হিন্দুদের কাছে গরু একটি পবিত্র প্রাণী। প্রাচীন ভারতে চাষাবাদ এবং গরু ও ছাগল পালন ছিল উপার্জনের এইটি প্রধান উৎস। সেই আদি যুগ থেকেই গরুকে পূজা করার প্রথা চালু আছে। মূলত এর দুধের কারণেই গরুর অর্থনৈতিক মূল্য ছিল খুবই উঁচু। গোমূত্রের ব্যবহারও চালু ছিল।
আপনি জিজ্ঞাসা করতেই পারেন যে কেন গোমূত্র?
আপনি জেনে অবাক হবেন যে গোমূত্র এবং গোবর, এই দুইটিরই চিকিৎসার উপকরণ হিসাবে মূল্যবান! তথ্যটি এই যে পঞ্চগব্য হল গরুর দুধ, মূত্র, ঘি, দই এবং গোবরের মিশ্রণ। এই পঞ্চগব্যের ঔষধি ব্যবহার আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বলা আছে। চিকিৎসা বিষয়ক সংস্কৃত গ্রন্থ, সুশ্রুত সংহিতা অনুযায়ী গরু থেকে প্রাপ্ত সব বস্তুগুলির মধ্যে গোমূত্রকে সব চেয়ে কার্যকর উপশমকারী বলে মনে করা হয়।
আয়ুর্বেদ গোমূত্রকে অমৃত বা জীবনদায়ী জল বলে মনে করা হয়। নাইজেরিয়ায় এবং মায়ানমারের লোক-চিকিৎসকরাও তাদের ওষুধে গোমূত্রকে অন্তর্গত করেছেন।
কেউ কেউ মনে করেন যে সূর্যোদয়ের আগে সংগ্রহ করা কুমারী গরুর মূত্র পান করাই শ্রেষ্ঠ। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে গাভিন (গর্ভবতী) গরুর মূত্রই সব চেয়ে পুষ্টিকর কারণ এতে বিশেষ হরমোন থাকে। বিশ্বাস করা হয় যে গোমূত্রের ব্যবহারে প্রায় 80 রকমের অনারোগ্য রোগের এবং অন্যান্য সমস্যার নিরাময় করা যায়।
ঔষধি গুণ ছাড়াও গোমূত্রের আরও অনেক ব্যবহার আছে। জৈব চাষে ব্যাপকভাবে গোমূত্র সার হিসাবে ব্যবহার করা হয়। নিম পাতার আর গোমূত্র এক সাথে মিশিয়ে চমৎকার বায়ো-পেস্টিসাইড হয়। গোমূত্র প্রচলিত পরিষ্কার করার দ্রবণের অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। তাই বিশেষ করে মেঝে পরিষ্কার করার জন্যও গোমূত্র ব্যবহার করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে গোমূত্র দিয়ে মেঝে পরিষ্কার করলে স্থানটি জীবাণু-মুক্ত হয়ে একটি পবিত্র স্থান হয়ে যায়। কসমেটিকস, বিশেষত শ্যাম্পু এবং সাবান প্রস্তুতে গোমূত্র ব্যবহার করা হয়।