ডুমুর বা আঞ্জীর হল এর রন্ধনসম্পর্কিত এবং নিরাময়ের গুণাবলীর জন্য সারা বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক বিখ্যাত “বহিরাগত” ফলগুলির অন্যতম। এই মিষ্টি এবং মুচমুচে ফলটা শুধুমাত্র এর স্বাদের জন্য বিখ্যাত তাই নয়, অধিকন্তু এর স্বাস্থ্যকর উপযোগিতাগুলির জন্য হাজার হাজার বছর ধরে কর্ষিত এবং ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বস্তুত:, মানুষের দ্বারা চাষ করা সর্বাধিক প্রাচীন ফলগুলির অন্যতম হচ্ছে আঞ্জীর। বাইবেলের মত পবিত্র গ্রন্থেও এই ফলের উল্লেখ রয়েছে। আপনি জেনে আশ্চর্য হবেন যে এই ফলের সবচেয়ে পুরানো নমুনাগুলি নব্যপ্রস্তর যুগ (নিওলিথিক এরা) থেকে লভ্য।
গ্রীকরা (গ্রীস দেশের লোক) একে এত বেশি মূল্যবান বলে ভাবতেন যে তাঁরা এই ফলটাকে রপ্তানি করা অনুমোদন করতেন না এবং যেকোন প্রতিযোগিতার বিজয়ীকে ডুমুর এক সম্মান হিসাবে প্রদান করতেন। রোমান পুরাণ অনুযায়ী শুধু যে রেমাস এবং রোমিউলাস, রোমের প্রতিষ্ঠাতাদের একটা ডুমুর গাছের নীচে একটা স্ত্রী-নেকড়ে স্তন্যপান করিয়েছিল তাই নয়, লোকে এই ফলের উর্বরতা বর্ধক গুণগুলির কথাও উল্লেখ করে। এই বিস্ময়কর ফল সম্বন্ধে জানতে আরও পড়তে থাকুন।
আঞ্জীর সম্বন্ধে কিছু মৌলিক তথ্য:
- উদ্ভিদবিজ্ঞানসম্মত নাম: ফিকাসক্যারিকা
- জাতি: মোরেসিয়া/মালবেরি ফ্যামিলি
- প্রচলিত নামগুলি: ডুমুর, সাধারণ ডুমুর, আঞ্জীর/আঞ্জির
- সংস্কৃত নাম: আঞ্জির, আঞ্জীরা
- ব্যবহৃত অংশসমূহ: ফল, পাতা, ছাল, এবং শিকড়
- দেশীয় অঞ্চল এবং ভৌগোলিক বিস্তৃতি: ডুমুর গাছ এশিয়ার ভূমধ্যসাগরীয় এবং পশ্চিমা অংশগুলির দেশজ বলে মনে করা হয় যদিও ভারত, চীন, এবং আফ্রিকার মত বিশ্বের বেশির ভাগ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং আধা-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলগুলিতে জন্মায়। তুরস্ক (টার্কি) হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম ডুমুর উৎপাদক দেশ।
- কর্মশক্তি: শীতল
আঞ্জীর গাছ:
ডুমুর হল একটা পর্ণমোচী গাছ (বছরে একবার পাতা ঝরায়) এবং বিশাল বর্গ ফিকাস-এর অন্যতম জাত যার মধ্যে রয়েছে মালবেরি (গাঢ় বেগুনী রঙের জামের মত ফলের গাছ), বট (বরগদ) এবং “পিপুল” (পিপল)।
আপনি কি জানতেন?
ডুমুরগুলো বাস্তবে আসল ফলের বদলে ওলটানো ফুল, সুতরাং, কোনও ডুমুর গাছে লোকে আদপেই ফুল দেখতে পায়না। ডুমুর গাছগুলি জন্মানো খুব সহজ এবং একবার রোপণ করলে সেগুলো প্রচণ্ড দ্রুত চারপাশের গাছপালাকে চেপে দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। বস্তুতঃ, “বুনো লতাপাতার বৈশ্বিক সংকলন গ্রন্থ”-তে এটাকে বিনাশকারী আগাছা বা বুনো লতাপাতার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সাধারণত:, একটা ফিকাস গাছ (ডুমুর গাছ) 20-30 ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বৃদ্ধি পেতে পারে এবং প্রায় সমানভাবে বিস্তৃত হতে পারে। পাতাগুলি চেরা এবং ফিকাস-এর বিভিন্ন বৈচিত্র্যের মধ্যে পার্থক্য করার মাপকাঠির মধ্যে অন্যতম (এক শ্রেণীর গাছ যা এর মধ্যে সামিল কিন্তু ডুমুর এবং মালবেরি অবধি সীমাবদ্ধ নয়)।