কানের রোগ কি?
কানের মধ্যে ব্যথা ও অস্বস্তি থেকে শুরু করে শ্রবণশক্তি পুরোপুরি হারানোর মতো যে কোনও রকমের উপসর্গ হলো কানের রোগ। আপনার কান তিনটি অংশে বিভক্ত - বাহিরের অংশ, মধ্যস্থল এবং অভ্যন্তরীণ এবং এই অংশগুলির প্রধান কাজ হলো শোনা এবং শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখা। কিছু সাধারণ কানের রোগ হলো ওটাইটিস (কানে প্রদাহ), টিনিটাস (কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ), কানে খোল জমা হওয়া বা কান বন্ধ, মেনিয়ার্স ডিজিজ (ভার্টিগো এবং টিনিটাস),অটোমাইকোসিস (কানে ছত্রাক সংক্রমণ), ব্যারোট্রমা (বায়ুর চাপ পরিবর্তনের কারণে কানে আঘাত), ভেস্টিবুলার নিউরাইটিস (ভাইরাল সংক্রমণের কারণে ভেস্টিবুলার স্নায়ুতে প্রদাহ), প্রেসবাইকিউসিস (বয়সের কারণে শ্রবণ শক্তি চলে যাওয়া) এবং কোলেস্টিয়াটোমা (কানের মধ্যে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি)।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি ?
রোগের অবস্থা এবং কানের যে অংশ আক্রান্ত হয়েছে, সেই অনুযায়ী কানের রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গে রকমফের হয়। সাধারণ উপসর্গগুলি নিম্নলিখিত :
- কানে ব্যথা, যা কখনও কখনও মাথাতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।।
- লালচেভাব এবং ফোলা।
- কান থেকে পুঁজ পড়া।
- মাথা ঘোরা এবং ভারসাম্য হারানো।
- কানের মধ্যে ঝিঁঝিঁ বা ভোঁ ভোঁ শব্দ হওয়া।
- শ্রবণ শক্তি চলে যাওয়া।
- বমনেচ্ছা এবং বমি।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি ?
একাধিক কানের রোগের প্রধান কারণগুলি নিম্নলিখিত:
- ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বা ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণ।
- হঠাৎ বায়ু এবং জলের চাপের পরিবর্তনের কারণে কানে আঘাত।
- কানের ভিতরে ক্যালসিয়াম ক্রিস্টালের নড়াচড়ার ফলে শরীরের ভারসাম্য হারানো।
- একনাগাড়ে জোরালো শব্দের কারণে শ্রবণ শক্তি হারানো, বয়স বা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধির কারণে কানের পর্দা দুর্বল হয়ে যাওয়া।
- নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের কারণে কানের মধ্যে ঝিঁঝিঁ শব্দ হতে পারে।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
কানের রোগের বেশিরভাগ লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি সাধারণ এবং আপনার অবস্থার সঠিক নির্ণয়ের জন্য, আপনার প্রয়োজন একজন ইএনটি (কান,নাক এবং গলার স্বর) বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া। নিম্নলিখিত রোগ-নির্ণায়ক পরীক্ষাগুলি করা হয়:
- নিউমেটিক অটোস্কোপ ব্যবহার করে কানের পরীক্ষা।
- কানের স্রাবের নমুনা পরীক্ষা।
- অ্যাকাস্টিক রিফ্লেক্টোমেট্রি - নির্দিষ্ট শব্দ কম্পাঙ্ক ব্যবহার করে কানের মধ্যস্থলের নিঃসরণ সণাক্তকরণ।
- টিমপ্যানোমেট্রি - বিভিন্ন রকম বায়ুর চাপ ব্যবহার করে কানের মধ্যস্থল এবং কানের পর্দার অবস্থা পরিমাপ করা।
- টিউনিং ফর্ক টেস্ট।
- অডিওমেট্রিক পরীক্ষা - শ্রবণ শক্তি পরিমাপের পরীক্ষা।
- কোষের বায়োপসি।
একবার আপনার কানের রোগ সঠিক এবং সময়মতো নির্ণয় করা হলে, আপনার ইএনটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি করবেন আপানার জন্য। সাধারণ ওষুধ প্রয়োগ থেকে অস্ত্রোপচার চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে পড়ে। সহজলভ্য সাধারণ চিকিৎসা বিকল্পগুলি নিম্নরূপ:
- কানের খোল পরিষ্কার
চিমটা ব্যবহার করে কানের ময়লা পরিষ্কার। - ওষুধপ্রয়োগ
সংক্রমণ নিরাময়ে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল যুক্ত কানের ড্রপ বা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেতে দেওয়া হয়। ব্যথা নিয়ন্ত্রণে অ্যানালজেসিক্স। বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া সামলাতে অ্যান্টি-ইমেটিক্স। - কানে শোনার যন্ত্র
শ্রবণ শক্তি হ্রাস নিয়ন্ত্রণে যন্ত্রের ব্যবহার। - অস্ত্রোপচার
ক্যান্সারের বৃদ্ধি নষ্ট করতে অস্ত্রোপচার। - ককলিয়ার ইমপ্লান্ট
গুরুত্বর শ্রবণ শক্তি হ্রাসের চিকিৎসায় ককলিয়ার ইমপ্লান্টের ব্যবহার। - ব্যায়াম
স্থানপরিবর্তনের ব্যায়াম ভার্টিগোর চিকিৎসায়।
চিউয়িংগাম চিবানো বা হাইতোলার মতো সাধারণ পদ্ধতিগুলি ব্যারোট্রমা থেকে মুক্তি দেয়।
স্নান বা সাঁতারের পর কান শুকনো করার মতো কিছু সাধারণ প্রতিরোধক ব্যবস্থা নিলে কানে সংক্রমণ অথবা ব্যথা থেকে নিজেকে রক্ষা করা যেতে পারে। উচ্চ শব্দ কমানো বা প্রতিরক্ষামূলক প্লাগের ব্যবহার শ্রবণ শক্তি হ্রাস থেকে বাঁচাতে কার্যকরী। অনুগ্রহ করে মনে রাখবেন, ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহারের পরিবর্তে, আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন এবং যে কোনওরকম চিন্তাজনক উপসর্গের বিষয়ে পরামর্শ নিন।