খুশকি কি?
খুশকি হলো ত্বকের এমন একটি অবস্থা, যা স্ক্যাল্প বা খুলির চামড়ার ওপর সাদা থেকে ধূসর রঙের শুষ্ক চামড়ার আঁশের মতো পরত তৈরি হওয়ার কারণ। এটি স্ক্যাল্পের খুবই সাধারণ অবস্থা, যা মহিলা এবং পুরুষ উভয়কেই সমানভাবে প্রভাবিত করে। এটি এমন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি, যা কোনও ব্যক্তির সামাজিক জীবনেও প্রভাব ফেলতে পারে। পুরুষদের খুশকি হওয়ার প্রবণতা মহিলাদের থেকে বেশি। সারাবিশ্বের প্রায় 50 শতাংশ জনসংখ্যার খুশকি রয়েছে, এমনটাই অনুমান করা হয়। আর যা জানা যায়, তাতে ভারতে এই প্রাদুর্ভাবের সংখ্যা 195,785,036।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
সাধারণ লক্ষণ হলো:
- স্ক্যাল্পের ওপরে সাদা, তেলচিটে মরা চামড়ার গুঁড়ো।
- আঁশের মতো বা চুলকানিযুক্ত স্ক্যাল্প।
- প্রদাহের অনুপস্থিতি অথনা মৃদু প্রদাহ।
- ভ্রূ, চোখের পাতা এবং কানের পিছন দিকে মরা চামড়ার গুঁড়ো ঝরে পড়া।
খুশকি স্ক্যাল্পে হয়, তাই, প্রচণ্ড খুশকি হলে, মরা চামড়ার গুঁড়ো সাধারণত কাঁধে পড়ে। সিবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হওয়া সিবামের উৎপাদন বৃদ্ধি অথবা জমার কারণে স্ক্যাল্প তেলতেলে হয়ে ওঠে।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
খুশকির প্রধান কারণ হলো:
- প্রদাহ অথবা অস্বস্তিকর তেলচিটে চামড়া।
- শ্যাম্পুর অপর্যাপ্ত ব্যবহার।
- ম্যালাসেজিয়া সহ ছত্রাকের সংক্রমণ।
- শুষ্ক ত্বক।
- চুলে লাগানোর দ্রব্য থেকে অ্যালার্জি।
ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- বয়স: কৈশোরকাল থেকে অথবা বয়সসন্ধি থেকে মাঝ বয়স।
- পুং লিঙ্গ: পুরুষ হরমোনের প্রভাব।
- অত্যাধিক সিবাম: ম্যালাসেজিয়া ছত্রাক সংক্রমণ স্ক্যাল্পের তেল শুষে নেয় এবং আরও খুশকির উদ্রেক করে।
- নির্দিষ্ট রোগ: পারকিন্সনের রোগ (স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাধি) এবং এইচআইভি সংক্রমণ।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
যেহেতু খুশকি আঁশ এবং গুঁড়োর দেখতে মতো হয়, তাই রোগ নির্ণয় এবং খুশকিজনতি অবস্থাকে ত্বক জনিত অবস্থার থেকে আলাদা করা মুশকিল হয়ে উঠতে পারে। সেবোরিক ডার্মাটিস, সোরিয়াসিস, অ্যাটপিক ডার্মাটাইটিস, টিনিয়া ক্যাপাইটিস, ইত্যাদি ক্ষেত্রেও একই রকম উপসর্গ দেখা দেয়।। রোগ নির্ণয় মূলত রোগীর চিকিৎসাজনিত ইতিহাস এবং শারীরিক চিকিৎসার ভিত্তিতে করা হয়। মাঝেমধ্যে ত্বকের বায়োপসি করার পরামর্শও দেওয়া হতে পারে।
সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা হলো অ্যান্টি-ড্যান্ড্রফ শ্যাম্পুর ব্যবহার এবং স্ক্যাল্পের চিকিৎসা করানো। দুর্ভাগ্যবশত, এই চিকিৎসা সব রোগীর ক্ষেত্রে কাজে দেয় না। যদি খুশকি অ্যান্টি-ড্যান্ড্রফ শ্যাম্পু এবং স্ক্যাল্পের চিকিৎসা করে না ঠিক হয়, তাহলে অন্তর্নিহিত চিকিৎসাজনিত অবস্থার ভিত্তিতে, যথাযথ অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল অথবা অ্যান্টি-ফাংগাল চিকিৎসা দেওয়া হতে পারে। খুশকির চিকিৎসার অংশ হিসেবে লিপোসোমস, নিওসোমস এবং লিপিড ন্যানোপার্টিকেলের মতো অভিনব ড্রাগ ডেলিভারি পদ্ধতি ক্রমান্বয়ে ব্যবহার করা হয়।
নিজ যত্ন নেওয়া:
- স্ক্যাল্পের যত্ন নেওয়া আবশ্যিক।
- ভালোভাবে চুলের যত্ন নিতে হবে, যেমন চুলে ভেষজ তেল দেওয়া এবং নিয়মিত চুল ধোয়া যাতে খুশকি বাড়ার সম্ভাবনা এড়ানো যায়।
- বারাবার শ্যাম্পু করা এড়িয়ে চলা, এতে চুলের বাড়তি তেল উঠে যায়, যা স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য দরকার।
- রুক্ষভাবে চুল না আঁচড়ানো।
- যতদিন না খুশকি ঠিক হচ্ছে, হেয়ার স্টাইলিং ট্রিটমেন্ট এড়ানো।
খুশকির কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য, চুলের যথাযথ যত্ন নেওয়ার অভ্যাস অবলম্বন করুন আর তাতেও যদি খুশকি না কমে, তাহলে ট্রাইকোলজিস্টের পরামর্শ নিন সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য।