কোলেসিস্টাইসিস (পিত্তথলির প্রদাহ) কি?
কোলেসিস্টাইসিস হলো গল ব্লাডার বা পিত্তথলির প্রদাহ। গলব্লাডারের সিস্টিক ডাক্ট, কমন বাইল ডাক্টের মতো কোনও টিউবে অথবা গলব্লাডারে পাথর হলে এই সমস্যা হয়। এটা পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের বেশি হতে দেখা যায়। 40 বছর বয়সের মহিলাদের ক্ষেত্রে গল-স্টোনের ঘটনা পুরুষদের চেয়ে অনেক বেশি। দক্ষিন ভারতের তুলনায় উত্তর ভারতে এই রোগের প্রভাব বেশি দেখা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বছরে প্রায় দশলক্ষ মানুষ গলস্টোন অসুখে আক্রান্ত হন এবং প্রাপ্তবয়ষ্কদের মধ্যে এই হার 10-15%।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
কিছু লোকের কোনো উপসর্গ দেখা যায় না শুধু পেটের অংশে নরমভাব ছাড়া। এই রোগের প্রধান উপসর্গগুলি হল:
- হঠাৎই বা প্রচণ্ড ব্যথা পেটের ডানদিকে উপরিভাগে
- বমি ভাব
- বমি
- হাল্কা জ্বর
- চোখের হলুদ ভাব
- চায়ের রংয়ের মতো প্রস্রাব
- হাল্কা রংয়ের মল
এর মূল কারন কি?
এর কারনগুলিকে ক্যালকুলাস ও অ্যাক্যালকুলাস কোলেসিস্টাইসিসে ভাগ করা হয়।
- ক্যালকুলাস কোলেসিস্টাইসিস:
- খুবই সাধারন ও মাঝারি প্রকৃতির কোলেসিস্টাইসিস।
- 95 % কেসে দেখা যায়।
- প্রধান সিস্টিক নালীতে ব্লকের জন্য।
- হয়তো গল স্টোন দিয়ে ব্লক বা বিলিয়ারি স্লাজ দিয়ে।
- অ্যাক্যালকুলাস কোলেসিস্টাইসিস:
- বিরল ও কোলেসিস্টাইসিসের তীব্র রূপ।
- কোনো দীর্ঘ অসুস্থতার কারনে বা সংক্রমন বা ঘা যেটা গলব্লাডারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তার ফলস্বরূপ এই রোগ হতে পারে।
- কোনো অনিচ্ছাকৃত ক্ষতের কারণেও হতে পারে যেমন অপারেশনের সময়, চোট, পোড়া, রক্তে বিষ, সেপসিস এবং অপৌষ্টিকতার ক্ষেত্রে।
কিভাবে এটি নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
শারীরিক পরীক্ষার সময় রোগীরা স্বাভাবিক দেখাতে পারে। কখনো গলব্লাডারে নরম ভাব অনুভব হতে পারে, তা রোগের তীব্রতা ইঙ্গিত করে। পরীক্ষাতে মার্ফিস সাইন পজিটিভ দেখা যেতে পারে।
- রক্তপরীক্ষা: কোনো সংক্রমণ বা জটিলতা দেখার জন্য।
- রেডিওলোজিক্যাল পরীক্ষা:
- পেটের নিম্নভাগের আল্ট্রাসাউন্ড
- কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি (সিটি) স্ক্যান
- ম্যাগনেটিক রিজোনেন্স কোল্যাঞ্জিওপ্যানক্রিয়েটোগ্রাফি (এমআরসিপি)
- এন্ডোস্কোপিক রেট্রোগ্রেড কোল্যাঞ্জিওপ্যানক্রিয়েটোগ্রাফি (ইআরসিপি)
চিকিৎসা পদ্ধতি:
- প্রারম্ভিক থেরাপি: দ্রুত গলব্লাডার পরিষ্কার করা এবং, হাইড্রেশন মাত্রা ঠিক রাখার জন্য ইনট্রাভেনাস ফ্লুড।
- মেডিক্যাল থেরাপি: এটা সাধারনত দেওয়া হয় সিম্প্টোম্যাটিক গলস্টোনের জন্য। এই এজেন্ট বাইল স্টোন গলিয়ে দেয় ও আগে কোনো বাধা দিতে আটকায়।
- সার্জিকাল থেরাপি: ল্যাপ্রোস্কোপিক কোলেসিস্টেক্টমি স্টোনসমেত গলব্লাডার বার করতে প্রয়োগ করা হয় যাতে পুনরায় স্টোন না হয়।
নন-সার্জিকাল প্রক্রিয়ার অন্তর্গত:
- এক্স্ট্রাকর্পোরিয়াল শক ওয়েভ লিথোট্রিপসি: স্টোন ভাঙতে উচ্চ শক্তির সাউন্ড ওয়েভ ব্যাবহার করা হয়।
- পারকিউটেনিয়াস থেরাপি
- এন্ডোস্কোপিক গলব্লাডার স্টেনটিং
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন:
- উপসর্গ কম করতে নিম্নলিখিত খাবার এড়িয়ে চলুন।
- কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার
- পরিশোধিত চিনি
- বীনস
- পেঁয়াজ বা বেল পেপার
- ক্যাফেইন
- ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাবেন যেমন বাদাম, ফল, এবং সব্জী এবং পুষ্টিকর ফ্যাট যেমন মাছ এবং অলিভ অয়েল।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন কোলেসিস্টাইসিস (পিত্তথলির প্রদাহ) এর সম্ভাবনা কম করে দেয়।