ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি (ডায়াবেটিসজনিত কিডনি রোগ) কি?
ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি হল সবচেয়ে সাধারণ রোগ যা মূত্রাশয়সম্বন্ধীয় ব্যর্থতার জন্য দায়ী। কিডনির প্রাথমিক কাজ হল রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করা। দীর্ঘমেয়াদে ডায়াবেটিস কিডনির ফিল্টারিং সিস্টেমের মধ্যে পরিবর্তনের কারণ হতে পারে, যা টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যার ফলে কিডনির রোগ(নেফ্রোপ্যাথি) হয়।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
যতক্ষণ না অধিকাংশ কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট হচ্ছে, ততক্ষন কিডনির রোগগুলি লক্ষণগুলি প্রকাশ করে না। এছাড়াও, শেষের দিকে প্রদর্শিত লক্ষণগুলিও অ-নির্দিষ্ট হয়। তরলের বৃদ্ধি হওয়া হল নেফ্রোপ্যাথির প্রথম চিহ্ন। অন্যান্য উপসর্গগুলি হল:
- ঘুমের হ্রাস
- পেট খারাপ
- খাওয়ার ইচ্ছা না থাকা
- দুর্বলতা
- রক্ত চাপে ভারসাম্যহীনতা
- মূত্রের মধ্যে প্রোটিন
- বিভ্রান্তি বা মনোযোগ দিতে অসুবিধা
- একটানা চুলকানি
- প্রস্রাব বৃদ্ধি
- বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া
ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথির প্রধান কারণগুলি কি কি?
কিডনি অসংখ্য সূক্ষ্ম নল ধারণ করে যা রক্ত থেকে বর্জ্য পণ্য ফিল্টার করে। এই সূক্ষ্ম নলগুলির ক্ষুদ্র ছিদ্র (ফিল্টার) রয়েছে, যার মাধ্যমে, বর্জ্য পণ্য প্রস্রাবের আকারে নির্গত হয়। রক্তের কোষ এবং প্রোটিন এই গর্তের চেয়ে বড় এবং তাই প্রস্রাবের মধ্যে দিয়ে পাস করতে পারে না।
রক্ত শর্করার স্তর বাড়ার ফলে এই ছিদ্রগুলির ক্ষতি করে এবং তাদের বড় করে তোলে। ফলস্বরূপ, রক্তও এর মাধ্যমে প্রবাহিত হতে পারে। এই কারণে কিডনির ফিল্টার গ্লোমেরুলীর ক্ষতি হয়। সময়ের সাথে সাথে, এই ফিল্টারগুলি ফুটো হতে শুরু করে এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণে প্রোটিনগুলি মূত্র (মাইক্রোঅ্যালবুমিনুরিয়া) দিয়ে বহিষ্কৃত করতে শুরু করে। যদি চিকিৎসা না করা হয়ে থাকে তবে এই অবস্থাটি মাইক্রোঅ্যালবুমিনের ক্ষতি বৃদ্ধি করে যা পরবর্তী পর্যায়ে এন্ড-স্টেজ-রেনাল-ডিসিস (ইএসআরডি) নিয়ে আসে।
পরে, কিডনির এই চাপ ফিল্টারিং ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার কারণ হয়ে যায়। তারপর বর্জ্য পণ্য রক্তে জমা হয়, এবং অবশেষে, কিডনি নষ্ট হয়।
ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথিকে কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
আপনার ডাক্তার একটি শারীরিক পরীক্ষা করবেন এবং আপনার চিকিৎসা ইতিহাস নেবেন। তারপরে আপনাকে কয়েকটি পরীক্ষা করার পরামর্শ দিতে পারেন:
- কিডনির অবস্থা এবং এর কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে রক্ত পরীক্ষা
- প্রস্রাবে প্রোটিন কন্টেন্ট পরীক্ষা করতে প্রস্রাব পরীক্ষা। প্রস্রাবে উচ্চ স্তরের প্রোটিন থাকলে তাকে মাইক্রোঅ্যালবুমিন বলা হয় যা নেফ্রোপ্যাথির প্রাথমিক পর্যায় নির্দেশ করে
- কিডনিতে রক্ত প্রবাহ পরীক্ষা করার জন্য এক্স-রে, এমআরআই এবং সিটি স্ক্যান
- ফিল্টারিং ক্ষমতা পরীক্ষা করতে রেনাল ফাংশন পরীক্ষা
- কিডনির বায়োপসি
নেফ্রোপ্যাথির প্রাথমিক পর্যায়ে ওষুধ ব্যবহার করা হয়:
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে
- রক্তে উচ্চ সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে
- রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কম করতে
- প্রস্রাবে প্রোটিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে
পরের পর্যায়ে, কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট এবং ডায়ালিসিস করার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।