ওভারিয়ান ক্যান্সার বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার কি?
মহিলাদের ডিম্বাণু (ওভাম) সৃষ্টিকারক অঙ্গ (ওভারি)-এর টিস্যুর ক্যান্সারকে ওভারিয়ান ক্যান্সার বলে। ওভারিয়ান টিউমার বিনাইন (ক্যান্সারবিহীন) অথবা ম্যালিগন্যান্ট (ক্যান্সারযুক্ত) হতে পারে। গাইনোলজিকাল বা স্ত্রীরোগসম্বন্ধীয় ক্যান্সারের মধ্যে এটি সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং সাধারণত বয়স্ক মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার খুব ধীর গতিতে বিকশিত হয় বলে প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা খুব মুশকিল। কিছু সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গগুলি হলো:
- অনিয়মিত ঋতুস্রাব অথবা ঋতু প্রবাহ ও চক্রে পরিবর্তন।
- যৌনমিলনের সময় ব্যথা।
- বুকজ্বালা।
- পিঠ ও পেলভিক বা শ্রোণীচক্রে ব্যথা।
- শ্রোণী অঞ্চল ফুলে ওঠা।
- ক্ষুধামান্দ্য।
- ওজন হ্রাস।
- বমিভাব।
- কোষ্ঠকাঠিণ্য।
- পেটফাঁপা।
- শ্বাসকষ্ট।
- ক্লান্তি।
- ঘনঘন প্রস্রাব।
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস) ওভারিয়ান ক্যান্সারের লক্ষণ ও উপসর্গগুলি অনুকরণ করে।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
বেশিরভাগ ওভারিয়ান ক্যান্সারের প্রকৃত কারণ পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় না। সাধারণ কিছু বিপজ্জনক কারণ হলো:
- জিনগত পরিবর্তন বংশগতভাবে দেহে আসা (উদাহরণস্বরূপ, বিআরসিএ1/2, এইচএনপিসিসি)।
- সন্তান হয়নি এমন মহিলা।
- মানসিক চাপ।
- বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া।
- ডিম্বাশয় অথবা স্তন ক্যান্সার থাকার পারিবারিক ইতিহাস।
- অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলির মধ্যে রয়েছে ধূমপান, পশ্চিমী খাদ্যাভাস, স্থুলকায় রোগ, ডিওড্রেন্ট ব্যবহার, ট্যালকম পাউডার ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ, দারিদ্রতা এবং শৈশবস্থা থেকে খারাপ খাদ্যাভাস।
এটি কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
ওভারিয়ান ক্যান্সারের নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকেরা বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করেন, যেমন:
- তলপেট এবং পেলভিকের আল্ট্রাসাউন্ড
ডিম্বাশয় সংক্রান্ত কোনওরকম অসুখের ক্ষেত্রে আলট্রাসাউন্ডকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেওয়া হয় প্রথম টেস্ট হিসেবে। - সিটি স্ক্যান
বড়ো আকারের টিউমার সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হলেও, এতে কিন্তু ছোটো আকারের টিউমার ধরা পড়ে না। - এমআরআই স্ক্যান
এটি মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডে ক্যান্সার ছড়িয়েছে পড়া সনাক্ত করতে সাহায্য করে। - রক্তপরীক্ষা
সিএ-125 পরীক্ষা করা হয় সিএ-125 এর মাত্রা জানার জন্য, যা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারযুক্ত কোষগুলি উৎপন্ন করে।
ক্যান্সার নির্ণয় হলে, এর চিকিৎসা নিম্নলখিত উপায়ে করা হয়:
- কেমোথেরাপি।
- অপারেশন।
- রেডিয়েশন থেরাপি।
এছাড়াও, আকুপাংচার, ভেষজ ওষুধ, ধ্যান এবং যোগব্যায়ামের মতো কিছু পরিপূরক চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে, যা প্রচলিত চিকিৎসার সঙ্গেই ব্যবহৃত হয়।