কলেরা কি?
কলেরা একটা ব্যাকটিরিয়াজনিত সংক্রমণ, যেটা প্রধানত দূষিত খাবার বা জল খেলে হয়। এটি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত গুরুতর উদ্বেগের ব্যাপার এবং সামাজিক অনুন্নয়নের ইঙ্গিত বাহক। কলেরা সেইসব অঞ্চলে বেশি হয়, যেখানে পরিষ্কার জল সরবরাহ ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার সুবিধা নেই। এটা সব বয়সের লোককেই প্রভাবিত করে। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রতি বছর 1.3 মিলিয়ন থেকে 4.0 মিলিয়ন কলেরার রোগের ঘটনা ঘটে।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
দূষিত খাবার বা জল খাওয়ার 12 ঘণ্টা থেকে 15 দিনের মধ্যে কলেরার উপসর্গ ফুটে ওঠে। সংক্রামিত ব্যক্তির মলের মধ্য দিয়ে 1-10 দিন পর্যন্ত ব্যাকটিরিয়া বের হয়, যার থেকে অন্যান্য ব্যক্তিদের সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা থাকে। এর প্রধান উপসর্গগুলি হলো:
- জলের মতো পাতলা পায়খানা
- বমি বমি ভাব এবং বমি
- দেহে জলের অভাব
- ইলেক্ট্রোলাইট দেহে খনিজ পদার্থের ভারসাম্যহীনতা
- পেশীতে ব্যথা
- শক
যদি এর চিকিৎসা না করা হয়, তবে শরীরে জলের প্রচণ্ড অভাব দেখা দেয় এবং এতে মৃত্যুও হতে পারে।
শিশুদের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি দেখা যায়:
- চেতনায় পরিবর্তন
- মৃগীর তড়কা
- কোমা
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
কলেরা পাচকতন্ত্রের সংক্রমণ, যেটা ভিব্রিও কলেরি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়। এর ফলে প্রচণ্ড পাতলা পায়খানা ও শরীরে জলের অভাব দেখা দেয়। ক্ষুদ্রান্তে ব্যাকটেরিয়াম দ্বারা উৎপন্ন টক্সিন থেকে ক্ষতিকর প্রভাব হয়। টক্সিনের কারণে সোডিয়াম এবং ক্লোরাইডের স্বাভাবিক প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে অত্যাধিক মাত্রায় জল বেরিয়ে যায় এবং প্রয়োজনীয় লবণ এবং তরল পদার্থের দ্রুত ঘাটতি হতে থাকে।
কলেরা হওয়ার ঝুঁকি যে সমস্ত কারণে থাকে:
- খারাপ স্বাস্থ্যব্যবস্থা
- পেটের অ্যাসিডের মাত্রা কমে যাওয়া ও সম্পূর্ণ ঘাটতি
- সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে বসবাস
- রক্ত প্রকার O
- কাঁচা ও আধসেদ্ধ খাবার
কিভাবে এটা নির্ণয় করা হয় ও এর চিকিৎসা কি?
আপনার চিকিৎসক হয়তো আপনাকে রোগের প্রবলতার উপর নির্ভর করে নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি করতে বলবেন:
- রক্তপরীক্ষা: শ্বেত রক্তকণিকার মাত্রা কতটা বেড়েছে, এবং ইলেক্ট্রোলাইট মাত্রা দেখার জন্য।
- রক্ত গ্লুকোজ: গ্লুকোজের মাত্রা প্রচণ্ড পরিমানে নেমে যেতে পারে, এতে অসুস্থতা দীর্ঘায়িত হতে পারে।
- পায়খানা পরীক্ষা: পায়খানার নমুনায় ভিব্রিও কলেরি সনাক্ত করা।
- কিডনি কার্য পরীক্ষা: কিডনি সঠিক কাজ করছে কি না।
চিকিৎসা পদ্ধতি নিচে বলা হলো:
- ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন: হারানো নিউট্রিয়েন্টস ও জল পুনরায় ফিরিয়ে আনা এবং তরল-খনিজের ভারসাম্য পুনরায় স্থাপন করা।
- ইনট্রাভেনাস ফ্লুইডস: তরল এবং ইলেক্ট্রোলাইটের ঘাটতি সংশোধন করা।
- অ্যান্টিবায়োটিকস্: প্রচণ্ড বাড়াবাড়িতে অসুস্থতা কম করতে ও পায়খানার পরিমাণ কমাতে।
- জিঙ্ক সাপ্লিমেন্টস: উপসর্গের উন্নতির জন্য।
- টীকাকরণ: অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভ্রমনকারীকে, স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার কর্মী, রোগপ্রতিরোধ শক্তি কম এমন ব্যক্তিদের দেওয়া হয়, যাদের পেটে অ্যাসিড ক্ষরণ কম হয়।
নিজে যত্ন নেবার পরামর্শ:
- খাবার আগে হাত ধোওয়া।
- যখনই আপনি বাইরে যাবেন, হাত ধোয়ার জন্য স্যানিটাইজার ব্যবহার করবেন।
- কেবল মাত্র ফোটানো জল, গরম এবং ভালো করে রান্না করা খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
- কাঁচা খাবার, বিশেষ করে আধকাঁচা মাংস ও মাছ খাবেন না।
- দুগ্ধজাত পণ্য ভালো করে দেখে নিন, কারন তা দূষিত হতে পারে।
দ্রুত ও সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মৃত্যুর হার হ্রাস করা সম্ভব।