হরমোনের অসামঞ্জস্যতা (হরমোনের ভারসাম্যহীনতা) কি?
মানুষের শরীরে হরমোনের স্বাভাবিক মাত্রার গড়বড়কে হরমোনের অসামঞ্জস্যতা (হরমোনের ভারসাম্যহীনতা) বলে। হরমোন হলো একটা রাসায়নিক পদার্থ যেটা আমাদের শরীরের এন্ডোক্রিন গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। এটি রক্তের প্রবাহের মধ্যে দিয়ে বয়ে যায় এবং বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গে বার্তা পৌঁছে দেয়, এই ভাবে এটি এদের ক্রিয়ার সমন্বয় করে এবং ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। হরমোনের ওঠা-নামা অনেকসময় প্রাকৃতিক ভাবে হয় যেমন গর্ভাবস্থার কিছু সময় বা বয়সের সাথে। হরমোনের অসামঞ্জস্যতা অনেকসময় লিঙ্গ এবং প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। হরমোনের পরিবর্তনের সময়মত চিকিৎসা না করানোয় শারীরিক ও মানসিক অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কি কি?
হরমোনের অসামঞ্জস্যতা (হরমোনের ভারসাম্যহীনতা) প্রধান লক্ষন ও উপসর্গগুলো নিম্নলিখিত কারণের উপর নির্ভর করে:
- ক্লান্তি।
- ঘেমে যাওয়া।
- দুশ্চিন্তা বোধ করা।
- খিটখিটে মেজাজ।
- বন্ধ্যাত্ব।
- স্তনের বোঁটা থেকে নিঃসরণ।
- ওজন বাড়া।
- বয়স্কদের ব্রণ।
- ওজন কমে যাওয়া।
- অনিয়মিত মাসিক।
- স্মৃতি শক্তি কমে যাওয়া।
- দূর্বল পেশী ও হাড়।
- চুল পড়ে যাওয়া।
- ইন্সমনিয়া (ঘুমের ব্যঘাত)।
- গরম ঝলক।
- হতাশা।
- হাত ও পায়ের পাতা ঠান্ডা থাকা।
- মেজাজের পরিবর্তন।
- নিয়মিত পায়খানা না হওয়া।
হরমোনের অসামঞ্জস্যতা (হরমোনের ভারসাম্যহীনতা)র সাথে হৃদস্পন্দনে, রক্তচাপ এবং রক্তে সুগারের মাত্রাতে পরিবর্তন দেখা যায়।
এর প্রধান কারণগুলো কি কি?
হরমোনের অসামঞ্জস্যতার প্রধান কারণগুলো হলো:
- মানসিক চাপ।
- দীর্ঘ ক্লান্তির উপসর্গ।
- জিনগত পরিবর্তন।
- কিছু ওষুধ, যেমন স্টেরয়েডস।
- মেনোপজ।
- গর্ভাবস্থা।
- জন্ম নিরোধক ওষুধ।
- অটোইমিউন অবস্থা।
- উল্টোপাল্টা খাবার।
- থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা - হাইপার বা হাইপো থাইরোডিজম।
- বয়স বৃদ্ধি।
- কিছু অ্যালার্জি।
- মেডিক্যাল অবস্থা যেমন পলিসিস্টিক ওভারিয়ান অসুখ, প্রোল্যাক্টিনোমা, গ্রন্থিগুলোর। কম বা বেশী ক্রিয়াকলাপ (পিটুইটারী, থাইরয়েড, ওভারিজ, টেস্টেস, অ্যাড্রেনালস, হাইপোথ্যালামাস, এবং প্যারাথাইরয়েড)।
এটি কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
বিশদ ইতিহাস ও শারীরিক পরীক্ষা ছাড়াও, হরমোনের মাত্রায় ভারসাম্যহীনতা সাধারণত স্যালাইভা এবং সিরাম পরীক্ষার দ্বারাই নির্ণয় করা হয়। যৌন হরমোনের যেমন টেস্টোস্টেরন এবং এস্ট্রোজেনের মাত্রা নির্ণয় করার জন্য পরীক্ষা করতে বলা হয়। ইমেজিং স্টাডিস, যেমন আল্ট্রাসাউন্ড বা এম আর আই, করার প্রয়োজন হতে পারে।
হরমোনের অসামঞ্জস্যতা (হরমোনের ভারসাম্যহীনতা) নিয়ন্ত্রণ করা হয় আসল কারণের চিকিত্সা করে এবং নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে চিকিত্সা করা হয়।
- ওষুধ মলম ও প্যাচের মাধ্যমে সিন্থেটিক হরমোন দেওয়া হয়।
- হরমোন প্রতিস্থাপন চিকিৎসা।
- হরমোনের অসামঞ্জস্যতা (হরমোনের ভারসাম্যহীনতা)র উপসর্গ কম করতে সক্রিয় জীবনযাপন ও স্বাস্থ্যকর খাবারের পরামর্শ দেওয়া হয়।
- যেসব ব্যক্তিদের দুশ্চিন্তা ও হতাশা আছে তাদের দুশ্চিন্তা ও হতাশা কমানোর ওষুধ দেওয়া হয়।
- অতিরিক্ত হরমোনের নিঃসরনের ক্ষেত্রে হরমোন অ্যান্টাগোনিস্টস দেওয়া হয়।