সি টি স্ক্যান)
- ম্যাগনেটিক রিজনেন্স ইমেজিং (এম আর আই)
- ইউরোডাইনামিক পরীক্ষা
মূত্রথলির সংক্রমণের চিকিৎসার লক্ষ্য হল সংক্রমণকে সমূলে শেষ করা ও কষ্টকর উপসর্গগুলি থেকে রোগীকে মুক্তি দেওয়া।
অ্যান্টিবায়োটিকস
- সাধারণত 5 দিনের অ্যান্টিবায়োটিকের ক্রমের পরে বড়োদের ক্ষেত্রে এবং 2 থেকে 3 দিনের ক্রমের পরে ছোটোদের ক্ষেত্রে মূত্রথলির সংক্রমণ সেরে যায়।
- লম্বা অ্যান্টিবায়োটিকের ক্রম নিলে বারবার সংক্রমণের ফিরে আসাতে বিলম্ব ঘটানো যায়।
- খুব বেশি সংক্রমণে, শিরায় প্রয়োগ করার অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।
অন্যান্য ওষুধ
-
ইউরিন অ্যালকালাইজার হল মূত্রে অ্যাসিডিটি কমানোর এবং জ্বালাভাব কমানোর ওষুধ।
নিজ-সুরক্ষা
- অনেক পরিমানে জল জাতীয় পানীয় গ্রহণ করা, যাতে বারবার মূত্রত্যাগের মাধ্যমে সংক্রমণ পরিষ্কৃত হয়ে যায়।
- মূত্রনালীর সংক্রমণের সময়ে এনএসএআইডি (নন-স্টেরোইডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ) যেমন ইবুপ্রফেন বা অ্যাস্পিরিন খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে, কারণ এতে জটিলতা বাড়তে পারে।
- ক্রানবেরির রস মূত্রথলির সংক্রমণ ফিরে আসা আটকাতে সাহায্য করে।
- গরম জলের সেঁক পেটে ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।